ময়নাতদন্তর পর গরুমারা জাতীয় উদ্যানের খড়্গ কাটা গণ্ডারের দেহে পাওয়া গেল না গুলির চিহ্ন। তবে কি বিষপ্রয়োগ করে খুন করা হয়েছে গণ্ডারটিকে? তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বন কর্তারা। অন্যদিকে জাতীয় উদ্যানে রাতে সন্দেহজনক কার্যকলাপ দেখলেই গুলি চালানোর, অর্থাৎ 'শুট অ্যাট সাইটের' দাবী তুলেছেন স্থানীয় পরিবেশকর্মীরা।
গরুমারা জাতীয় উদ্যানের গড়াতি এলাকায় গত মঙ্গলবার টহলদারির সময় উদ্ধার হয় খড়্গ কাটা অবস্থায় একটি পুরুষ গণ্ডারের মৃতদেহ। দেহ উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার ও বনকর্তারা। শুরু হয় ময়নাতদন্ত।
আরো পড়ুন: গরুমারায় খড়্গবিহীন গণ্ডারের মৃতদেহ, আশঙ্কা পোচিংয়ের
ময়নাতদন্ত শেষে দেহে কোনো গুলির চিহ্ন না মেলায় বনাধিকারিক ও তদন্তকারীদের প্রাথমিক সন্দেহ, বিষপ্রয়োগ করে মারা হয়েছে বিশালদেহী এই পুরুষ গণ্ডারটিকে। ভিসেরা (অভ্যন্তরীণ অঙ্গ) পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয় কলকাতায়। এরপর বক্সা ও জলদাপাড়া থেকে তদন্তের জন্য আনা হয় রানী ও করিম নামে বনদপ্তরের দুই স্নিফার ডগকে।
উল্লেখ্য, এর আগে গরুমারায় ২০১৪ ও ২০১৭ সালে দুটি পৃথক ঘটনায় তিনটি গণ্ডার পোচিংয়ের ঘটনা সামনে এসেছিলো। ২০১৭ সালে পোচিং কাণ্ডের তদন্তে নেমে সিআইডির বিশেষ দল আসাম থেকে লিংডং মোয়াং নামে এক শার্প শুটারকে গ্রেফতার করে আনে। সিআইডি সূত্রে জানা গিয়েছিল, লিংডং সহ চারজনের দল এসে এই এলাকা পরিদর্শন করে দুটি গণ্ডারের খড়গ কেটে নিয়ে পালিয়ে যায়, কিন্তু আসামে দুর্ঘটনায় পড়ে তাদের গাড়ি। দলের তিনজন ঘটনাস্থলেই মারা যায়। লিংডংকে নিয়ে যাওয়া হয় আসামের হাসপাতালে। গাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয় খড়্গ।
বর্তমান ঘটনার তদন্তে নেমে জলপাইগুড়ি জেলা পুলিশ বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। জেলার বাছাই করা পুলিশ অফিসারদের নিয়ে তৈরী করা হয়েছে বিশেষ টিম। এলাকা জুড়ে নাকাবন্দী করে শুরু হয়েছে তল্লাশি। পাশাপাশি সোর্স লাগিয়ে শুরু হয়েছে তথ্য সংগ্রহের কাজ।
আরো পড়ুন: কোচবিহারের পাতালখোয়ায় গণ্ডার ফিরছে
গণ্ডার হত্যা কাণ্ডে আজ দুপুরে গরুমারা গেটের সামনে বিক্ষোভ দেখান পরিবেশকর্মীরা। এরপরে তাঁরা গরুমারার রেঞ্জ অফিসে রেঞ্জারের সাথে দেখা করেন। পরিবেশকর্মী শ্যামাপ্রসাদ পাণ্ডে জানান, "আমরা চোরাপথে জঙ্গলে লোক ঢোকার তীব্র বিরোধিতা করেছি। পাশাপাশি নেপাল ও আসামের ধাঁচে গরুমারা ও জলদাপাড়ায় রাতে লোক দেখলেই শুট অ্যাট সাইটের দাবী জানিয়েছি।"
অপরদিকে গরুমারা সংলগ্ন এলাকা থেকে রাতভর তল্লাশি চালিয়ে বনদপ্তর গ্রেফতার করে হরেন রায়, গোপিনাথ রায় ও বাবুরাম রাই নামে তিন ডুয়ার্সের বাসিন্দাকে। ধৃতদের আজ জলপাইগুড়ি আদালতে তোলা হলে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের আদেশ দেয় আদালত। ধৃতরা শিকার সহ অন্যান্য অসামাজিক কাজকর্মের সাথে যুক্ত বলে বনদপ্তর সূত্রে প্রকাশ।
বনদপ্তরের অনারারি ওয়াইল্ডলাইফ ওয়ার্ডেন সীমা চৌধুরী জানিয়েছেন, "ময়নাতদন্তে দেহে গুলির চিহ্ন পাওয়া যায় নি। ভিসেরা ফরেনসিক তদন্তে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে।"