কথায় বলে, সব তীর্থ বারবার গঙ্গাসাগর একবার। মকর সংক্রান্তি ও পৌষ সংক্রান্তি মানেই গঙ্গাসাগরে পুণ্যস্নানের ভিড়। মানুষজনের সমাগম তো রয়েছেই তবে, এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য একটাই পূণ্য অর্জন। দুই বিশেষ দিন উপলক্ষ্যে গঙ্গাসাগর এলাকায় থাকে নানান ব্যবস্থা।
শুধু যে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ পুণ্যলাভের আশায় জড়ো হন তা একেবারেই নয়, বরং দুর দূরান্ত থেকে হাজির হন অনেক মানুষ। ভক্তরা নিজেদের মনস্কামনা নিয়ে আসেন, আবার কেউ কেউ পূণ্য অর্জনের তাগিদেই আসেন। আর তাঁদের সেইসব সুন্দর স্মৃতি ধরে রাখাই যেন কাজ একদল যুবকের। কীভাবে? সমুদ্রের ধারে শুধু যে তাঁদের ছবি তুলে দেন এমনটাই নয় বরং গোটা একটা স্টুডিও বসিয়ে দিয়েছেন সাগরের পাড়ে। এও সম্ভব? আলবাত সম্ভব!
গঙ্গাসাগরে এসে নিজেদের একটা স্মৃতি রাখবেন না এও আবার হয় নাকি? তাই তো, তাঁদের ছবি তুলে দেওয়ার জন্য তৈরি এই এলাকার বেশ কিছু ছেলে। যদিও বা সমুদ্রের ধারে ছবি তোলার কাহিনী নতুন নয়। তবে, মানুষ এবং নিজেদের তাগিদে সাগর সৈকতে স্টুডিও বসিয়ে ফেলা চাট্টিখানি কথা একেবারেই নয়। ২০০২ সাল থেকেই গঙ্গাসাগর এলাকার ছেলেরা শুধু ফটোগ্রাফি শুরু করেন। তখনও স্টুডিও বানানোর সিদ্ধান্ত মাথায় আসে নি। কিন্তু মানুষের ছবি তোলা মানেই তৎক্ষণাৎ চাই। ফোনের ক্যামেরাবন্দী ছবি অনেকেই পছন্দ করেন না। বিশেষ করে গ্রাম গঞ্জের মানুষ, অথবা বয়স্ক মানুষের অনেকেই প্রিন্ট করা ছবি দেখতে বেশি ভালবাসেন। সেই কারণেই এই ব্যবস্থা। মাত্র ৫০ টাকার বিনিময়ে সারা জীবনের স্মৃতি ধরে রাখেন এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সকলেই।
তবে, হঠাৎ করে কেনই বা এই ভাবনা চিন্তা তাঁদের মাথায় এল? ওদের বক্তব্য, এখানকার ছেলেরা বেশিরভাগ মধ্যপ্রদেশ, কেরালা, গুজরাট এসব জায়গায় কাজের জন্য পাড়ি দিয়েছিল। কিন্তু লাভের লাভ কিছুই হয়নি। সেই কারণেই স্টুডিওর ব্যবসা শুরু করেন তারা। মোটামুটি লাভ ভালই হয় তাঁদের। সারাবছর কিছু না কিছু রোজগার হয়, মানুষজন এমনিও ঘুরতে যান। সেই কারণেই এই ভাবনা চিন্তা। মানুষজন এখন খুব ইনস্ট্যান্ট হয়ে গিয়েছেন। সাধারণ স্টুডিও গুলো এতটাই দূরে যে সেই ভাবনাকে কাজে লাগিয়েই ভ্যানে করে প্রিন্টার মেশিন নিয়ে হাজির হন তারা। কমপক্ষে একটি ভ্যানে ৪টি করে প্রিন্টার মেশিন। ছবি তুলতে যেটুকু দেরি, তৎক্ষণাৎ হাতে পেয়ে যাচ্ছেন সকলে।
কিন্তু, ব্যবসা করলেও এসব ছেলেরা কিন্তু যথেষ্ট শিক্ষিত। পরিস্থিতি এবং সুযোগের অভাব আজ তাঁদের এই কাজ করতে বাধ্য করেছে। সরকারি সাহায্য তাঁরা পান না। এমনকি গঙ্গা ভাঙ্গনের ফলে বাড়িঘর সবই প্রায় তলিয়ে যাওয়ার মুখে। মানুষের স্মৃতি ধরে রাখাই তাঁদের কাজ। আবার কোনওদিন তাঁরা গঙ্গাসাগর আসবেন কি না, সেও অজানা। শুধু এই ছবি দেখলেই যেন হাসি ফুটে ওঠে তাঁদের মুখে।
এককথায় একে ভ্রাম্যমাণ স্টুডিও বলা যেতেই পারে। আর কোথাও ইনস্ট্যান্ট স্টুডিও অথবা প্রিন্টিং অপশন নেই। যা সহজেই মিলবে গঙ্গাসাগরে। পেটের তাগিদ হোক অথবা ফটোগ্রাফির প্রতি অজানা এক ভালবাসা, নিজেদের সাগর সৈকতে এভাবেই গুছিয়ে নিয়েছেন কচুবেরিয়া, দিকবেরিয়ার ছেলেরা।