লাটাগুড়ি- এ রাজ্যের এক অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র। এখানে যাঁরা বেড়াতে যান, তাঁরা অনেক ছবি নিয়ে আসেন ক্যামেরা এবং চোখ ভরে। অনন্যসাধারণ এই পর্যটন ডেস্টিনেশনের নানা দারুণ দিকের মধ্যে নিদারুণও রয়েছে। তা হল এখানকার জুয়া ও মদের হাট। এখানে পানের দোকান বা মণিহারি দোকানে গিয়ে জংলি মধুর খোঁজ করলেই হাতে উঠে আসবে দেশি মদের আস্ত বোতল।
লাটাগুড়ির উত্তর মাটিয়ালি ক্যানালের ধারে সপ্তাহে দু দিন মদ-জুয়ার হাট বসে। স্থানীয় থানা ও পুলিশ ফাঁড়ির কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জানানো হয়েছে, অভিযোগ করা হয়েছে প্রশাসনকেও। কিন্তু তাতে ছবি বদলায়নি। মদ-জুয়ার জেরে সর্বস্বান্ত হয়েছে বহু পরিবার। এ নিয়ে জেরবার এলাকার মহিলারা এবার মরিয়া। আর স্থানীয় পুলিশ বা প্রশাসন নয়- খোদ পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা।
আরও পড়ুন, ইটভাটা চলছে ডুয়ার্সের বনাঞ্চলে, অন্ধকারে প্রশাসন
এলাকার মহিলারা মিলে তৈরি করে ফেলেছেন একটি সমিতিও। সে সমিতির তরফ থেকে জোরদার আন্দোলনের প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে। মঙ্গলবার, ৪ ডিসেম্বর নিজেদের নালিশ জানাতে পুলিশ সুপারের কাছে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের।
সারাদিনের রোজগারের টাকা এক সন্ধেয় উড়ে যায়
‘‘মদ জুয়ার এই রমরমা বেড়েছে বছর দশেক হল। তার আগে এ জিনিস থাকলেও এর জেরে এত সামাজিক সমস্যা তৈরি হয়ে উঠত না’’, বলছিলেন এলাকার বাসিন্দা অনির্বাণ মজুমদার। এবং এ জন্য পর্যটকদের একাংশও যে দায়িত্ব এড়াতে পারেন না সে কথাও গোপন করছেন না তিনি। ‘‘এখন এলাকায় চালের দোকানের চেয়ে মদের দোকান বেশি। আমাদের ক্যানালপাড়ে প্রতি বুধ ও শনিবারে সকাল থেকে বসে মদের হাট। প্রায় ৫০ টির বেশি দোকানে রান্না হয় শুয়োরের মাংস। সঙ্গে চলে দেশি মদ। একইসাথে চলে বিভিন্ন রকম জুয়া ও তাস খেলা। আমরা পুলিশকে জানালে তারা এসে লোক দেখানো রেইড চালায়। পরদিন থেকে আবার যে কে সেই।’’
সদ্যগঠিত মহিলা সংগঠনের আহ্বায়ক স্বপ্না রায় বললেন, ‘‘এখানকার পুরুষদের একটা বড় অংশ দিন মজুরের কাজ করেন। সারা দিনের পরিশ্রমের রোজগার সন্ধে হতেই উড়ে যায় মদ জুয়ায়। রাতে বাড়ি ফিরে স্ত্রী-মা-সন্তানদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ছবিও নিত্য নৈমিত্তিক হয়ে উঠেছে। অবিলম্বে পরিস্থিতি বদলের প্রয়োজন। সে কারণেই আমরা জলপাইগুড়ি জেলার পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতির সঙ্গে দেখা করে সমস্যার কথা তুলে ধরব। আমাদের আশা সুরাহা এবার হবেই।’’
পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতিকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ওঁরা এলে সামনাসামনি কথা বলে পুরোটা শুনে নিই। নিশ্চয়ই প্রয়োজনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’