Advertisment

নির্দেশ দেন স্বয়ং চৈতন্যদেব, পুরীর রথের পট্টডোরী যেত বাংলার এই গ্রাম থেকেই

পুরীর জগন্নাথদেবের রথযাত্রার সঙ্গে আজও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে বাংলার এই গ্রামের নাম।

IE Bangla Web Desk এবং Nilotpal Sil
New Update
from kulin village of east burdwan to go to pattadori of puri rath

বাংলার এই গ্রামের সঙ্গে গভীর যোগাযোগ পুরীর রথযাত্রা উৎসবের।

পুরীর জগন্নাথদেবের রথ যাত্রার সঙ্গে আজও অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে রয়েছে পূর্ব বর্ধমানের কুলীন গ্রামের নাম। স্বয়ং শ্রী চৈতন্যদেব এসেছিলেন এখানে। মহাপ্রভুর স্মৃতি বিজড়িত কুলীনগ্রামের রথযাত্রা উৎসব প্রায় ৫০০ বছরেরও বেশি পুরনো। চৈতন্যদেবের আদেশ মেনে পুরীর জগন্নাথের রথের জন্য এই কুলীনগ্রাম থেকেই পাঠানো হত রেশমের পট্টডোরী। রথের অনেক আগেই সেই পট্টডোরী পুরীতে পৌঁছে দেওয়া হত। এই প্রথা এখন থমকে থাকলেও মাহাত্ম্য গুনে কুলীন গ্রামের রথ আর পুরীর রথ একই বলেই আজও বিশ্বাস করেন ভক্তরা।

Advertisment

কুলীনগ্রাম হল পূর্ব বর্ধমান জেলার জামালপুর ব্লকের আবুজহাটী ২ পঞ্চায়েত এলাকার এক প্রাচীন জনপদ । ভারতের বিখ্যাত পুরীর রথের সঙ্গে বহুকাল আগে থেকে ভক্তি ভাবের সম্পর্ক গড়ে ওঠে এই কুলীনগ্রামের রথের। কথিত আছে, কুলীন গ্রামের বসু পরিবারই কুলীনগ্রামে রথ যাত্রা উৎসবের সূচনা করেছিলেন। পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে কুলীন গ্রামে জন্মগ্রহন করেছিলেন বাংলা সাহিত্যের অমূল্য গ্রন্থ 'শ্রীকৃষ্ণবিজয়' কাব্যের রচয়িতা মালাধর বসু। এই মালাধর বসুর পৌত্র লক্ষ্মীকান্ত বসু সত্যরাজ খান নামে ভূষিত হয়েছিলেন। তিনি শ্রীচৈতন্য দেবের অন্যতম ভক্ত ও পারিষদ ছিলেন। পুরীর জগন্নাথ দেবের রথের জন্য কুলীনগ্রাম থেকে পট্টডোরী পাঠানোর আদেশ সত্যরাজ খানকে করেছিলেন স্বয়ং শ্রীচৈতন্যদেব। ভক্ত সত্যরাজ খান সেই আদেশ মাথা পেতে পালন করেছিলেন।

publive-image
কুলীন গ্রামের রথ।

কুলীনগ্রাম বাসীর কথা অনুযায়ী, আগে প্রতি বছর রথের নির্দিষ্ট দিনের অনেকটা আগেই এখানকার বসু পরিবার থেকে পুরীতে পট্টডোরী পৌঁছে দেওয়া হত। সেই প্রথা মেনে বেশ কয়েকশো বছর যাবৎ রথের অনেক আগেই কুলীনগ্রাম থেকে পট্টডোরী পৌছে দেওয়া হত পুরীতে। মাঝে কয়েকটা বছর পট্টডোরী খামে ভরে ডাকযোগে পুরীতে পাঠানো হচ্ছিল। বছর দশেক হল সেই প্রথা বন্ধ হয়েছে। তবুও রথের দিন গোটা দেশের ভক্তদের ভিড়ে জমজমাট থাকে ইতিহাস প্রসিদ্ধ কুলীন গ্রামের রথযাত্রা উৎসব প্রাঙ্গণ।

আরও পড়ুন- ব্যতিক্রমী রথযাত্রা! রথের রশিতে টান পড়ে পরদিন, জগন্নাথের বদলে পুজো পান অন্য দেবতা

