Gourbanga University Vice-Chancellor Rajat Kishore Dey Removed: লোকসভা নির্বাচনের মুখে বিধিভঙ্গের অভিযোগে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রজত কিশোর দেকে অপসারিত করার নির্দেশ রাজ্যপালের। রবিবার রাতেই গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আচার্য তথা পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল সি বি আনন্দ চিঠি পাঠিয়েই এই নির্দেশ osv। সোমবার বিষয়টি জানাজানি হতেই গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র সংগঠন থেকে শুরু করে অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ছড়িয়েছে।
তৃণমূল পরিচালিত সংশ্লিষ্ট ছাত্র ও শিক্ষা সংগঠনের একাংশ কর্মকর্তারা রাজ্যপালের এই ভূমিকা নিয়েও ধিক্কার জানিয়েছেন। নির্বাচন চলাকালীন বিধি বঙ্গের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এরকম পদক্ষেপ নেওয়া যায় কিনা সে ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলে দিয়েছে ওয়েবকুপার কর্মকর্তারা।
তৃণমূল পরিচালিত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার রাজ্যের সহ-সভাপতি তথা বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. মনিশংকর মন্ডল জানিয়েছেন, সম্প্রতি তৃণমূলের অধ্যাপক ও অধ্যাপিকাদের এই সংগঠনের কনভেনশনকে ঘিরেই নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছিল। যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কোনরকম নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করা হয় নি। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠটুকু ব্যবহার করা হয়েছিল। তাও আচার্য তথা রাজ্যপাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসি কমিটির নির্দেশ মেনে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের পোর্টালেও এই সম্মেলন করার জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন ওয়েবকুপার কনভেনশনের অজুহাত দেখিয়েই গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অপসারিত করা হল। এই ঘটনায় আমরা রাজ্যপালের ভূমিকায় ধিক্কার জানাচ্ছি।
গত শনিবার (৩০ মার্চ) তৃণমূল পরিচালিত অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার একদিনের কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয় গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৭০০ জন প্রতিনিধি সামিল নিয়েছিলেন। আর এই ঘটনায় নির্বাচন বৃদ্ধি ভঙ্গের অভিযোগ তুলেছিল কংগ্রেস ও বিজেপি। তারপরেই সরিয়ে দেওয়া হল গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রজত কিশোর দে'কে। যদিও উপাচার্যের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয় নি।
গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় সুত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সাল থেকে শুরু হওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনো পর্যন্ত মোট সাতজন উপাচার্যর বদলি হলো। যার মধ্যে প্রথম থেকে রয়েছেন উপাচার্য গোপা দত্ত, এরপর অচিন্ত্য বিশ্বাস, গোপাল মিশ্র, স্বাগত সেন, চঞ্চল চৌধুরী , শান্তি ছেত্রী এবং পরবর্তীতে রজত কিশোর দে। গত ১৬ বছরের ব্যবধানে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের এখনো পর্যন্ত মোট সাতজন উপাচার্যের বদলি হলো। যদিও এব্যাপারে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে কোনরকম প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি । উপাচার্য অপসারিত হওয়ার পর নতুনভাবে সেই জায়গায় কাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে তা নিয়েও চলছে বিভিন্ন মহলে গুঞ্জন।
কিন্তু, শেষপর্যন্ত গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রজত কিশোর দে'র অপসারণ স্থগিতাদেশের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সোমবার বিকেলে সাংবাদিকদের সামনে খোলামেলা আলোচনায় গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রজত কিশোর দে বলেন, 'রবিবার রাতে আমি রাজ্যপাল তথা আচার্যের কাছ থেকে অপসারণের নোটিস পেয়ে নিজেকে অপমানিত বোধ করছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় মাঠে ওয়েবকুপার যে সম্মেলনটা হয়েছিল, তাতে আমি ছিলাম না। এ ব্যাপারে কিছু জানতামও না। কিন্তু হঠাৎ করে একটা ষড়যন্ত্র কাজ করল এবং আচমকাই আমাকে এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারিত করা হলো। কিন্তু এরপর সোমবার দুপুরে রাজ্য সরকার পুনরায় আমাকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদে বহাল থাকার নির্দেশ দিয়েছে। এতে আমি খুশি প্রকাশ করছি।'
উপাচার্য রজত কিশোর দে আরও বলেন, 'রাজ্যপালের ভূমিকাতে মনে হচ্ছে যেন ওনাকে কেউ পরিচালনা করছে । ওয়েবকুপার সম্মেলন হয়েছিল শনিবার । সেখানে কি হয়েছিল, তাদের অনুমতি কি ছিল সেটাও বলতে পারবো না। এখানে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ভূমিকা নেই। তা সত্ত্বেও আমার বিরুদ্ধ একটা চক্রান্ত করা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য প্রশাসন সেই বিষয়টি তদারকি করেই আমাকে পুনরায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদে বহাল থাকার নির্দেশ দিয়েছে।'