বর্ধমান রাজ পরিবারের ইতিহাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সোনার কালীবাড়ি। ১৮৯৯ সালে এই সোনার কালীবাড়ি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বর্ধমানের রাজা মহতাব চাঁদ। রাজার স্ত্রী রানি নারায়ণী দেবী ছিলেন অত্যন্ত ধার্মিক। কথিত আছে, ধর্মপ্রাণ স্ত্রীর মন জোগাতেই রাজা মহতাব চাঁদ রাজবাড়ির মিঠাপুকুর এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ‘ভুবনেশ্বরী মন্দির’। পরবর্তীতে এই মন্দিরেরই নামকরণ হয় সোনার কালীবাড়ি।
Advertisment
প্রথমে এখানকার কালীমূর্তিটি সোনারই ছিল। সত্তরের দশকে সেই মূর্তি চুরি যায়। পরবর্তীতে স্থানীয় বাসিন্দারা সেখানে দেবী কালীর মূর্তি স্থাপন করেন। এই মন্দিরের বিশেষত্ব হল, দেবীর পায়ের কাছে রাখা এক শঙ্খ। যার শব্দে মুখরিত হয় গোটা কালীবাড়ির সন্ধ্যা আরতি। এই শঙ্খের আয়তন তাক লাগানোর মত। প্রায় একহাত লম্বা। কথিত আছে, মহারানি নারায়ণী দেবী সমুদ্রতট থেকে এই শঙ্খ সংগ্রহ করেছিলেন। অনেকে আবার বলেন যে মহারাজ মহতাব চাঁদ শখ করে ইতালি থেকে অর্ডার দিয়ে এই শঙ্খ আনিয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এমন সুবিশাল শঙ্খ ভূ-ভারতে খুব বেশি মেলে না। এখানে দেবীমূর্তিতেও রয়েছে বিশেষত্ব। অন্যান্য কালীমূর্তির মত এখানে দেবী কালী বাইরে জিহ্বা বের করে রাখেন না। তাঁর পায়ের নীচে মহাদেব নেই। দেবীর এই ভিন্নরূপ প্রতি কালীপুজোতেই বুঝিয়ে দেয় বর্ধমান রাজ পরিবারের সোনার কালীমন্দিরের আকর্ষণই আলাদা।
তবে, বিশেষত্ব বোধহয় এখানেই শেষ নয়। এই মন্দিরের প্রবেশপথের উঠোনে দুটো বড় আকারের পাতকুয়ো আছে। যা খরা এবং জলাভাবেও কখনও শুকোয় না। আজও এই মন্দিরের সমস্ত কাজকর্ম এই দুই কূপের জলের সাহায্যেই হয়ে থাকে। শ্বেতপাথরের স্ফটিকের এই মন্দিরের দেওয়ালে বাহারি কারুকাজ আর নকশা খোদাই করা।
প্রবেশ পথে দেখা মিলবে বহু প্রাচীন এক নহবতখানার। ইতিহাসবিদদের মতে, রাজা মহতাব চাঁদ ছিলেন অত্যন্ত আড়ম্বরপ্রিয়। ফলে নিত্যদিন জলসা বসত। যেখানে থাকত নানা ধরনের বাজনা। প্রাচীন তুরহী’, ‘করনা’র সঙ্গে ‘নরসিংঘা’(শিঙা)-র শব্দ তৈরি করত এক অন্য মাধুর্য।
বর্তমানে এই মন্দিরের পুরোহিত মানস মিশ্র। তিনি বলেন, 'এখানে প্রতিদিনই ভক্তরা আসেন। নিত্যপুজো হয়, সন্ধ্যা আরতি হয়, ভোগ বিতরণ হয়। কার্তিক অমাবস্যার কালীপুজোয় এখানে খিচুড়ি ভোগের সঙ্গে থাকে মাছের টকও। পশুবলি বন্ধ। বদলে হয় চালকুমড়ো বলি। পুজোর বাকি সবটাই চলে নিয়ম মেনে।'