ব্যাঙ্ক ডাকাতির পর পেরিয়ে গিয়েছে ২৪ ঘন্টার বেশি সময়। তবু দুস্কৃতীদের বিষয়ে এখনও অথৈ জলে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ। শুক্রবার বর্ধমানের 'বৈদ্যনাথ ক্যাটরার' বাজারের দ্বিতলে থাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখায় হানা দিয়ে ৩৩ লক্ষ টাকা লুট করে পালায় সশস্ত্র ডাকাত দল। ঘটনার পর দ্রুত 'সিট' গঠন করে পুলিশ তদন্তে নামে। দুস্কৃতীদের নাগাল পেতে শুরু হয় জেলার বিভিন্ন সড়কপথে নাকা চেকিং। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে বেমালুম গায়েব হয়ে যায় দুস্কৃতীরা। বর্ধমান শহরের এই জনবহুল এলাকাতে একাধিকবার দিনে-দুপুরে বড়সড় ডাকাতির ঘটনা চিন্তা বাড়িয়েছে পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের।
জেলা পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন শনিবার জানিয়েছেন, 'তদন্ত চলছে । ডাকাতির ঘটনায় পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক বা গ্রেফতার করতে পারেনি।' যদিও বর্ধমান থানার এক আধিকারিকের কথায়, 'ব্যাঙ্কে লুট চালিয়ে দুস্কৃতীরা পায়ে হেঁটে বিসিরোড হয়ে কার্জন গেটের দিকে যায়। তারপর তারা কোন দিকে গিয়েছে বা কোন গাড়িতে করে গিয়েছে তার কোন তথ্য এখনও পুলিশের কাছে নেই। তবে অনুমান করা হচ্ছে দুস্কৃতীরা বাইকে চেপে বর্ধমান থেকে পালিয়েছে। বিভিন্ন জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে দুস্কৃতীদের চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা চলছে।' সিআইডিও ব্যাঙ্ক ডাকাতির ঘটনার তদন্ত শুরু করতে চলেছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে।
শুক্রবার দিনে দুপুরে বর্ধমানের প্রাণকেন্দ্রে কার্জন গেটের কাছে ব্যাঙ্কে ঢুকে ৩৩ লক্ষ টাকা লুট করে নিয়ে পালায় সশস্ত্র ডাকাত দল। এর আগে ২০২০ সালের ১৭ জুলাই এই ব্যাংকের ঢিল ছোছাড় দূরত্বে বিসিরোড এলাকাতেই স্বর্ণ ঋণদান সংস্থায় ডাকাতির ঘটনা ঘটায় হিন্দিভাষী দুস্কৃতীরা। তারও আগে ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে বৈদ্যনাথ ক্যাটরাতেই আর একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক শাখা থেকে ৩৫ লক্ষ টাকা লুট হয়। শুক্রবারের ব্যাংক আর কয়েক বছর আগের ডাকাতি ব্যাংক পাশাপাশি বলা চলে। অতি সম্প্রতি এসটিএফের অভিযানে হেরোইনের আন্তারাজ্য কারবারীর ডেরার হদিশ মেলে বর্ধমানের বিবেকানন্দ কলেজ মোড় সংলগ্ন গ্লাসফ্যাক্টরি এলাকা থেকে। অপরাধের ঘটনা ঘটানোর জন্য কেন বারে বারে দুস্কৃতিরা বর্ধমানকেই বেছে নিচ্ছে সেই প্রশ্নই এখন ভাবিয়ে তুলছে। পুলিশ কর্তারাও বিষয়টি নিয়ে কাঁটা ছেঁড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। দুস্কৃতীদের সঙ্গে ভিন রাজ্যের যোগ রয়েছে কিনা সেই বিষয়টিও পুলিশ খতিয়ে দেখছে।
বর্ধমানের 'বৈদ্যনাথ ক্যাটারার' বাজারের দোতলায় থাকা ব্যাঙ্কে শুক্রবার পৌনে ১০ আগেই ঢুকে পড়ে ৫-৬ জনের দুস্কৃতি দল। হিন্দিভাষী দুস্কৃতিদের মুখ ছিল ঢাকা। হাতে ছিল আগ্নেআস্ত্র। তাঁদের সঙ্গে ছিল স্কুল ব্যাগ। ব্যাঙ্কে যে কজন গ্রাহক ছিল তাঁদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে দুস্কৃতীরা আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে বসিয়ে রাখে। এরপর ব্যাঙ্কের অন্য আধিকারিকদের মারধোর করে ব্যাঙ্ক থেকে ৩৩ লক্ষ টাকা লুট করে নিয়ে দুস্কৃতীরা ব্যাঙ্ক থেকে চম্পট দেয়। ব্যাঙ্কের মূল গেটের দরজার বাইরে থেকে তালাচাবি দিয়ে দুস্কৃতীরা কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পরে ব্যাংকের সাইরেন বাজার পর এই দুস্কৃতী হানার বিষয়টি জানাজানি হয়। খবর পেয়ে জেলার পুলিশ সুপার কামনাশীষ সেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কল্যান সিংহরায়সহ জেলা পুলিশের অন্য কর্তারা ঘটনাস্থলে পৌছান। দ্রুত 'সিট' গঠন করে তদন্ত শুরু হলেও পুলিশ দুস্কৃতীদের টিকি এখনও পর্যন্ত ছুঁতে পারেনি।
বর্ধমান শহরের যে জনবহুল এলাকায় বড় তিন-তিনটে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে তার আশেপাশেই জেলার পুলিশ-প্রশাসনের কর্তা-ব্যাক্তিদের অফিস। ৩০০ মিটারের মধ্যে বর্ধমান থানা, ২০০ মিটারের মধ্যে জেলা পুলিশসুপার ও জেলাশাসকের অফিস। এছাড়া জেলাআদালত, জেলাপরিষদসহ সমস্ত পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের অফিসও কাছেই। এমন এলাকায় দিনে-দুপুরে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে দুস্কৃতীদের লুটপাঠের ঘটনায় স্বভাতই কপালে চিন্তার ভাঁজ পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের। এমার্জেন্সি সাইরেন বেজেছে ডাকাতদল চম্পট দেওয়ার পর। প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী প্রতিটি ক্ষেত্রেই হিন্দিভাষায় কথা বলেছে ডাকাতদল। তাঁরা প্রত্যেকেই কী হিন্দিভাষী না তদন্তের মোড় ঘুরিয়ে দিতে ভাষার ব্যবহার করা হয়েছে তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।