আর মাত্র একটা দিনের অপেক্ষা! আর তার পরই নতুন বছরের আনন্দের জোয়ারে গা ভাসাতে বেরিয়ে পড়বে উৎসব প্রিয় বাঙালি। গত দু’বছরের করোনার দাপটে চৈত্র সেল উপভোগ করতে পারেনি তামাম বাঙালি। আর এবার তাই না পাওয়া সেই আনন্দের স্বাদ চেটেপুটে নিতে রাস্তায় ভিড় করেছে কাতারে কাতারে মানুষ। জেলা শহর থেকে রাজপথ সর্বত্রই চিত্রটা মোটামুটি ভাবে একই। আর ‘হাতে লক্ষ্মী’ পেয়ে বেজায় খুশি দোকানিরাও।
ঘড়ির কাটায় ঠিক বিকেল ৫ টা। নিউমার্কেট চত্ত্বরে উপচে পড়ছে ভিড়। প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরমে গলদঘর্ম অবস্থা। তার মাঝেই ভিড় ঠেলে লাল-হলুদ কুর্তি বেঁছে নিতে কার্যত ছুট দিয়েছে বেলঘরিয়ার টিনা হালদার। কলেজ পড়ুয়া টিনার কথায়, “হাতে মাত্র আর একটা দিন। নতুন বছর বলে কথা! পছন্দের জামাটা মিস হলেই মুশকিল”। তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে দু’বছর সেলে গৃহবন্দী অবস্থায় ছিলাম। অবশেষে করোনার দাপট কমতে এবারের সেল একেবারে জমজমাটি।
পুরো পরিবারের সঙ্গে তীব্র গরম উপেক্ষা করে নতুন জামা কেনায় মত্ত টিনার মতই বছর পাঁচেকের ঈশিতা। শ্যামনগর থেকে নিউমার্কেটে বাবা মায়ের সঙ্গে এসেছে কেনা কাটা করতে। বছর দুইয়েক আগেকার সেলের সময় তার বয়স তখন সবে তিন। সেভাবে কিচ্ছু মনে নেই ঈশিতার। সে জানাল, ‘এটাই তার প্রথম সেলে ঘুরতে আসা’। মা মিলি সামনের কথায়, “মেয়েকে নিয়ে মামার বাড়ি ঘুরতে এসেছিলাম, সেলের আগে বাড়ি ফেরার পথে একবার নিউমার্কেট ঘুরে না গেলে মার্কেটিং সম্পূর্ণ হবে না”।
একই অবস্থা হাতিবাগান চত্বরেও। দোকানে বড় বড় করে লেখা সেল! আর তা দেখেই উৎসাহী চোখের ভিড় দোকানের দিকে! কি নেই! জামা থেকে জুয়েলারি, জুতো থেকে কসমেটিক সবেতেই ডিসকাউন্টের বোর্ড ঝুলছে। জামাকাপড়, পোশাকের বাজারের ভিড় মনে করিয়ে দিয়েছে দুর্গাপুজো বা ঈদের আগে শেষের সময়গুলো। চৈত্রের শেষে আসন্ন নববর্ষে নতুন জামাকাপড় পরার প্রথা চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। তবে করোনার বাড়বাড়ন্তে তাতে কিছুটা ভাটা পড়েছিল।
এবারের সেলে বেজায় খুশি ব্যবসায়ীরাও। হাতি বাগানের একটি শাড়ির দোকানের মালিকের কথায়, “পেট্রোল ডিজেলের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দাম কিছুটা চড়েছে। তবে ক্রেতাদের ভিড় যথেষ্টই চোখে পড়ছে। সন্ধ্যা নামতেই গোটা রাস্তায় কার্যত জনজোয়ার। অন্য এক দোকানি বিকাশ বর্মণের কথায়, ভিড় হচ্ছে এটা ঠিক কিন্তু সেভাবে ভিড় অনুপাতে বেচা কেনা হচ্ছে না। তাঁর কথায়, হয়ত পরিবারের একজন একটা শাড়ি বা জামা নেবেন তার সঙ্গে ভিড় করে আছেন আরও দু-পাঁচ জন।
শুধু রাস্তার ধারের দোকানে নয় শহরের শপিং মল গুলোতেও সেলের আয়োজনের কোন খামতি নেই। কোথাও ৫০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট তো কোথাও আবার একটি কিনলে আরেকটি সম্পূর্ণ ফ্রি। এর পাশাপাশি ১৫০০ টাকার কেনাকাটার ওপর কোন কোন মল দিচ্ছে আকর্ষণীয় গিফট। স্কুল, অফিস শেষের সময় অর্থাৎ দুপুরের পর থেকে সময় যত সন্ধ্যার দিকে গড়িয়েছে, ভিড় ততই বেড়েছে। সপরিবারে কেনাকাটা করতে হাতিবাগানের একটি মলে এসেছেন নিউব্যারাকপুরের বাসিন্দা নন্দিতা গোস্বামী। হাতে জামকাপড় ভর্তি চারটি ব্যাগ নিয়ে পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন তার স্বামী ও মেয়ে। তিনি জানালেন, বছরে দুইবার কেনাকাটা করেন সপরিবারে। এক দুর্গাপুজোর আগে, আর এই চৈত্র সেলের সময়।
তবে সেলে যে শুধু হরেক জামা কাপড় জুতো কিনতেই উৎসাহী মানুষের ভিড়। এমনটা নয়। অনেকেই নতুন বছরে সেজে উঠতে চান সোনার গহনায়। এক সোনার দোকানের মালিক দেবাশিষ সরকারের কথায়, এই সময় আমাদের সকল আউটলেটে সোনার গয়নার ওপরে ১৫% ডিসকাউন্ট দিচ্ছি আমরা” সেই সঙ্গে হীরের গয়নার ওপর থাকছে ফ্ল্যাট ২৫% পর্যন্ত ছাড়ের সুযোগ। তার কথায়, এমনিতেই নতুন বছরে প্রতিবার সোনার গয়না কেনায় মানুষের ঝোঁক থাকে এবারেও তার কোন ব্যতিক্রম হয়নি। তবে হ্যাঁ করোনার কারণে গত দু’বছর মানুষ সেভাবে বেড়োতে পারেননি। তাই এই বছর সেলে মানুষের মধ্যে অতিরিক্ত উৎসাহ লক্ষ্য করা গেছে”। তবে শুধু সোনার দোকানেই নয়, ঝাঁ চকচকে ইলেক্ট্রনিক মলের বাইরেও টানানো রয়েছে, সেল!
এমনিতেই গত রবিবার থেকে খাস কলকাতার বিভিন্ন মার্কেট চত্ত্বরে ভিড় উপচে পড়ছে। নিউমার্কেটের এক ব্যবসায়ীর কথায়, “করোনা নিয়ে মানুষের মনে আর কোন ভয় নেই। কাতারে কাতারে মানুষ কেনাকাটা করতে পথে নেমেছে। হাতে মাত্র আর একটা দিন। শেষ বেলায় চৈত্র সেলের ভরপুর আনন্দ নিতে পুরোদমে তৈরি মানুষজন।