কথায় আছে জুয়া খেলা অপরাধ, ধরা পড়লেই সাজা। কিন্তু এটা হয়তো অনেকেই জানেন না, শুধুমাত্র জুয়াকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে একদিনের মেলা। সেই জুয়ার মেলাতে আবার রয়েছে পুলিশি প্রহরা। শুনতে আশ্চর্য লাগছে। কিন্তু এটাই সত্যি।
এ-এক এমন আজব মেলা যেখানে বাড়ির মেয়ে, বউ এবং বয়স্করাও অন্তত একটা দিন জুয়ার আসরে অংশ নেন। কারণ একটাই , সংসারের আর্থিক সমৃদ্ধি এবং সুখ শান্তির কামনায় শতবর্ষ প্রাচীন এই জুয়াড়ি মেলা আজও হয়ে চলেছে পুরাতন মালদা পুরসভার অন্তর্গত মোকাতিপুর এলাকায়। সোমবার মুলাষষ্ঠী। পুজো দিয়েই বাসি মুখে জুয়া খেলায় অংশ নেন মহিলারা। কেউ হারেন, আবার কেউ জেতেন। কিন্তু হারজিত বড় কথা নয়। এই জুয়ারি মেলাকে ঘিরে প্রচলিত রয়েছে যে, মুলাষষ্ঠী পুজোর পর মেলাতে জুয়ার আসরে অংশ নিলেই সংসারে আসবে আর্থিক সমৃদ্ধি। যার জের থাকবে গোটা বছর। এই মেলা দেখতে আশেপাশের গ্রাম থেকে বহু মানুষ ভিড় করেন। সুষ্ঠুভাবে মেলা পরিচালনা করার ক্ষেত্রেও থাকে পুলিশি প্রহরা।
পুরাতন মালদার মোকাতিদিপুরে জাঁকজমকভাবে অনুষ্ঠিত হয় জুয়ারী মেলার আসর। যদিও মহিলাদের পাশাপাশি পুরুষেরাও আংশিকভাবে এই মেলায় অংশ নিয়ে থাকেন। নিজেদের ব্যবসা বৃদ্ধি এবং মঙ্গল কামনায় সকলেই আসেন জুয়াড়ি মেলায় একবার অংশ নিতে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে মেলা প্রাঙ্গনে মূর্তি তুলেই মূলষষ্ঠী পুজো হয়ে থাকে। সকালে শুরু হয় ষষ্ঠীপুজো৷ যা শেষ হতে না হতেই বসে জুয়া খেলার আসর৷ শুধু মালদা কিংবা রাজ্যের অন্যান্য জেলা থেকেই নয়- বিহার, ঝাড়খণ্ড, এমনকী অসম থেকেও অনেকে এই মেলায় অংশ নিতে আসেন৷
এই মেলার কাহিনী অতি প্রাচীন৷ তুর্কি শাসনকালে পুরাতন মালদায় ছিল ঘন জনবসতি৷ শোনা যায়, সেই সময় মোকাতিপুর এলাকায় ছিল ঘন জঙ্গল এবং জন্তু জানোয়ারের বাস৷ বাঘের ভয়ে দিনদুপুরেও ওই এলাকায় যাওয়ার সাহস পেত না কেউ৷ সেই জঙ্গলেই ছিল ষষ্ঠীদেবীর বেদি৷ তাই ঘরের মেয়ে-বউরা যখন মুলাষষ্ঠী তিথিতে সেই বেদিতে পুজো দিতে যেতেন, তখন বাড়ির পুরুষরা দল বেঁধে তাঁদের পাহারা দিতেন৷ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলত পুজো৷ পুরুষরা অতক্ষণ একভাবে বসে থাকতে না পেরে শুরু করেন জুয়া খেলা৷ সেই শুরু৷ এখন তা হয়ে উঠেছে প্রাচীন ঐতিহ্যে৷ আগে শুধু পুরুষরা এই মেলায় অংশ নিলেও কালের নিয়মে বর্তমানে মহিলারাও জুয়া খেলায় সক্রিয়ভাবে অংশ নেন৷
এদিন মেলায় উপস্থিত গৃহবধূ দেবিকা বর্মন বলেন, ঐতিহ্যের কাছে বৈধ-অবৈধ প্রশ্ন হয় না। কয়েকশো বছরের পুরোনো এই মেলায় যাবার পর জুয়া খেললে সারা বছর সংসারে সুখ থাকে অর্থের ভাণ্ডারে ভরে ওঠে এমনটাই রয়েছে আমাদের বিশ্বাস। অনেকেই হাতেনাতে ফল পেয়েছেন। লোকমুখে এমন কথা শুনেই এদিন মূলাষষ্ঠী দেবীর পুজো দিয়েছি। জুয়া খেলে মেলাতেই খাওয়া-দাওয়া করে বাড়ি ফিরেছি। মেলার এক উদ্যোক্তার কাছে জানা গিয়েছে, গত বছর মেলায় প্রায় দেড় কোটি টাকার জুয়া খেলা হয়েছে৷ এবার অবশ্য তার থেকেও বেশি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।'
জুয়া বৈআইনি, পুলিশ সব জেনেও কেন নীরব? পুরাতন মালদা থানার আইসি হীরক বিশ্বাস বলেন, 'এই মেলার অনুমতি নেই। ওখানে মন্দির রয়েছে। তাকে কেন্দ্র করেই ধর্মীয় আবেগ রয়েছে। অনেক ঐতিহ্যও রয়েছে এই মেলার। তাই পুলিশ বাধা দেয় না। তবে পুলিশ সতর্ক, ঝামেলা হলে সেখানে আমরা যাবো।'