গুটি কতক পড়ুয়ার উদ্যোগ আজ ছড়িয়েছে রাজ্যের সর্বত্র। পাহাড় থেকে সমুদ্র, পূর্ব থেকে পশ্চিম। করোনা পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পাশে থাকার উদ্যোগ নিয়েছিলেন কয়েকজন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী ও প্রাক্তনীরা। এখন তাঁরা প্রতিদিন রাজ্যের কয়েকহাজার মানুষের সহায়-সম্বল।
একদিকে চলছে সাধারণের জন্য রান্নার আয়োজন, অন্য দিকে অসহায়দের কাছে খাদ্য-সামগ্রী পৌঁছে দেওয়া। এভাবেই নিরলস কাজ করে চলেছে কোয়ারেন্টাইনড স্টুডেন্ট ইয়ুথ নেটওয়ার্ক। এখন রাজ্যের একাধিক জেলায় যোগ সূত্র স্থাপন করেছে সদ্য ও প্রাক্তনীদের এই উদ্যোগ। এক ইউনিটের সামগ্রীতে ঘাটতি দেখা দিলে অন্য ইউনিট সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। এমনই একটি পিপলস কিচেন চলছে বারাসতে।
আরও পড়ুন: এক টাকার ছোট কয়েনে অভিনব বাজার
বারাসতের কাজিপাড়ায় ২ নম্বর রেলগেটে চলছে পিপলস কিচেন। এখন স্থানীয় মানুষজনের একাংশের কাছে বড় ভরসা এই রান্না খাবার। এখানে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিনশে থেকে চারশো জনের রান্না হয়। কখনও তা পেরিয়েছে ৭০০-তে। বারাসত অঞ্চলের বিভিন্ন স্কুল-কলেজের প্রাক্তনীরা যতটা পারছেন সাহায্য করছেন। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী অর্কপল দত্ত বলেন, "এখন যা অবস্থা তাতে প্রায় সবারই প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। কয়েকজনের উদ্যোগ এখন কোয়ারেন্টাইনড স্টুডেন্ট ইয়ুথ নেটওয়ার্ক নানা জায়গায় বিস্তার লাভ করেছে। রাজ্যের অন্যত্র বন্ধু-বান্ধবরা এটা সংগঠিত করছে। বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, উত্তরবঙ্গ, এমনকী দিল্লিতেও কাজ চলছে। বন্ধু-বান্ধবরা নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে নিজেদের এলাকায় কাজ করছে।"
কিভাবে এই নেটওয়ার্ক রাজ্য কাজ করছে তার একটি পরিসংখ্যানও দিয়েছেন অর্কপল। তিনি জানান, এরাজ্যের ২০ টা জেলায় পিপলস কিচেন চলছে। রোজ প্রতিজনের হিসেবে হুগলিতে ১৮৩৫, বাঁকুড়ায় ৫৭০৮, কলকাতায় ৫৮৪৫, পশ্চিম মেদিনীপুরে ১৭০০, উত্তর ২৪ পরগণা ৯৮৮০, দক্ষিণ ২৪ পরগণায় ২৯০৫, পুরুলিয়ায় ৫৪০০, বীরভূমে ৩৪৬০ রান্না খাবার প্রস্তুত হচ্ছে। তাছাড়া রেশনিং দেওয়া হচ্ছে হাওড়া, মুর্শিদাবাদ, মালদা, নদিয়া, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার সহ ১৯ টা জেলায়।
আরও পড়ুন:সাধারণের হেঁশেল ঠেলছেন উচ্চমাধ্যমিকের প্রথম স্থানাধিকারী
ওই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্তরা পুরুলিয়ার আদ্রায় মনিপুর গ্রামে চালাচ্ছে সাধারণের রান্না ঘর। এই গ্রামে লেপ্রসির কারণে অনেকের শারীরিক ভাবে প্রতিবন্ধকতা আছে। লকডাউনের সময় এঁদের দিন-যাপন করা দায় হয়ে পড়েছে। তাই এই গ্রামকে বেছে নিয়েছেন ছাত্র-যুবরা। যাদবপুরের প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র গৌরব দাস বলেন, "আমরা খোঁজখবর করি। মনিপুর গ্রামে ৩০-৪০ শতাংশের কুষ্ঠ রোগের জন্য শারীরিক প্রতিবন্ধকতা এসেছে। এছাড়া এখানে ৪০ শতাংশ জনমজুর বাস করে। এখন সার্বিক ভাবে গ্রামের মানুষ উদ্যোগ নিয়েছেন। সবজির জন্য কোনও টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে না। রান্নাও করছেন গ্রামের লোকজন। রঘুনাথপুর ও জয়চন্ডীপুর মিলিয়ে প্রায় ৮০টি পরিবারকে রেশন দিয়েছি। ছাত্ররাই স্থানীয় ভাবে উদ্যোগ নিয়েছে।" শুধু সমতল নয় পাহাড়ের দুর্গম এলাকাতে পৌঁছে গিয়েছে এই নেটওয়ার্ক। দার্জিলিংয়ের ছিদুপ শেরপা বলেন , "পাহাড়ের ১৬টি গ্রামের ২০০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। দুএকটি গ্রামের যোগাযোগ অত্য়ন্ত দুর্গম। তাঁদের কাছেও পৌঁছে যাবে রেশন।"