Advertisment

Ganga Sagar: ধেয়ে আসছে সাগর, আনন্দ আয়োজনের মাঝে হারিয়ে যায় বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়া ঘর

Ganga Sagar: আমাদের নদীমাতৃক দেশ। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সভ্যতা। জীবন জীবিকা। একদিকে যেমন মানুষের জন-জীবনে নদী কল্যাণ বয়ে এনেছে তেমনি তার অকল্যাণ ক্ষতিকারক ভূমিকা একেবারে কম নয়।

author-image
Shashi Ghosh
New Update
Kapilmuni Ashram Gangasagar

কুম্ভ মেলার পরে সব থেকে বড় মেলা গঙ্গাসাগর। মকর সংক্রান্তির এই কয়েকটা দিন মাত্র খবরের কাগজ, টিভিতে চর্চা হয় এই গ্রাম নিয়ে। বছরের বাকি দিনগুলো কিভাবে কাটে সকলের তার খোঁজ কেউ রাখে না। Photograph: (এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ)

Ganga Sagar:  "দু'বছর আগেও যখন সাগর মেলায় এসেছিলাম তখনও নদী এতটা কাছে ছিলনা! স্নান সেরে কপিল মুনির আশ্রম হেঁটে যেতেই সময় লাগত। এর পরেরবার এলে মন্দিরের সামনেই দেখতে পাবেন নদী চলে এসেছে। আমার নিজেরই দোকান ছিল সেই এক কিলোমিটার আগে।" সাগর মেলার অস্থায়ী থানার পাশে চায়ের দোকানের বসে গল্প হচ্ছিল দোকানদার আর খদ্দেরের মধ্যে। 

Advertisment
 kapilmuni ashram with trouble of forward sea level
ভাঙনের জেরে গঙ্গাসাগর এবং কপিলমুনির মন্দিরের দূরত্ব ক্রমেই কমছে। যা চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রশাসনের ৷ সমাধান কোন পথে? Photograph: (এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ)

 

আমাদের নদীমাতৃক দেশ। নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সভ্যতা। জীবন জীবিকা। একদিকে যেমন মানুষের জন-জীবনে নদী কল্যাণ বয়ে এনেছে তেমনি তার অকল্যাণ ক্ষতিকারক ভূমিকা একেবারে কম নয়। যদিও এর পিছনে দায়ী আমরাই। অকল্যাণের তালিকার অন্যতম কারণ নদী ভাঙন। ভাঙনের ফলে প্রতি বছর এদেশের কত মানুষ যে তাদের বসতবাড়ি হারিয়ে ছিন্নমূল মানুষে পরিণত হয়, কতজনের যে আবাদি ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব, সর্বহারায় পরিণত হয়, তার প্রকৃত হিসাব রাখতে গেলে তার ফর্দ অনেক লম্বা হয়ে যাবে। 

Advertisment
Ganga Sagar
কিছু কিছু স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, 'সাগরপার থেকে বালি তুলে নেওয়ার ফলে বাড়ছে সমস্যা Photograph: (এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ)

 

একবার নয়, তিন তিনবার নদীর ধারে ঘর ভেঙেছে সাগর দ্বীপের বাসিন্দা রাজীব সাউয়ের। পেশায় মৎস্যজীবী। পিছিয়ে যেতে যেতে জমি-বাড়ির সবটুকু হারিয়ে গিয়েছে নদীগর্ভে। বয়স প্রায় পঞ্চাশ পঞ্চান্নর কাছাকাছি। এক ছেলে বাবার সাথে মাছ ধরতে যায়। আরেক ছেলে চলে গিয়েছে হায়দরাবাদে। হোটেলে বাসন মাজার কাজ করতে। সাগর দ্বীপের মানুষের জীবন অনিশ্চয়তায় ঘেরা।

kapilmuni ashram with trouble
সাগর পারে ঘর হারানোর সবাইকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে স্থানীয়দের। Photograph: (এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ)

