গঙ্গার ভয়াবহ ভাঙ্গনে তলিয়ে গেল শতবর্ষ পুরনো প্রাচীন রাধাগোবিন্দ মন্দির। মালদার কালিয়াচক ৩ ব্লকের পারলালপুর এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শুরু হয়েছে ভয়াবহ গঙ্গার ভাঙন। আর তাতেই পারলালপুর এলাকার প্রায় ৭০০ মিটার বাঁধের অংশ এবং প্রাচীন রাধাগোবিন্দের মার্বেল দিয়ে তৈরি করা মন্দির গঙ্গার ভাঙনে তছনছ হয়ে গেল। যার ফলে এদিন সকাল থেকেই শোকে মুহ্যমান পারলালপুর এলাকার গ্রামবাসীরা। এই ঘটনার জন্য ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ যে দায়ী এবং তাদের উদাসীনতার কারণেই আজ সব শেষ হয়ে গেল তা নিয়েও চরম ক্ষোভ দিলেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শোভাপুর-পারদেওনাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের পারলালপুর এলাকায় কয়েকশো মিটার ভাঙন শুরু হয়। ইতিমধ্যেই ভাঙনের জেরে বিঘার পর বিঘা জমি গঙ্গা নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এবার ভাঙনে, তলিয়ে গেল পারলালপুর এলাকার একটি মার্বেল টাইলস দেওয়া বিশাল আকৃতির প্রাচীন রাধাগোবিন্দ মন্দির। চোখের সামনে এইভাবে ভাঙন দেখে স্থানীয় গ্রামের বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। আর এই ভাঙন নিয়ে শুরু হয়েছে বিজেপি তৃণমূলের মধ্যে টানাপোড়েন।
স্থানীয় বাসিন্দাদের বক্তব্য, এদিন সকাল থেকেই পারলালপুর এলাকায় গঙ্গার ভাঙন শুরু হয়েছে। এই এলাকায় একটা বিএসএফ ক্যাম্পও ছিল। পরিস্থিতি বুঝতে পেরে এদিন ভোরেই সেই ক্যাম্পে জওয়ানেরা প্রথম গ্রামবাসীদের ঘটনাটি জানান। এরপর এই ভাঙন এলাকায় ছুটে আসেন গ্রামের বাসিন্দারা। আগে তাঁদের বসতভিটা চলে গিয়েছে এখন তাঁরা অসহায়। এলাকায় একমাত্র মন্দির ছিল সেই মন্দিরটিও তলিয়ে গেল।
ভাঙন কবলিত এলাকার বাসিন্দা বরুণ কুমার সরকার, সুধীর সরকার জানিয়েছেন, ভোর রাত থেকেই গঙ্গার ভাঙনের কারণে এলাকার একটি মন্দির ও স্থানীয় বিএসএফ ক্যাম্প সহ বেশ কয়েক জায়গা নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে এলাকার মানুষ এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন।
আরও পড়ুন ‘বালি মাফিয়াদের সুবিধা দিতে নদীতে বাঁধ, তাই বিপর্যয়’, তৃণমূলকে দুষে সোচ্চার বিজেপি
রাজ্যের সেচ দফতরের রাষ্ট্রমন্ত্রী তথা মোথাবাড়ি কেন্দ্রের বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, "কেন্দ্রের অধীনস্থ ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই আজকে এই অবস্থা। ওই সংস্থা যদি মনে করত তাহলে সঠিক সময় ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করলে আজকে এই অবস্থা হত না। সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ারেরা অনেকভাবে চেষ্টা করে ওই প্রাচীন মন্দির ও আশেপাশের এলাকাতে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা করে গিয়েছেল। কিন্তু অস্থায়ী ভাবে কাজ করাতেও সমস্যা তৈরি হচ্ছে। অথচ ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ এলাকায় কাজ করলে হঠাৎ করে তারা ভাঙন প্রতিরোধের কাজ বন্ধ করে দেয়। যার কারণে এখন সকলকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। আজকের এই ঘটনার জন্য দায়ী সম্পূর্ণ ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ।"
আরও পড়ুন মালবাজারে দুর্ঘটনা: নদীখাতে বোল্ডার ফেলাতেই বিপত্তি? প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন
যদিও প্রসঙ্গে ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কোনওরকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক অম্লান ভাদুড়ি জানিয়েছেন , "যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তার ঠিক নয়। ওদের তোলাবাজি আর চাঁদাবাজি জুলুমেই আজকে এই অবস্থা। তোলা না দিলে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ করা যায় না। যার দুর্ভোগ এখন সাধারণ গ্রামবাসীদের পোহাতে হচ্ছে। সেচ দফতর তো ওই এলাকায় কাজ করেছিল, কী কাজ করল যাতে আবার নতুন করে ভাঙন দেখা দিল। আমরাও চাই সুষ্ঠুভাবে ভাঙন প্রতিরোধের কাজ হোক।"