বৈষ্ণবতীর্থ কুলীনগ্রামের মধ্যস্থলে রয়েছে জগন্নাথ দেবের মন্দির। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এখানে নিমকাঠের তৈরি জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার এই বিগ্রহের পুজোপাঠ হয়ে আসছে। রথ যাত্রা উৎসবের আগে এই বিগ্রহ নতুন রঙে সাজানো হয়। যে সুসজ্জিত রথে এই তিন দেবতাকে এখন বসানো হয় সেটি সূচনা কালের রথ না হলেও রথটি বহুদিনের পুরানো। প্রায় ৩০ ফুট উচ্চ এবং প্রায় ১৬-১৭ ফুর দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট রথটি শাল, সেগুন ও নিম কাঠ দিয়ে তৈরি বলে সেবাইতরা জানিয়েছেন।

ঐতিহাসিক তথ্যের ভিত্তিতে জানা গিয়েছে, আনুমানিক ৫০০ বছরেরও বেশি সময় আগে মালাধর বসুর পৌত্র লক্ষ্মীকান্ত বসু কুলীনগ্রামে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বিগ্রহ প্রতিষ্ঠার বহুকাল পরে কুলীনগ্রামে শুরু হয়েছিল রথযাত্রা উৎসব পালন। এমনটা হওয়ার কারণ কি ছিল তা অবশ্য কুলীন গ্রামের এখনকার রথযাত্রার উৎসব আয়োজকদের কেউই জানাতে পারেননি।

আরও পড়ুন- ভোটের দিন খোলা মাঠে ব্যালটবক্স? ভোটারদের ‘দুর্ধর্ষ’ আশ্বাস তৃণমূল প্রার্থীর!

রথযাত্রা উপলক্ষে শ্রীচৈতন্যদেবের পদধূলীধন্য কুলীনগ্রামে মঙ্গলবার ভক্তদের ঢল নামে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এদিন কুলীনগ্রামে জড়ো হন। কুলীনগ্রাম জুড়ে যে বিশাল মেলাও বসেছে। পূজারী শচীনন্দন মুখোপাধ্যায় জানান, রথের দিন সকাল থেকে সাবেকি রীতি রেওয়াজ মেনে কুলীনগ্রামের জগন্নাথ মন্দিরে বিশেষ পুজোপাঠ হয়েছে। এখানকার পুজোয় অন্যন ফল যাই থাক কাঁঠাল চাই। এছাড়াও জগন্নাথদেবের জন্য খিচুড়ি ভোগ, বলরাম দেবের জন্য অন্নভোগ ও সুভদ্রাদেবীর জন্য পায়েস ভোগ রান্না করা হয়। এই সব কিছুই দেবতাকে নিবেদন করে পুজোপাঠ শুরু হয় ।

আরও পড়ুন- ফোনে-চিঠিতে অনুরোধ করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী, কথা কানেই তুললেন না রাজ্যপাল

পূজারী আরও জানান, পুজোপাঠ শেষে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার বিগ্রহ মন্দির থেকে বাইরে বার করা হয়। পুজারী শচীনন্দন বাবু জানান , রীতি মেনে প্রথম রথের চার পাশে বিগ্রহগুলি সাতবার ঘোরানো হয়।এর পর রথের সবথেকে উঁচু ধাপে বসানো হয় বিগ্রহ গুলিকে। রথে বিগ্রহগুলি বসানোর পর ফের একপ্রস্থ পুজোপাঠ হয়। তার পর রথে ওঠেন প্রধান পুজারি।রথ টানার জন্য দুটি দড়ি রথে বাঁধা হয়। রথের দিন বিকালে রথ টেনে নিয়ে যাওয়া হয় কুলীন গ্রামের রথ তলায়। এই গ্রামের রঘুনাথ জিউ-এর মন্দির জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি বলে পরিচিত। প্রধান পুরোহিত এবং সহযোগী পুরোহিত গণ রথ থেকে তিন দেবতার বিগ্রহ নামিয়ে রঘুনাথ জিউয়ের মন্দিরে রেখে আসেন। উল্টোরথের দিন ঠিক একই ভাবে তিন দেবতার বিগ্রহ ফের জগন্নাথ মন্দিরে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয়।

শ্রীচৈতন্যদেবের স্মৃতিকে আঁকড়ে বৈষ্ণব তীর্থ কুলীন গ্রামে হওয়া রথযাত্রা উৎসবের খ্যাতি এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশবাসীর হৃদয়েও বৈষ্ণব তীর্থ কুলীনগ্রাম এক পবিত্র তীর্থভুমি হিসাবে স্থান করে নিয়েছে।সরকারি ভাবেও বাংলার অন্যতম পর্যটন স্থান হিসাবে কুলীন গ্রাম স্বীকৃতি পেয়েছে ।

West Bengal Puri Purba Bardhaman Rath Yatra 2023
Advertisment