 

আজ যেখানে ঘর আছে কাল সেখানে জল। প্রতিবছর গঙ্গাসাগর মেলাকে কেন্দ্র করে লক্ষ লক্ষ পূর্ণ্যার্থীদের সমাগম হয় গঙ্গাসাগর কপিলমুনি মন্দির সংলগ্ন এলাকায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পুণ্যার্থীরা ভিড় করে গঙ্গাসাগরে। সবার অজান্তে জলরাশি এগিয়ে আসছে! এই খবর বাইরের লোকেদের জেনে হবে কি!

sea distance decreasing
এক বছর আগেও কারো যেখানে ঘর বা দোকান ছিল সেখানে এখন সমুদ্র সেই জায়গা গিলে খেয়েছে। Photograph: (এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ)

 সাগরদ্বীপ পাঁচ নম্বরেই বাড়ি ছিল অঞ্জুমান বিবির। ছেলে, ছেলের বউ নাতি নিয়ে সংসার। গেলো বছর সেই বাড়িও জলের তলায় তলিয়ে গেছে। প্রতিবছর অঞ্জুমান বিবি গঙ্গাসাগর মেলায় সাফাই কর্মীর কাজ করে। আগে এই গ্রামে কুড়ি তিরিশটির মতন পরিবার ছিল। তার মধ্যে কয়েকটি পরিবার আবাস যোজনা প্রকল্পে ঘর পেয়ে অন্য জায়গায় সরে গিয়েছে। বাকিরা গ্রাম ছেড়ে অন্য জায়গায় ঘর করেছে। অঞ্জুমান বিবির মতন যাদের অবস্থা খুবই শোচনীয় তারাই শুধু রয়েছে গ্রামটিতে। সকলেরই ঘর হোগলা পাতার। যে কয়েকজন রয়েছে তারাও তল্পিতল্পা গুটিয়ে অন্য রাজ্যে পারি দেওয়ার কথা ভাবছে। 

kapilmuni ashram with trouble
মন্দির থেকে ১ কিলোমিটার এলাকার মধ্যেই শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। ক্রমশ দূরত্ব কমছে কপিলমুনি আশ্রম ও সাগরের Photograph: (এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ)

 

"কুম্ভ মেলার পরে সব থেকে বড় মেলা গঙ্গাসাগর। মকর সংক্রান্তির এই কয়েকটা দিন মাত্র খবরের কাগজ, টিভিতে চর্চা হয় এই গ্রাম নিয়ে। বছরের বাকি দিনগুলো কিভাবে  কাটে সকলের তার খোঁজ কেউ রাখে না। সব রকম সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত বেশীরভাগ মানুষ", বলছিলেন সাগরদ্বীপের জেলে পড়ার বছর তিরিশের যুবক গোপাল মণ্ডল। গোপাল বছরের অর্ধেক সময় সাগরে মাছ ধরতে যায়। গোপালের অভিযোগ গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে সারা দেশে এত হইচই সেখানে এলাকার মানুষরই কোন উন্নতি নেই। নেই কোন কর্মসংস্থান। এখন বছরের অর্ধেক সময় সাগরের মাছ ধরতে যাওয়ার পরেও থাকে বিধি নিষেধ। 

sea distance decreasing
গঙ্গাসাগর মেলার এত জাঁকজমক এত আয়োজন সবই বৃথা হয়ে যাবে যদি এখন থেকে এই সাগরদ্বীপকে বাঁচানোর চেষ্টা না হলে। Photograph: (ফাইল ছবি)

