রেশন দুর্নীতির অভিযোগে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমানে বাংলার বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে গ্রেফতার করেছে ইডি। স্বাধীনতা সংগ্রামী শক্তিপদ মল্লিকের ছোট ছেলে গ্রেফতারির খবরে তোলপাড় পড়ে গিয়েছে পূর্ব-বর্ধমানের মন্তেশ্বরের পূর্ব-খাঁপুর গ্রামে। কেউ কেউ বলছেন বালুর গ্রেফতারিতে মন্তেশ্বরের বিরাট ক্ষতি হয়ে গেল। মন্তেশ্বরের উন্নয়নটাই থমকে যাবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, জ্যোতিপ্রিয়কে আরও আগেই গ্রেফতারের দরকার ছিল।
মন্তেশ্বরের বামুনপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের পূর্ব-খাঁপুর গ্রামে রয়েছে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের পৈত্রিক বাড়ি। এই গ্রামেরই ভূমিপুত্র স্বাধীনতা সংগ্রামী শক্তিপদ মল্লিক। তাঁর ছয় পুত্র ও চার কন্যার মধ্যে জ্যোতিপ্রিয় সবার ছোট। দাদা দেবপ্রিয় মল্লিক প্রখ্যাত চিকিৎসক। পৈত্রিক ভিটেতে এখনও রয়েছে মাটির দেওয়াল আর টিনের চালার সাবেকি বাড়ি। অদূরে পারিবারিক জমিতে জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নিজস্ব একটি বাড়ি রয়েছে। উঁচু পাঁচিল ঘেরা বিশাল জায়গার উপর থাকা বাড়িটিও তাক লাগানো। ওই বাড়ির মূল ফটকের দেওয়ালে থাকা ফলকে লেখা রয়েছে স্বর্গীয় পিতা শক্তিপদ মল্লিক ও স্বর্গীয় মাতা নবনলিনী মল্লিকের স্মৃতির উদ্দেশ্যে বাড়িটির নামকরণ 'নবশক্তি ভবন'।
শুক্রবার ওই বাড়িতে পৌঁছে অনেক ডাকাডাকি করেও নিস্তব্ধতা ছাড়া আর কোনও জনপ্রাণীর শাড়াশব্দ মেলেনি। বাড়ির সব দরজাই ছিল বন্ধ। তবে আশপাশের বাসিন্দাদের মুখে মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছিল তাঁদের গ্রামের ছেলে তথা রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ইডি-র হাতে গ্রেফতারের কথা। ইডি আধিকারিকরা এই বাড়িতেও তল্লাশি চালাতে আসতে পারে এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে মন্ত্রীর বাড়ির দিকে নজর রয়েছে গ্রামবাসীদের। তাঁদের কথাতেই জানা গেল অন্যান বছরের মত এ বছরও দুর্গাপুজোর নবমীতে মন্তেশ্বরের বাড়িতে আসার কথা ছিল বালুর। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়ে তিনি আসেননি। এরপর এদিন সকালে টেলিভিশনের খবরে তাঁরা রেশন দুর্নীতি মামলায় বালুর গ্রেফতারের হওয়ার কথা জানতে পারেন।
গ্রামের বাসিন্দা বিকাশ মণ্ডলের কথায়, 'জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক আমাদের গ্রামের উন্নতি ঘটিয়েছেন। রাস্তাঘাট, আইটিআই কলেজ, জলের প্রকল্প সহ আরও অনেক কাজ তাঁর উদ্যোগেই হয়েছে। মন্ত্রীর পরিবার অত্যন্তর বনেদি পরিবার। মন্ত্রীর বাবা ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। তাঁদের সম্পত্তি আগে থেকেই ছিল। মন্ত্রীর সম্পত্তি এখন দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে বলে যা বলা হচ্ছে তা ঠিক নয়।' উল্টে গ্রামবাসীদের একাংশের দাবি, দান ধ্যান করায় মন্ত্রীর পরিবারের সম্পত্তি বরং কমেছে।
আরও পড়ুন- ইডি হেফাজতে জ্যোতিপ্রিয়, আদালতের নির্দেশ শুনেই জ্ঞান হারালেন মন্ত্রী!
মন্তেশ্বরে মন্ত্রীর যে বাড়িটি রয়েছে সেখানে শুদুমাত্র দুর্গাপুজোর সময়েই তিনি আসতেন। বাকি সারা বছর ওই বাড়িতে কেউ থাকে না। মন্ত্রী ও তাঁর পরিবার কলকাতাতেই থাকেন। গরিবের রেশনের খাদ্য সামগ্রী নিয়ে গ্রামের ছেলে বালু দুর্নীতি করেননি বলেই বিকাশ মণ্ডল, জিতেন দাসরা বিশ্বাস করেন।
আরও পড়ুন- জেলে প্রায়ই কেঁদে ভাসাচ্ছেন পার্থ! মুখে শুধু একটাই কথা
তবে জ্যোতিপ্রিয় গ্রেফতারিতে উৎফুল্ল মন্তেশ্বরের বিজেপি ও সিপিএম নেতারা। বিজেপি নেতা ঝুলন হাজরা বলেন, 'পূর্ব-খাঁপুর গ্রামে রয়েছে মন্ত্রীর বিলাসবহুল প্রসাদপ্রোম একটি বাড়ি, এই বাড়িটি সিসিটিভি ক্যামেরায় মোড়া। মন্ত্রীর বাড়ির লাগায়া জায়গায় রয়েছে একটি রেশন দোকান। এই রেশন দোকানটি মন্ত্রীর এক ভাইয়ের নামে রয়েছে। মন্ত্রী তাঁর নিজের প্রভাব খাটিয়ে নিজের পরিবারের সদস্যদের নামেও রেশন দোকান সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দিতে পিছু-পা হননি। সেই সঙ্গে মন্ত্রী ও তাঁর পরিবারের প্রচুর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তিও গ্রামে রয়েছে। বাকিবুর রহমান গ্রেফতার হওয়ার পরেই বোঝা গিয়েছিল এবার জ্যোতিপ্রিয়র পালা। সেটাই হয়েছে। তবে আরও আগে এটা হওয়ার দরকার ছিল।'
সিপিএম নেতা ওসমান গনি সরকার দাবি করেন, 'মন্তেশ্বরের বামুনপাড়া এলাকায় যে আইআইটি কলেজ রয়েছে সেটি মন্ত্রীর ভাইয়ের। ওই কলেজটি বেশ কয়েক বিঘা সম্পত্তির উপর তৈরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় এজেন্সি ওই আইটিআই কলেছে হানা দিতে পারে এমন আশঙ্কায় ওই কলেজের সাইনবোর্ডটি রঙ দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে। এর থেকেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে ওই আইটিআই কলেজ নিয়েও নিশ্চই কোনও ঘোটালা আছে।' ওসমান গনির আরও অভিযোগ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রীয় মল্লিকের পরিবারের অতীতে যত সম্পত্তি ছিল তা বহু গুন বৃদ্ধি পেয়েছে বাড়ির ছোট ছেলে মন্ত্রী হওয়ার পর। বর্তমানে ৭০-৮০ বিঘা সম্পত্তি মল্লিক পরিবারের কাছে রয়েছে বলে সিপিএম নেতা ওসমান গনি জানিয়েছেন।