শীতের মরশুম মানেই চারিদিকে বনভোজনের ঘনঘটা। কিন্তু বাড়ির সবাই বনভোজনে বেড়িয়ে গেলে বাড়িতে থাকা আরাধ্য দেবতা গোপাল ঠাকুরের মন খারাপ হবে। একথা ভেবেই গোপালকে একা ফেলে রেখে বাইরে বনভোজনে যাওয়ার ইচ্ছা ছেড়েছিল শহর বর্ধমানের লাকুড্ডির সাহা পরিবার। এরপর নজিরবিহীনভাবে গোপাল ঠাকুরকে সঙ্গে নিয়েই বনভোজনে মাতোয়ারা হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবারটি
। যে বনভোজন "গোপালের বনভোজন মহোৎসব" নামেই এখন খ্যাত। তবে এখন আর শুধু সাহা পরিবারই নয়, দূর-দূরান্তে থাকা গোপাল ঠাকুরের অনেক ভক্ত তাঁদের বাড়ির আরাধ্য দেবতা গোপালকে সঙ্গে নিয়ে এই বনভোজন মহোৎসবে সামিল হন।
বর্ধমান শহরের লাকুড্ডি জলকর পাড়ায় সাহা পরিবারের বসবাস। পরিবারের প্রবীণ কর্তা তপন সাহা জানান, বাড়ির আরাধ্য দেবতা গোপাল ঠাকুরকে বাড়িতে একা ফেলে রেখে কোথাও বনভোজনে যাওয়ার কথা তাঁরা ভাবতেই পারেন না। তাঁরা তাই বাড়ির গোপাল ঠাকুরকে সঙ্গে নিয়েই বনভোজনের আয়োজন করে থাকেন। প্রতি বছর ইংরেজি ডিসেম্বর মাসের শেষ রবিবার গোপালের বনভোজন মহোৎসবের আয়োজন করা হয়। মাঝে দু'টো বছর কোভিড অতিমারির জেরে গোপালের বনভোজন মহোৎসবের আয়োজনে ছেদ পড়ে। এবছর গোপালের বনভোজন মহোৎসব ১৩ বছরে পড়ল। অন্যান্য বছরের মতো এবছরও শতাধিক ভক্ত তাঁদের বাড়ির আরাধ্য দেবতা গোপালকে সঙ্গে নিয়ে গোপালের বনভোজন মহোৎসবে যোগ দিয়েছেন।
গোপালের বনভোজন মহোৎসবে সামিল স্থানীয় বাসিন্দারাও।
ঠিক কী ভাবনা থেকে এমন জাঁকজমকপূর্ণ "গোপালের বনভোজন মহোৎসব" আয়োজনের শুরু
? এর উত্তরে সাহা পরিবারের মেয়ে সম্বৃদ্ধা সাহা বলেন, “আমাদের পরিবারের সবাই শ্রীকৃষ্ণ অর্থাৎ গোপাল ঠাকুরের একনিষ্ঠ ভক্ত। গোপালই আমাদের পরিবারের আরাধ্য দেবতা। সেই গোপাল
কে বাদ দিয়ে কোথাও যাওয়া বা কিছু করার কথা আমরা ভাবতেই পারি না। তেমনই গোপাল ঠাকুরকে বাড়ির সিংহাসনে একা বসিয়ে রেখে কোথাও বনভোজনে যাওয়ার কথাও আমরা ভাবতে পারি না। গোপালকে বাড়িতে একা ফেলে রেখে আমরা কোথাও বনভোজনে গেলে বাৎসল্য রসের ঠাকুর গোপালের মন খারাপ হবে বলেই আমরা মনে করি। তাই গোপাল ঠাকুরের যাতে মন খারাপ না হয়, তাই আমরা গোপাল ভক্তরা নিজের নিজের বাড়ির ঠাকুরকে সঙ্গে নিয়েই শীতে বনভোজনে সামিল হই। আমাদের এই বনভোজন "গোপালের বনভোজন মহোৎসব" নামেই খ্যাত।"
গোপালের বনভোজন মহোৎসবের মহাভোগ।
শীত পড়তেই ২৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু করে ইংরেজি নববর্ষ শুরুর দিনে বনভোজনে মাতোয়ারা হন বহু
মানুষ। সেই সব বনভোজনে ডিজে বাজিয়ে গানের তালে নাচের পাশাপাশি লোভনীয় নানা পদের খাবার থাকে। তবে এই "গোপালের বনভোজন মহোৎসবে" এসবের বালাই নেই।
আরও পড়ুন- আজ কল্পতরু উৎসব, ভক্তদের উপচে পড়া ভিড় দক্ষিণেশ্বরে, নয়া সাজে মা ভবতারিণী
সাহা পরিবারের অপর কন্যা সীমা সাহা বলেন, “গোপালের বনভোজন মহোৎসবে মাইকে গান বাজনা হয় ঠিকই। তবে তাতে শোনা যায় গোপালের নাম সংকীর্তন ও পুজো পাঠ। আর গোপাল এবং গোপালের ভক্তদের খাবারে মাছ, মাংস বা সুরার কোনও স্থান নেই। বনভোজন মহোৎসবে গোপালের অন্নভোগের মেনুতে থাকে লাবড়া, বিভিন্ন ভাজাভুজি, কচু শাকের তরকারি ও মোচার তরকারি। ভক্তদের জন্য খিচুড়ি রান্না করা হয়।"