/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/20/puja-2025-09-20-15-07-34.jpg)
Sarbamangala Temple: দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে এই মন্দিরে দর্শনার্থী-ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ে।
Durga Puja 2025: রাঢ়বঙ্গের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবেই তাঁর পরিচিতি। তিনি হলেন দেবী সর্বমঙ্গলা। শহর বর্ধমানে রয়েছে তাঁর প্রাচীন মন্দির। সেটি সর্বমঙ্গলা মন্দির নামেই খ্যাত। মন্দিরটিকে পূর্ব বর্ধমান জেলাবাসী শক্তিপীঠ হিসাবেই মনে করেন। শারদীয়ায় এই মন্দিরেই দেবী দুর্গা জ্ঞানে পূজিত হন দেবী সর্বমঙ্গলা। রাজ আমল এখন আর নেই। তবে পুজোর ক'টা দিন রাজকীয় ঐতিহ্য মেনেই সর্বমঙ্গলা মন্দিরে তাঁর পূজোর যাবতীয় আয়োজন করা হয়। মাছের টক সহযোগে দেবীকে দেওয়া হয় ভোগ।সঙ্গে অন্যান্য উপাচারের থালিও থাকে।
কলকাতার যেমন কালীঘাট, বীরভূমের যেমন তারাপীঠ ,উত্তর ২৪ পরগনায় যেমন দক্ষিণেশ্বর তেমনই শস্য-শ্যামলা বর্ধমানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী হলেন সর্বমঙ্গলা। শাক্ত সাধনার ক্ষেত্রে দেবী সর্বমঙ্গলা একটু আলাদা ঘরাণার বলেই পরিচিত। বহু প্রাচীন সর্বমঙ্গলা মন্দিরে অধিষ্ঠাতা দেবীকে অত্যন্ত জাগ্রত দেবী হিসেবেই মানেন বর্ধমান সহ গোটা রাঢ়বঙ্গের বাসিন্দারা। শোনা যায় সর্বমঙ্গলা মন্দিরের বয়স প্রায় ৩২৩ বছর।
মন্দিরের প্রধান পুরোহিত অরুণ ভট্টাচার্য বলেন, "১৭০২ খ্রিস্টাব্দে এই মন্দির বর্ধমানের মহারাজা কীর্তিচাঁদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মন্দিরটি নবরত্ন রীতির প্রাচীন মন্দির। মন্দিরে থাকা সর্বমঙ্গলার মূর্তিটি মন্দিরের থেকেও বেশি প্রাচীন। অনেকের মতে মূর্তিটির বয়স ১০০০ বছর, আবার কারও মতে তা ২০০০ বছরের পুরনো। ১২ ইঞ্চি দৈর্ঘ্য ও ৮ ইঞ্চি প্রস্থের কষ্টিপাথরের এই মূর্তিটি অষ্টাদশভূজা, সিংহবাহিনী মহিষামর্দিনী।"
সর্বমঙ্গলা মন্দির ঘিরে অনেক উপকথা আছে। চুনুরী বাড়ির মেয়েরা নাকি দেবীর পাষাণ প্রতিমায় গুগলি থেঁতো করতেন। মেছুনিরাই নাকি মাতৃরূপ বুঝতে পেরে তার পুজো শুরু করেন। তখন থেকেই পুজোয় মাছের টক দেওয়া শুরু হয়েছিল। স্বপ্নাদেশ মেনে বর্ধমানের তদানীন্তন মহারাজা দেবীকে এই প্রাচীন মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করেন।
রাজ অনুজ্ঞায় দেবীর পুজোর জন্য পুরোহিতরাও নিযুক্ত হন। বর্ধমানের রাজারা জন্মসূত্রে ছিলেন পাঞ্জাবী। তবে রাজ পরিবারের বধূ হয়ে নানা রাজ্যের মেয়েরা এসেছেন। সেই কারণে পুজো থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে নানা সংস্কৃতি, লোকাচারের মিশেল হয়েছে। সঙ্গে মিশেছে বাংলার চিরায়ত সংস্কৃতি।
শারদীয়ায় দেবী দুর্গাকে সর্বমঙ্গলা রূপে পুজো করা হয় বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরে। সেখানেই সারা বছর তিনি থাকেন। মহালয়ার পরদিন সকালে ঘটোত্তলনের মধ্য দিয়ে সর্বমঙ্গলা মন্দিরে দুর্গাপুজো শুরু হয়। প্রথা মেনে প্রতিপদে সর্বমঙ্গলা মন্দিরে ঘট স্থাপন হতেই পুজোর ঢাকে কাঠি পড়ে যায় বর্ধমানে। রীতি মেনে প্রতিপদের দিন বর্ধমানের রাজাদের খনন করা কৃষ্ণসায়র থেকে জল ভরা হয় ঘটে। প্রথা অনুযায়ী, সেই ঘট সর্বমঙ্গলা মায়ের মন্দিরে স্থাপন করা হয়। দেবীকে সেদিন পরানো হয় রাজবেশ।
পুজোর চারদিন ষোড়শোপচারে দেবীর আরাধনা হয় সর্বমঙ্গলা মন্দিরে। আগে মহিষ ও পাঁঠা বলি হত। এখন বলিপ্রথা বন্ধ হয়েছে। আগে সন্ধিপুজোর মহালগ্নে কামান দাগা হত। কিন্তু ১৯৯৭ সালে ভয়াবহ বিস্ফোরণের দু’জন মারা যান। তারপর থেকে কামান দাগার প্রথাও বন্ধ হয়ে যায়। নবমীতে কয়েক হাজার মানুষকে ভোগ বিলি করা হয়। পুজোর দিনগুলোতে প্রতিদিনই সর্বমঙ্গলা মন্দিরে কয়েক হাজার ভক্তদের সমাগম হয়।
'আমাদের সবচেয়ে বড় শত্রু'.....! কাকে নিশানা প্রধানমন্ত্রী মোদীর?
নবমীর দিন ৯ জন কুমারীকে দেবী দুর্গার নয় রূপে পুজো করা হয় বর্ধমানের সর্বমঙ্গলা মন্দিরে। এখানে নাবালিকাদের দেবী দুর্গার বিভিন্ন রূপে পুজো করাই নিয়ম। দেবী এখানে অষ্টাদশভুজা। বয়সের প্রকারভেদ অনুসারে উমা, মালিনী, সুভাগা, কুজ্জ্বিকা,কালসন্দর্ভা সহ দেবীর নয়টি রূপের কুমারী পুজো করার রীতি এখানে মানা হয়।
Kolkata Metro: পুজোর আগেই যাত্রী স্বার্থে দুরন্ত উদ্যোগ কলকাতা মেট্রোর! মহালয়ায় বাম্পার পরিষেবা
রাজ আমল এখন আর নেই। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হবার পর বর্ধমানের সর্বশেষ মহারাজা উদয়চাঁদ মাহতাব দেবী সর্বমঙ্গলার পুজো পাঠ ও মন্দির পরিচালনার জন্য ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেন। সেই ট্রাস্টি বোর্ডের হাতেই তিনি মন্দির পরিচালনার যাবতীয় দায়িত্ব ভার তুলে দেন
। এখন এই বোর্ডে প্রশাসনিক আধিকারিকরাও আছেন।