Advertisment

কালীর পাশে দেবী দুর্গার চার সন্তান! বর্ধমানের ওঁয়াড়ি গ্রামের এই পুজোর ইতিহাস চমকাবে

অপার লীলা বর্ধমানের বড়'মা-র।

IE Bangla Web Desk এবং Rajit Das
New Update
Ganesha Lakshmi Saraswati Kartik with Kali idol in Oyari village of Burdwan , কালীর পাশে দেবী দুর্গার চার সন্তান! বর্ধমানের ওঁয়াড়ি গ্রামের এই পুজোর ইতিহাস চমকাবে

কালী প্রতিমার সঙ্গেই রয়েছেন গণেশ লক্ষ্মী সরস্বতী কার্তিক।

বর্গী হানায় একদা তছনছ হয়ে গিয়েছিল সারা বাংলা। সেই হানা থেকে পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষের ওঁয়াড়ি গ্রামও রক্ষা পায়নি। কথিত আছে প্রায় পাঁচ শতাধীক বছরকাল আগের সেই বর্গী হামলায় নিজের আশ্রয় পর্যন্ত হারাতে হয়েছিল ওঁয়াড়ি গ্রামের বাসিন্দাদের আরাধ্যা দেবী বড়মাকে। তাঁর ঠাঁই হয়েছিল স্থানীয় শ্মশান সংলগ্ন পরিত্যাক্ত জায়গায়। দীর্ঘদিন সেখানেই তিনি পড়েছিলেন। দেবী স্বপ্নে তাঁর দুরাবস্থার কথা এই গ্রামের বাসিন্দা বুদ্ধদেব সরকারকে জানান। এরপরেই দেবীকে উদ্ধার করে নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে বুদ্ধদেববাবু প্রথম পুজোপাঠ শুরু করেন। পরে মন্দির গড়ে তিনি বড়মাকে প্রতিষ্ঠা করেন। সেই থেকেই ফের মন্দিরে প্রতি বছর কার্তিকেয় আমাবস্যা তিথিতে কালি পুজোর দিন ওঁয়াড়ি গ্রামে ঘটাকরে হয়ে আসছে বড় মায়ের আরাধনা।

Advertisment

বর্গীদের মহিষাসুরের সঙ্গে তুলনা করে বড়মায়ের পুজোয় একদা মোষ বলি হত। সেই সময়ে মহিষাসুর বধের উল্লাশে বড়মার প্রতিমার সামনে লাঠি খেলায় মাতোয়ারা হতেন ওঁয়াড়ি গ্রামের হিন্দু ও মুসলিম যুবকরা। এখন মোষ বলিদান না হলেও সাবেকি প্রথামেনে কালি পুজোর দিন বড়মার সামনে হয় লাঠি খেলা। দেবী বড়মাকে আঁকড়ে ধরেই আজও ওঁয়াড়ি গ্রামে বিরাজমান রয়েছে সম্প্রীতির অটুট বন্ধন।

ওঁয়াড়ি গ্রামে বড়মা দেবী কালি রুপে পূজিতা হলেও আদতে তিনি দুর্গা ও কালি রুপী। বড়মার প্রতিমা প্রকৃত অর্থেই নজরকাড়া। গনেশ, কার্তিক, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর সঙ্গে দুই পরী জয়া ও বীজয়াকে সঙ্গে নিয়েই প্রতিষ্ঠিতা দুর্গা কালী রুপী বড়মা। নিজের মাহাত্ম্য গুণেই বড়মা ওঁয়াড়ি গ্রামের বাসিন্দাদের কাছে অনন্য দেবী রুপে ভূষিতা হয়েছেন। এলাকাবাসীর বিশ্বাস বড়মায়ের কাছে কেউ কিছু চাইলে বড়মা তাকে নিরাশ করেন না। তাই শ্রদ্ধায় গ্রামের সকলেই তাঁর কাছে মাথানত করেন।

আরও পড়ুন- পায়ে আলতা-নুপূর দেখলেই ক্রুদ্ধ মা! এই কালীপুজোর পিছনে লুকিয়ে ভয়ঙ্কর এক কাহিনী

পূর্বে গ্রামের সরকার বাড়িতে পূজিতা হতেন বড়মা। এখন তিনি পূজিতা হন ওঁয়াড়ি গ্রামের সার্বসাধারণের বড়মা রুপে। দেবীর মন্দিরটিও তৈরি হয়েছে বিশাল আকারে। শোনাযায় একসময়ে বড়মায়ের সম্পত্তির পরিমাণ ছিল প্রায় সাড়ে সাতশো বিঘা। এখন সেসব ইতিহাস। এখন সামান্য ৩০-৩৫ বিঘা দেবত্তর সম্পত্তি রয়েছে বড় মায়ের নামে। সেই জমির আয় থেকেই সারা বছর বড়মায়ের নিত্য সেবা ও কার্তীকেয় আমাবস্যা তিথির বিশেষ পুজোপাঠ হয়। পুজো চলে সাতদিন ধরে।

পুজারী তুষার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'তন্ত্র মতেই হয় বড়মায়ের পুজো হয়ে থাকে। মায়ের পুজোর ভোগ অন্নে দেওয়া হয় চালকলাই ভাজা ও চিনি। উপাচার মেনে ছাগ, আখ ও ছাঁচি কুমড়ো বলিদান হয়। কালি পুজোর দিন থেকে শুরু করে সাত দিন ধরে চলে বড় মার বিশেষ পুজোপাঠ। বছরের অন্য দিন গুলিতে গ্রামের বাসিন্দাদের কেউ কর্মসূত্রে বাইরে থাকলেও পুজোর সাতটি দিনের জন্য সবাই ফিরে আসেন গ্রামে। পুজোর সাত দিন উৎসব মুখর থাকে সমগ্র ওঁয়াড়ি গ্রাম। এলাকায় বসে বিশাল মেলা। হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও যাত্রা পালাও।'

বড়মার প্রতিমার রুপ ও মাহাত্ম নিয়ে ওঁয়াড়ি গ্রামের বাসিন্দা মহলে অনেক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। এলাকার বাসিন্দা মুসূদন চন্দ্র বলেন, 'কথিত আছে চরম দারিদ্রতা মধ্যে দিনযাপন করতেন গ্রামের সরকার পরিবারের পূর্ব পুরুষ বুদ্ধদেব সরকার। উদাস মনের এই মানুষটি কালী মায়ের ভক্ত ছিলেন। ওঁয়াড়ি গ্রামের একপাশে ছিল শ্মশান ঘাট। সেখানে নিজের পোষা গরু চরাতে যেতেন বুদ্ধদেববাবু। গরু চরাতে চরাতেই একদিন সেখানেই বুদ্ধদেব ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। তখনই নাকি তাঁকে স্বপ্নে বড়মা দেখা দিয়েছিলেন। বড়মা বুদ্ধদেবকে বলেছিলেন যে, বর্গী হামলায় তার সবকিছু তছনছ হয়ে গিয়েছে। বর্গীরা সব মন্দির ধ্বংস করে দিয়েছে। নিজের দুরাবস্থার কথা বুদ্ধদেবকে জানিয়ে বড়মা জানিয়েছিলেন যে, তিনি খুব কষ্টে রয়েছেন। এরপরই বড়মা বুদ্ধদেবকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যে, তাঁকে যেন শ্মশান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে গিয়ে সরকার বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা শুনে বুদ্ধদেব মাকে বলেছিলেন , আমি নিজেই দুবেলা খেতে পাইনা। তোমাকে প্রতিষ্ঠা করে কি খাওয়াবো? তখন দেবী বুদ্ধদেবকে জানিয়েদেন সামান্য চালকলাই ভাজা আর একটু চিনি দিবি তা দিয়েই আমার খাওয়া হয়ে যাবে। একই সঙ্গে বড়মা নির্দেশ দিয়ে বুদ্ধদেবকে বলেছিলেন, লক্ষ্মী সরস্বতী কার্তিক ও গনেশও দুরাবস্থায় রয়েছে। আমার সঙ্গে ওদেরও প্রতিষ্ঠা করে পুজো করবি। বড়মার সেই নির্দেশ মেনেই বুদ্ধদেব বড়মার পুজোপাঠ শুরু করেন। সেই থেকে গনেশ , কার্তিক , লক্ষ্মী ও সরস্বতীকে সঙ্গে নিয়েই দুর্গাকালি রুপে ওঁয়াড়ি গ্রামে পূজিতা হয়ে আসছেন বড়মা।'

Kali Puja East Burdwan burdwan Kali Puja 2023
Advertisment