এবার কোচবিহারে রাজ্যপাল। পঞ্চায়েত ভোটের আগে দফায়-দফায় উত্তপ্ত হচ্ছে কোচবিহারের বিভিন্ন এলাকা। ইতিমধ্যেই জেলায় ভোট-হিংসার বলি হয়েছেন ২ জন। পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে কোচবিহার সফরে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। শনিবার রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছেন বিজেপি বিধায়করা। একইসঙ্গে তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়ানো বেশ কয়েকজন সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেসের প্রার্থী। জেলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি রাজ্যপালকে বিশদে জানিয়েছেন সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিকও।
এর আগেও ভোট ঘিরে হিংসা-বিধ্বস্ত ক্যানিং, ভাঙড়ে গিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। হিংসা কবলিত এলাকা ঘুরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছিলেন তিনি। হিংসা এড়াতে কী কী পদক্ষেপ করা যায় সেব্যাপারে তিনি আলোচনাও সেরেছেন প্রশাসনিক ও পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে। শুধু তাই নয়, রাজভবনে তিনি খুলেছেন 'পিস রুম'। নির্বাচন সংক্রান্ত যে কোনও অভিযোগ ওই পিস রুমে ফোন করে জানাতে পারছেন সাধারণ নাগরিকরা।
আরও পড়ুন- গতকাল টানা ১১ ঘণ্টা প্রশ্ন, ফেরার পথেই ফের ED-র তলব সায়নীকে
অভিযোগ মিলতেই করা হচ্ছে পদক্ষেপ। শনিবার কোচবিহারে পৌঁছে গিয়েছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। এদিন কোচবিহারে পৌঁছেই রাজ্যপাল প্রশাসনের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন। তিনি বলেন, 'কোচবিহার থেকেও উদ্বেগের খবর এসেছে। আক্রান্তদের সঙ্গে দেখা করব। রাজভবনকে ভ্রাম্যমান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রাজভবনের পিস রুমকেও ভ্রাম্যমান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।' রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছেন জেলার ৫ বিজেপি বিধায়ক। তাঁদের অভিযোগ কোচবিহার জুড়ে সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করেছে তৃণমূল। পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্যপালকেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেছেন তাঁরা। শাসকদলের সঙ্গে সংঘর্ষে ইতিমধ্যে কোচবিহারে বহু বিজেপি কর্মী জখম হয়েছেন।
কোচবিহারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন সংঘর্ষে আহত বেশ কয়েকজন। যাঁদের অধিকাংশই বিজেপি কর্মী বলে জানা গিয়েছে। এদিন সকালে সেই হাপাতালেও গিয়েছিলেন রাজ্যপাল। আহত ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন সিভি আনন্দ বোস। এরপর তিনি রওনা দেন দিনহাটার উদ্দেশে। সেখানে গিয়েও রাজনৈতিক সংঘর্ষে আহতদের সঙ্গে তিনি কথা বলেন।
আরও পড়ুন- বাজিমাত লক্ষ্মীর ভাণ্ডারেই? বিরোধীদের বলে বলে ১০ গোল দিতে অভিনব প্রচারে তৃণমূল
এদিন সকালে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক। জেলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। তার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিশীথ প্রামাণিক বলেন, 'নির্বাচন ও নির্বাচনের পর যতে সাধারণ মানুষ বিপন্ন না হন, যাতে এখানে সাধারণ মানুষের মতামত প্রতিফতিলত হয় সেই কারণেই এসেছি। স্বাভাবিক জনজীবন যাতে ঠিকঠাক চলে রাজ্যপালের কাছে আর্জি জানাব। রাজ্যপাল নিজে দায়িত্ব নিয়ে যে সমস্ত জায়গায় হিংসা হচ্ছে উনি নিজে যাচ্ছেন। এখানে আবার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠত হবে।'
আরও পড়ুন- স্কুলের মিটার বক্সে কিলবিল করছে কী? দেখেই আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড়!
এদিকে, রাজ্যপালের এই সফরকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। দলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন সংবাদমাধ্যমে বলেন, 'শুধু বিজেপি নয়। কংগ্রেস, সিপিএমও গিয়েছিল। সিপিএম, বিজেপি ও কংগ্রেস একসঙ্গে বিরোধিতা করছে। রাজ্যপাল এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ করছেন। নিজের চেয়ারটাকে রাজনৈতিক দলের মুখপাত্রের মতো ব্যবহার করছেন। তৃণমূল শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে বদ্ধপরিকর।'
রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণার পর থেকে এখনও পর্যন্ত হিংসার বলি হয়েছেন ১১ জন। তার মধ্যে কোচবিহারে মৃত্যু হয়েছে ২ জনের। এদিন পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়ানো বেশ কয়েকজন সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপির প্রার্থীও রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করেছেন। ভোটে দাঁড়ানোর পর থেকে প্রতিনিয়ত শাসকদলের তরফে তাঁদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে রাজ্যপালকে নালিশ জানিয়েছেন তাঁরা।