Devi Mahishmardini: মহিষাসুর বধে উদ্যত হওয়া দেবী মহিষমর্দিনীর মূর্তি মন্দির থেকে চুরি করে নিয়ে গিয়েছিল চোর। আরাধ্য দেবীকে হারিয়ে বড়ই শোকাতুর হয়ে পড়েছিলেন পূর্ব বর্ধমানের মেমারির মহিষডাঙা গ্রামের বাসিন্দারা। বিষন্নতার আবহেই দেবী মূর্তি ছাড়াই মন্দিরে হয় দেবীর আরাধনা। এদিকে অষ্টধাতুর মূর্তিটি চুরি করেও দেবীর মাহাত্ম্যের কথা জনে সম্ভবত 'চোর বাবাজি' মূর্তিটি আর অন্যত্র পাচার করেনি। গ্রামের অদূরে একটি পুকুর পাড়ে লোকচক্ষুর আড়ালেই মূর্তিটি বসিয়ে রেখে সে চম্পট দেয়।
পরে সেই পুকুর পাড় থেকেই দেবীমূর্তি উদ্ধার করেন গ্রামবাসীরা। সেই খবর গ্রামে ছড়িয়ে পড়তেই শঙ্খ-ধ্বনি ও উলু-ধ্বনিতে ভরে যায় গোটা মহল্লা। কাঁসর-ঘণ্টা আর বাদ্যি বাজিয়ে দেবীর মূর্তি মূল মন্দিরে ফিরিয়ে নিয়ে গিয়ে ধূমধাম করে হয় পূজো-পাঠ।
দেবী মহিষমর্দিনীর নামেই মেমারির মহিষডাঙা গ্রামের পরিচিতি। গ্রামের মন্দিরেই অধিষ্ঠিতা থাকেন দেবী। নিয়ম মেনে তাঁর পুজো-পাঠও হয়। দেবীর প্রতি এই গ্রামের প্রতিটি মানুষের অগাধ ভক্তি-অসীম শ্রদ্ধা। মহিষমর্দিনী দেবীকে স্মরণ না করে এই গ্রামের কোনও মানুষ কোনও শুভকর্মে সামিল হন না। এহেন দেবীর মন্দিরে মঙ্গলবার গভীর রাতে হানা দিয়েছিল চোর।
মন্দির কমিটির সম্পাদক চিন্ময় যশ বুধবার মেমারি থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেছিলেন। পুলিশকে তিনি জানান, তাঁদের গ্রামের মহিষমর্দিনী মন্দিরের সেবায়েত বুধবার সকালে মন্দিরে গিয়ে দেখেন মন্দিরের দরজার তালা ভাঙা। সেবায়েত দেখেন মন্দিরের সিংহাসনে নেই দেবী মহিষমর্দিনীর অষ্টধাতুর মূর্তিটি। এছাড়াও পিতলের গোপাল ঠাকুরের মূর্তি এবং তার পিতলের সিংহাসনটিও মন্দিরে ছিল না। চোরেরাই মন্দির থেকে দেব-দেবীর মূর্তি ও সামগ্রী চুরি করে নিয়ে গেছে বলে চিন্ময়বাবু পুলিশকে জানান ।
এদিকে পুজোর ঠিক আগের দিন মন্দির থেকে দেবী মহিষমর্দিনীর অষ্টধাতুর মূর্তি চুরি হয়ে যাওয়ায় গ্রামের সবাই শোকাতুর হয়ে পড়েন। তবে পুজো বন্ধ ছিল না। ওই দিন দেবীর প্রতিকৃতি মন্দিরে রেখেই হয় পুজো-পাঠ। দেবীকে পুনরায় মন্দিরে ফিরে পাওয়ার জন্য গ্রামের মানুষজন প্রার্থনা করেন। অনেকে দেবীর জন্য কেঁদেও ব্যাকুল হন।
দেবীর পুজো মেটার পর ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে ঘটে যায় বিস্ময়কর ঘটনা। শুক্রবার সকালে গ্রামের অদূরে নির্জন জায়গায় থাকা পুকুর পাড়ে তাল গাছের নিচে একটি ব্যাগে ভরে রাখা অবস্থায় অষ্টধাতুর মহিষমর্দিনী মূর্তিটি উদ্ধার হয়।দেবী মূর্তি উদ্ধার হওয়ার খবর জানাজানি হতেই গ্রামের সকলে উচ্ছাসে ফেটে পড়েন। শঙ্খ-ধ্বনি ও উলু-ধ্বনির জোয়ার বয়ে যায় গোটা গ্রামে। কাঁসর ঘণ্টা ও বাদ্যি বাজিয়ে উল্লাসের সঙ্গে গ্রামের মানুষজন দেবীর মূর্তি পুকুরপাড় থেকে মন্দিরে ফিরিয়ে আনেন। পুনরায় মন্দিরে শুরু হয় দেবীর পুজো।
এদিকে, দেবী মূর্তি উদ্ধারের খবর পেয়ে মেমারি থানার পুলিশ এবং স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানও সেখানে পৌঁছোন। গ্রামবাসীদের কথা অনুযায়ী, পুলিশ মূর্তি চুরির ঘটনায় জড়িতদের ধরবার আশ্বাস দিয়েছে। পঞ্চায়েত প্রধান মন্দির সংলগ্ন জায়গায় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা ও বাতি স্তম্ভ বসানোর আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন।