হিংসা-বিধ্বস্ত ভাঙড় পরিদর্শনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন জমার শেষ দিনে রক্তস্নান দেখেছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার এই এলাকা। বৃহস্পতিবার এই ভাঙড়েই তিন জনকে খুন করা হয় বলে দাবি। গোটা ভাঙড় গত কয়েকদিন ধরে কার্যত দুষ্কৃতীদের বধ্যভূমিতে পরিণত। পুলিশ যেন থেকেও নেই। বৃহস্পতিবার পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন জমার শেষ দিনে তুমুল অশান্তি চলে ভাঙড়ে।
নৈরাজ্যের ভাঙড় পরিদর্শনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। গতকাল ভাঙড়ের কাঁঠালিয়ার বিজয়গঞ্জ বাজারে তুমুল উত্তেজনা ছড়ায়। একের পর এক গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। মুহুর্মুহু পড়ে বোমা, চলে গুলি। ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি। এদিন ভাঙড়ে ঢুকে বিজয়গঞ্জ বাজারে এসে গাড়ি থেকে নামেন রাজ্য়পাল। ঘুরে দেখেন এলাকা। কথা বলেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ আধিকারিকদের সঙ্গে। রাজ্যপালকে দেখেই এগিয়ে যান স্থানীয়রা। এরই মধ্যে কয়েকজন আইএসএফ প্রার্থী কথা বলেন রাজ্যপালের সঙ্গে। ভয় দেখিয়ে-পথ আটকে তাঁদের মনোনয়ন জমা দিতে দেওয়া হয়নি, রাজ্যপালের কাছে এমনই নালিশ জানিয়েছেন তাঁরা।
গতকাল ক্যানিং থেকে গাড়ি করে দুষ্কৃতীরা ভাঙড়ে ঢুকেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। এদিন রাজ্যপালকেও সেই নালিশ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। ক্যানিং পূর্বের তৃণমূল বিধায়ক শওকাত মোল্লার নেতৃত্বে দুষ্কৃতীদের ওই বাহিনী ভাঙড়ে ঢুকে দাপিয়ে বেড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। 'কে এই শওকাত মোল্লা?' নিজের সঙ্গে থাকা অফিসারদের কাছে জানতে চান রাজ্যপাল। তাঁরা সিভি আনন্দ বোসকে জানান, শওকাত মোল্লা ক্যানিং পূর্ব বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক।
এরপরেই রাজ্যপাল ভাঙড় ২ নং বিডিও অফিসে ঢুকে যান। সেখানে কর্তব্যরত আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। গতকাল এই ভাঙড় ২ বিডিও অফিস কার্যত দুষ্কৃতীদের দখলে চলে গিয়েছিল। বিডিও অফিসের গেট আটকে রেখে ভিতরে চলে মনোনয়ন জমা পর্ব। পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম দশা হয় পুলিশের।
আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে রাজ্যের দিকে-দিকে গত কয়েকদিনের তুমুল অশান্তির ছবি সামনে এসেছে। মুর্শিদাবাদের ডোমকল-রানিনগর, উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার পাশাপাশি দক্ষিণ ২৪ পরগনার ভাঙড় গত কয়েকদিনে দফায়-দফায় উত্তপ্ত হয়েছে। মনোনয়ন জমার একেবারে শেষবেলায় ভাঙড়ে হিংসার জেরে ৩ জনের মৃত্যুর অভিযোগ সামনে এসেছে।
আরও পড়ুন- বিরাট ধাক্কা কমিশন-রাজ্যের, গোটা রাজ্যেই কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোটের নির্দেশ হাইকোর্টের
এরপরেই ভাঙড় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। পূর্ব নির্ধারিত সব কর্মসূচি বাতিল করে ভাঙড়ে যান তিনি। মনোনয়ন জমার শেষবেলার হিংসা নিয়ে গতকালই কড়া বিবৃতি দিয়েছিলেন রাজ্যপাল। তাঁর বার্তা ছিল, 'নির্বাচনে বিজয় মৃতদেহ গণনার উপর নয়। ভোট গণনার উপর নির্ভর করা উচিত। আমাদের সংবিধান আক্রমণের মুখে। শয়তানের এই খেলা শেষ হওয়া উচিত। শেষের শুরুটা হবে পশ্চিমবঙ্গে। গণতন্ত্রে জনগণই প্রভু। নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ অবিচ্ছেদ্য অধিকার। গণতান্ত্রিক নির্বাচনে হিংসার কোনও অবস্থান নেই। যে কোনও মূল্যে সহিংসা নির্মূল করা হবে।'