মকর সংক্রান্তি হোক বা শাহি স্নান, সাগরে ডুব দিলেই পুণ্যলাভ। সেই লক্ষ্যে জনস্রোত অবিরাম বয়ে চলেছে সাগরতটে। উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যে দিয়েই মঙ্গলবার সাগরের জলে মকর সংক্রান্তির স্নান সারেন লক্ষাধিক মানুষ। এদিন ভোররাত থেকেই তীর্থযাত্রীদের স্নানপর্ব শুরু হয়। স্নান সেরে ঘরের পথে রওনা দিয়েছেন বহু মানুষ। আবার মঙ্গলবার দুপুর থেকেই শুরু হয় বিশেষ শাহি স্নান। বহু যাত্রীই এই স্নান সারতে মেলা প্রাঙ্গণে এখনও রয়েছেন।
পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের কথায়, "এ বছর ৩৫ লাখেরও বেশি তীর্থযাত্রী সাগরে ডুব দিয়েছেন, যা বিগত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। সুতারাং রেকর্ড সংখ্যক মানুষ এবছর সাগরসঙ্গমে এসেছেন।" তিনি আরও বলেন, "এখনো পর্যন্ত মেলাকে কেন্দ্র করে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। বিরাশি জন নিখোঁজ হয়েছিলেন, যাঁদের মধ্যে ৭২ জনকে তাঁদের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করানো সম্ভব হয়েছে।"
প্রাচীন পঞ্জিকা মতে সোমবার গভীর রাত থেকে মকরের স্নান শুরু হয়। চলে মঙ্গলবার বেলা ১১.৪৭ পর্যন্ত। এর পরই সাগর সঙ্গমে শুরু হয় শাহি স্নান। যা চলে রাত পর্যন্ত। মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া সেই স্নানেও হল রেকর্ড ভিড়। কয়েক লক্ষ মানুষ পুণ্যলাভের আশায় ভিড় জমান এদিনও। শেষ বেলায় পুণ্যস্নান সেরে কপিলমুনি মন্দিরে চলছে শাহি স্নানের পূজা। ভিড়ের বহর দেখে মনে হতেই পারে, মকর সংক্রান্তির স্নান এখনও চলছে। অথচ তার রেশ কেটেছে বেশ কয়েক ঘন্টা আগে। সাগর সঙ্গম, মন্দির, নাগা সাধুদের আখড়া, সর্বত্রই এদিনও ছিল উপচে পড়া ভিড়, যা দেখে সন্তুষ্ট সাধু সন্তরা। প্রবল ভিড়ের কারণে আজও জারি থাকবে সমস্ত সরকারি পরিষেবা, এমনটাই জানানো হয়েছে প্রশাসনের তরফ থেকে।
এবার সাগরমেলার কপিলমুনির মন্দির থেকে সাগরতট, পুরোটাই ঝাঁ চকচকে। বিশেষ করে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্রতটে কোথাও কোনো আবর্জনা নজরে এলো না। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্যরা সর্বক্ষণ সাফাইয়ে ব্যস্ত রয়েছেন। মাইকে তা নিয়ে প্রচার চলছে। গোটা মেলা আলোর মালায় সাজানো হয়েছে। রাস্তার উভয়দিকে জমজমাট দোকানপাট। সেখানে খাবার থেকে শুরু করে নানা রকমের পসরা সাজানো। কোনও কোনও দোকান থেকে শঙ্খ বাজিয়ে আগত তীর্থযাত্রীদের স্বাগত জানানো হচ্ছে।
সন্ধ্যায় কপিলমুনির মন্দিরে আরতি দেখার জন্য ভক্তদের ভিড় দেখা গেল। বাইরে পরপর পাকা ছোট ছোট ঘরে নাগা সাধু-সন্ন্যাসীরা ধুনি জ্বালিয়ে বসে রয়েছেন। তীর্থযাত্রীরা মন্দিরে প্রণাম সেরে আশীর্বাদ নেওয়ার জন্য দলে দলে চলে যাচ্ছেন নাগা সন্ন্যাসীদের ডেরায়।
মকর সংক্রান্তির দিন মন্দিরের দরজা খুলে দেওয়া হয়েছিল ভোর তিনটের সময়। যা অন্যান্য দিনের তুলনায় দু-তিন ঘন্টা আগে। ভীড় সামলাতে মঙ্গলবারও আগেভাগে খুলে দেওয়া হয় মন্দিরের দরজা। সোমবারের মত মঙ্গলবারও মন্দিরের সামনের প্রতিটি ড্রপ গেটে ছিল উপচে পড়া ভিড়। গঙ্গাসাগরের শাহি স্নানে মঙ্গলবার স্নান করলেন কপিলমুনি মন্দিরের মহান্ত জ্ঞান দাস, ও পুরীর শঙ্করাচার্য নিশ্চলানন্দ সরস্বতী। শাহি স্নান সেরে ফিরেও গেছেন শঙ্করাচার্য।
নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ড্রোন দিয়ে ছবি তোলা হচ্ছে। ২৪ ঘন্টা নজর রাখা হচ্ছে সিসিটিভিতে। শেষ মুহূর্তে বড় কোন দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে, তার জন্য সচেষ্ট প্রশাসন। এদিন গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, অরূপ বিশ্বাস, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও, বিধায়ক বঙ্কিম হাজরা প্রমুখ। সুব্রতবাবু বলেন, "বিভিন্ন অসামাজিক কাজের জন্য ৫০ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। আগামী বছর এই সংখ্যা শূন্যতে পৌঁছাবে।"