/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/08/img-20250908-wa0013-2025-09-08-19-50-32.jpg)
উত্তাল গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়
দ্বিতীয় সেমিস্টারের দ্বিগুণ ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে মেন গেট বন্ধ করে আন্দোলনে নামলো গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাংশ পড়ুয়ারা। আর এই প্রতিবাদ আন্দোলনের সময় একদল বহিরাগতদের হামলা চালানোর অভিযোগ তুলেছেন বিক্ষোভকারীরা। সোমবার দুপুর থেকেই দফায় দফায় এই গোলমালের ঘটনায় রীতিমতো রণক্ষেত্রের চেহারা নেই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর।
আন্দোলনকারী পড়ুয়াদের অভিযোগ, দ্বিতীয় সেমিস্টারে দ্বিগুণ ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার সময় একদল বহিরাগতরা ধাক্কা মেরে মেন গেট খুলে তাদের ওপর হামলা চালায়। আর এতে বেশ কিছু বিক্ষোভকারী পড়ুয়ারা জখম হয়েছেন। কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় মালদা মেডিকেল কলেজে।
যদিও এদিন এই ঘটনার পর বহিরাগত হামলাকালীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে এবং ভর্তির ফি কমানোর দাবিতে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধে করেন দ্বিতীয় সেমিস্টারের অধিকাংশ পড়ুয়ারা। ঘটনার খবর পেয়ে তদন্তে আসে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ। দীর্ঘক্ষণ ধরে সংশ্লিষ্ট এলাকা জাতীয় সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে থাকে। পরে পুলিশি হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।
বিক্ষোভকারী দ্বিতীয় সেমিস্টার পড়ুয়াদের অভিযোগ, গত শনিবার আচমকায় দ্বিতীয় সেমিস্টারে ভর্তির ফি দ্বিগুণ করে দেওয়ার একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। আর তারপরে সোমবার এর প্রতিবাদেই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন গেটে বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছিল। সেই সময় আচমকায় এক দল বহিরাগতেরা ধাক্কা মেরে মেন গেট খুলে তাদের ওপর হামলা চালায়।
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত শনিবার থেকে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দ্বিতীয় সেমিস্টারে ভর্তির ফি বৃদ্ধির বিষয়ে একটি নোটিশ জারি করা হয়। আর রবিবারের পর সোমবার এই ফি বৃদ্ধি দ্বিগুণ করার প্রতিবাদ জানিয়ে রীতিমতো ময়দানে নামে দ্বিতীয় সেমিস্টারের কলা বিভাগ ও বিজ্ঞান বিভাগের এক ঝাঁক ছাত্র-ছাত্রীরা। এদিন সকাল থেকেই গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন গেটের ভিতর থেকে বন্ধ করে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় নি। ফলে ঘন্টার পর ঘন্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মেন গেটের বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় অধ্যাপক , অধ্যাপিকা থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগের ছাত্রছাত্রী এবং স্থায়ী ও অস্থায়ী কর্মীদের।
এদিন দ্বিতীয় সেমিস্টারের মুলতান আহমেদ, বৈশালী কুন্ডু তৃপ্তি পালদের অভিযোগ, ২০২৩-২০২৪ শিক্ষাবর্ষে কলা বিভাগে ভর্তি ফি ছিল ২,৩০০ টাকা। কিন্তু সেটা এখন বাড়িয়ে করা হয়েছে ৪,৮২০ টাকা। একই রকম ভাবে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি ফি ছিল ৩,৭২০ টাকা । কিন্তু এখন তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬,৮২০ টাকা। দুমাস আগে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্টার বিশ্বজিৎ দাস তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ভর্তি ফি বাড়ানো হবে না। কিন্তু হঠাৎ দুদিন আগে নোটিশ জারি করে এই ভর্তি ফি বাড়ানোর কথা জানানো হয়েছে। তারই প্রতিবাদে তাদের আন্দোলন।
বিক্ষোভকারী দ্বিতীয় সেমিস্টারের পড়ুয়াদের অভিযোগ, শান্তিপূর্ণভাবে আমরা প্রতিবাদ, আন্দোলন করছিলাম। কিন্তু তৃণমূল ছাত্র পরিষদের একাংশ বহিরাগতরা গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় এসে ধাক্কা মেরে গেট খুলে আমাদের ওপর হামলা চালায়। কয়েকজন পড়ুয়া জখম হয়। অবিলম্বে ভর্তি ফি কমাতে হবে এবং এদিনের হামলাকারীদের চিহ্নিত করে পুলিশকে ধরাতে হবে, এমনই দাবি জানানো হয়েছে।
যদিও এপ্রসঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি প্রসূন রায় বলেন, দ্বিতীয় সেমিস্টারের প্রায় ১০০০-এর কাছাকাছি পড়ুয়া রয়েছে। যাদের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ জন পড়ুয়া ইচ্ছাকৃতভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা প্রথম থেকেই ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। কিন্তু এভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেনগেট বন্ধ করে কাউকে ঢুকতে না দিয়ে আন্দোলন করাকে কখনো সমর্থন করি না। এদিন দূরদূরান্ত থেকে অনেক ছাত্রছাত্রীরা এসেছিল। তারা ঢুকতে পারছিলেন না। হয়তো পরেই তারা অসন্তুষ্ট হয়ে জোর করে গেট খুলে ঢুকে পড়ে। এখন ভিত্তিহীনভাবে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নামে অভিযোগ তোলা হচ্ছে।
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনের ডিন ও ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক দেবব্রত দেবনাথ বলেন , ফি বৃদ্ধির বিষয়টি নিয়ে আমরা প্রথম থেকেই ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়েছি। ওদের এবিষয়ে আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। যেহেতু এই বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে উপাচার্য নেই। ফলে বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে উচ্চ শিক্ষা দপ্তরের অধীনে রয়েছে। এদিন বিক্ষোভের মধ্যে গেট বন্ধ থাকায় আমরা কেউই প্রবেশ করতে পারি নি। সেই পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কি ঘটেছে, তাও বলতে পারব না। তবে এই ফি বৃদ্ধির পুরো বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।