 মন্দির থেকে ১ কিলোমিটার এলাকার মধ্যেই শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। ক্রমশ দূরত্ব কমছে কপিলমুনি আশ্রম ও সাগরের। বর্তমান কপিলমুনি মন্দিরের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের দূরত্ব কমে ২০০ মিটারে এসে দাঁড়িয়েছে। আগে যে দূরত্ব ছিল প্রায় তিন থেকে চার কিলোমিটার। এই নদী ভাঙনের কারণে এর আগেও তিনটি মন্দির নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। ২০১৯ সালে কপিলমুনি মন্দির থেকে সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব ছিল প্রায় ৪৭০ মিটার। ২০২৪ সালে এই দূরত্ব কমে হয়েছে ২৭০ মিটার।

sea distance
মাটি উপরে উঠে আসাতে এখন সমুদ্র তটে আর আগের মতন নেই। Photograph: (এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ)

 

জেলেদের মধ্যেই একজন বলছিলেন গঙ্গাসাগরের সমুদ্র সৈকত থেকে কিছুটা দূরে হাঁড়ি ভাঙা চরের কথা। এক সময় সাগরদ্বীপের মানুষ ভটভটিতে করে গিয়ে ওই চরায় মাছ ধরতেন। ওই চরার অন্যদিকে ছিল জম্বুদ্বীপ। যখন জম্বুদ্বীপ ভাঙতে শুরু করে, তখনই হাঁড়ি ভাঙা চরও ভাঙতে শুরু করে। বর্তমান সেই হাঁড়ি ভাঙা চর আর নেই। সেটি পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আর তারপর থেকেই সমুদ্রের ঢেউ সরাসরি গঙ্গাসাগরের সমুদ্র সৈকতে আছড়ে পড়ছে। 

sea distance decreasing news in Bengali
২০১৯ সালে কপিলমুনি মন্দির থেকে সমুদ্র সৈকতের দূরত্ব ছিল প্রায় ৪৭০ মিটার। ২০২৪ সালে এই দূরত্ব কমে হয়েছে ২৭০ মিটার। Photograph: (এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ)

 

কিছু কিছু স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, 'সাগরপার থেকে বালি তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেই বালি বিক্রি হচ্ছে। মাটি বেরিয়ে আসছে। আবার সেই বালি দিয়েই বাঁধ দেওয়া হচ্ছে। মাটি উপরে উঠে আসাতে এখন সমুদ্র তটে আর আগের মতন নেই। বাঁধের টাকা সব নেতা মন্ত্রীরা খেয়ে বসে আছে। অভিযোগ করতে গেলে না না ধরনের হয়রানির শিকার হতে হয়'। 

Ganga Sagar।
মন্দির থেকে ১ কিলোমিটার এলাকার মধ্যেই শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। ক্রমশ দূরত্ব কমছে কপিলমুনি আশ্রম ও সাগরের। Photograph: (এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ)

 

সাগর পারে ঘর হারানোর সবাইকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় আসে। ভিটে মাটি আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে থাকতে হয়। এই যন্ত্রণা এখন সবই সহ্য হয়ে গিয়েছে। এক বছর আগেও কারো যেখানে ঘর বা দোকান ছিল সেখানে এখন সমুদ্র সেই জায়গা গিলে খেয়েছে। সাগরদ্বীপের সকলেই জানে, আজ না হয় কাল ঘর ছাড়তে হবে। দুশ্চিন্তা করেও লাভ নেই। গঙ্গাসাগর মেলার এত জাঁকজমক এত আয়োজন সবই বৃথা হয়ে যাবে যদি এখন থেকে এই সাগরদ্বীপকে বাঁচানোর চেষ্টা না হলে।

kapilmuni ashram with trouble of forward sea level sea distance decreasing news in Bengali
একবার নয়, তিন তিনবার নদীর ধারে ঘর ভেঙেছে সাগর দ্বীপের বাসিন্দা রাজীব সাউয়ের। পেশায় মৎস্যজীবী। পিছিয়ে যেতে যেতে জমি-বাড়ির সবটুকু হারিয়ে গিয়েছে নদীগর্ভে। Photograph: (ফাইল ছবি)

 

Gangasagar
Advertisment