অশান্তি যেন থামছেই না শান্তিনিকেতনে। এবার পড়ুয়ারদের 'ডোজ' দেওয়ার ভিডিও প্রকাশ্যে আসতেই ফের উত্তেজনা ছড়াল রবীন্দ্রনাথের হাতে গড়া বিশ্বভারতী ক্যাম্পাসে। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে দায়ের হল অভিযোগ। প্রকাশিত ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে উপাচার্য সেদিনের সমাবেশে উপস্থিত সহকর্মীদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের 'বিশেষ শিক্ষা দিতে'। ভিডিওটি শ্যুট করা হয়েছে জানুয়ারির ৭ তারিখ। বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তের সিএএ সমর্থিত সেমিনারের আগের দিনই এই ভিডিওটি তৈরি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
গোটা ঘটনাটি নিয়ে মুখ খুলতে অস্বীকার করেছেন বিশ্বভারতীর উপাচার্য। সানডে এক্সপ্রেসের তরফে তাঁর জনসংযোগ প্রতিনিধি অনির্বাণ সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও অস্বীকার করেন গোটা ঘটনাটি। তিনি স্পষ্ট বলেন, "ভিডিও ক্লিপিংস এ যে গলা শোনা গিয়েছে তা উপাচার্যের নয়। এই ভিডিওটি তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য এটা তৈরি করা হয়েছে।" প্রসঙ্গত, ৮ জানুয়ারি সিএএ সেমিনার বিরোধী প্রতিবাদের পর ১৫ জানুয়ারি দু'জন ছাত্রকে মারধর করা হয়। ঘটনায় ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে তিন জনকে।
ঠিক কী বলেছেন উপাচার্য?
ভিডিওতে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের 'মানহানি' রুখতে বেশ কয়েকজনের ছবি চাইতে দেখা যায় উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে। এরপর তাঁকে ছবি ও সেই নাম দেওয়া হলে তাঁকে বলতে শোনা যায়, "একটু ওষুধ দিয়ে দাও না"। এরপরই প্রতিউত্তুরে বলতে শোনা যায়, "আপনার সবুজ সংকেত না পেলে আমরা তো কিছু করতে পারব না।" পাশপাশি, সেমিনারে 'বাইক বাহিনী'কে আসতে নির্দেশও দিতে শোনা যায় উপাচার্যকে। স্পষ্ট শোনা যায় তিনি বলছেন, "আগামীকাল বেলা সাড়ে তিনটে নাগাদ বক্তৃতার সময় আসুন। ওঁরা ঝামেলা তৈরি করতে পারে। আপনারা বাইক বাহিনী নিয়ে আসুন।"
ভিডিওটিতে ১৫ জানুয়ারি ছাত্র নিগ্রহের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া তিনজনের মধ্যে একজন অচিন্ত্য বাগদীকে বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর সাথে সামনের সারিতে হাঁটতে দেখা যায়। এরপরই বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের পক্ষ থেকে দল নির্বিশেষেই অভিযোগ দায়ের করা হয়। বীরভূমের পুলিশ সুপার শ্যাম সিং বলেন, "আমরা একটি এফআইআর পেয়েছি, সেখানে ভিডিওটিও রয়েছে। আমরা তদন্ত শুরু করেছি।"
প্রসঙ্গত, নয়া নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-এর বিরুদ্ধে যখন রাজ্যজুড়ে জারি প্রতিবাদ, মিছিল, পাল্টা মিছিল, সেই আবহে বিশ্বভারতীতে সিএএ-এর সমর্থনে ব্যাখ্যা দিতে যান বিজেপি সাংসদ স্বপন দাশগুপ্ত। সাংসদের এই কর্মসূচির বিরুদ্ধে সরব হয়ে বিশ্বভারতী চত্বরেই বিক্ষোভ দেখায় এসএফআই। ছাত্র-বিক্ষোভের জেরে শান্তিনিকেতনে প্রায় সাত ঘন্টা আটক হন স্বপন দাশগুপ্ত, বিশ্বভারতীর উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী-সহ অন্যান্যরা। এরপর ১৫ জানুয়ারি রাতের অন্ধকারে ক্যাম্পাসে ঢুকে পড়ুয়া নিগ্রহের ভয়ঙ্কর অভিযোগ ওঠে এবিভিপির বিরুদ্ধে। অতর্কিত হানায় আহত হন বিশ্বভারতীর দুই পড়ুয়া স্বপ্ননীল মুখোপাধ্যায় এবং ফাল্গুনী পান। সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এই মারধরের ছবি ও ভিডিও।
Read the full story in English