Maldah-Murshidabad: মালদা, মুর্শিদাবাদের মত বাংলা-বিহারের পাঁচ জেলাকে নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের যে দাবি সংসদে নিশিকান্ত দুবে তুলেছেন, তাকে সমর্থন করলেন মুর্শিদাবাদের বিজেপি বিধায়ক। বৃহস্পতিবারই ঝাড়খণ্ডের গোড্ডার সাংসদ নিশিকান্ত দুবে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, মালদা-মুর্শিদাবাদের সঙ্গে বিহারের কিষাণগঞ্জ, আরারিয়া, কাটিহারকে নিয়ে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হোক। সংসদে নিশিকান্ত দুবে বলেছিলেন, 'আমাদের পাকুড় জেলার তারানগর ও দরগাপাড়ায় গোষ্ঠীসংঘর্ষ হয়েছে। কারণ, বাংলার মালদা, মুর্শিদাবাদ থেকে লোকজন এসে আমাদের লোকজনকে তাড়িয়ে দিচ্ছেন। গ্রামের পর গ্রাম হিন্দুশূন্য হয়ে যাচ্ছে। এটা অত্যন্ত গুরুতর ব্যাপার। মাননীয় স্পিকার মহাশয়ের কাছে আমার আবেদন, গোটা মালদা, মুর্শিদাবাদ, আরারিয়া, কিষাণগঞ্জ, কাটিহারে মুসলমানদের জনসংখ্যা দিনকে দিন বাড়ছে। তাই সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ করা উচিত। আমার আবেদন- মালদা, মুর্শিদাবাদ, কিষাণগঞ্জ, আরারিয়া, কাটিহারকে নিয়ে পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হোক। সেখানে এনআরসি লাগু করা হোক। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা না হলে, হিন্দুদের অস্তিত্বই থাকবে না।'
Advertisment
গৌরীশংকর ঘোষ বলেছেন
মুর্শিদাবাদের বিজেপি বিধায়ক গৌরীশংকর ঘোষ বলেছেন, 'পার্লামেন্টে সাংসদ নিশিকান্ত দুবে দাবি জানিয়েছেন, ঝাড়খণ্ড, বিহার এবং পশ্চিমবঙ্গের কিছু অঞ্চলকে নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি করা হোক। আমি আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে এই আবেদন জানিয়েছিলাম। আমি বলেছিলাম যে মুর্শিদাবাদ এবং মালদায় যেভাবে অনুপ্রবেশ ঘটছে, তাতে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তারা আমাদের দেশকে ফের ভাগ করতে চায়। সেই শক্তি বাংলাদেশ হয়ে ভারতে মুর্শিদাবাদ এবং মালদায় প্রবেশ করছে। সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রশাসন একেবারে নির্বিকার। প্রশাসন দলদাসের মত কাজ করছে। যে রাজনৈতিক দল বাংলায় রয়েছে, তার মূল লক্ষ্য হল যে কোনওভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকা। দেশের নিরাপত্তার কথা তারা ভাবে না। এখন দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে যদি মুর্শিদাবাদ, মালদা, ঝাড়খণ্ড এবং বিহারের অংশ নিয়ে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল করা যায়, তাহলে দেশের নিরাপত্তা সুরক্ষিত থাকবে। মুর্শিদাবাদ জেলা বাঁচবে। মালদা জেলা বাঁচবে।' গৌরীশংকর ঘোষ জানিয়েছেন, তিনি ২০২২ সালে কেন্দ্রীয় সরকারকে এই ইস্যুতে চিঠি দিয়েছিলেন।
দুবের মন্তব্যের প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিজেপির মুখ্য সচেতক শংকর ঘোষ বলেন, 'যাঁরা বিরোধিতা করছেন, তাঁদের অনেকেই পশ্চিমবঙ্গকে পশ্চিম বাংলাদেশ হিসেবে দেখতে চান। আমি তাই তাঁদের সমালোচনায় কান দিতে রাজি নই। আমরা বারবার করে বলছি যে অনুপ্রবেশের কারণে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলোর জনবিন্যাসের পরিবর্তন ঘটছে। আমাদের অসমের মুখ্যমন্ত্রীও একই কথা বলেছেন। তবে, কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল গঠনের ব্যাপারটি ব্যক্তিগত মত। ভারতীয় জনতা পার্টির শীর্ষ নেতৃত্ব এই কথা এখনও বলেননি।'
Advertisment
Nishikant Dubey-Himanta Biswa Sarma-Suvendu Adhikari: বামদিক থেকে নিশিকান্ত দুবে, হিমন্ত বিশ্বশর্মা ও শুভেন্দু অধিকারী। (ছবি- স্ক্রিনগ্যাব)
এর আগে গত ১৭ জুলাই বিজেপি নেতা তথা অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেছিলেন, 'আমি অসম থেকে এসেছি। এটা আমার কাছে একটা বড় ব্যাপার। আমার অসমে মুসলিম জনসংখ্যা ৪০% হয়ে গিয়েছে। ১৯৫১ সালে তা ছিল ১২%। আমাদের বহু জেলা হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে। এটা আমার কাছে কোনও রাজনৈতিক ইস্যু নয়। আমার কাছে এটা জীবন-মরণের ব্যাপার।' এরপরই ১৮ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, 'যাঁরা অনুপ্রবেশ করে ঢুকছেন, তাঁরা তো হিন্দুদের জায়গা নিয়ে নিচ্ছেন। মুসলিমদের জায়গাও নিয়ে নিচ্ছেন। তাঁরা তো হিন্দুদের রেশনে ভাগ বসাচ্ছেন। মুসলিমের রেশনেও ভাগ বসাচ্ছেন। হিমন্ত বিশ্বশর্মার বক্তব্যকে আমি পূর্ণ সমর্থন করি।'
অনুপ্রবেশ ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সমালোচনা করে শুভেন্দু অধিকারী বলেছিলেন, 'বাংলাদেশ সীমান্তে ৭২টি জায়গায় বিএসএফকে কাঁটাতারের বেড়া লাগানোর জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জায়গা দেননি।' তিনি বোঝাতে চেয়েছিলেন, এভাবে আসলে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সরকার অনুপ্রবেশকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। পালটা, দুবে তথা বিজেপি নেতাদের অনুপ্রবেশ ইস্যুতে অভিযোগকে তীব্রভাষায় আক্রমণ করেছেন দমদম লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ সৌগত রায়। তিনি বিজেপি নেতাদের তীব্র সমালোচনা করে বলেছেন, 'বিজেপি কিছু করতে পারছে না। মমতা ব্যানার্জিকে হারাতে পারছে না। তাই এসব বলছে। এগুলো জঘন্য কথা। নিশিকান্ত দুবে যা বলছে, সেটা সাম্প্রদায়িক কথা। এ তো দেশে আরেকটা পাকিস্তান হয়ে যাবে। আমরা সর্বশক্তি দিয়ে এর বিরোধিতা করব। এটা বাংলাকে ভাগ করার চক্রান্ত। আমরা কোনওদিন এটা হতে দেব ন।'