Goyna Bori: শীতে বাংলার এতল্লাটের ঘরে-ঘরে এই উপকরণটি তৈরির তুমুল ব্যস্ততা চোখে পড়ে। আট থেকে আশি, পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমুলক, মহিষাদল-সহ বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘরে-ঘরে তৈরি হওয়া এই বিশেষ খাবারটির কদর দারুণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে প্রবাদপ্রতীম চলচ্চিত্রকার সত্যজিৎ রায়েরাও পাতে তুলেছেন সাধের এই পদ। এমনকী ১৯৫৪ সালে জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনেও পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এই খাবারের উল্লেখ পাবেন।
এ হল গয়না বড়ি। তমলুক, মহিষাদল সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বহু পরিবারে চলে এই বড়ি তৈরির কাজ। পূর্ব মেদিনীপুরের ঐতিহ্যশালী এই গয়না বড়ি খেতে ভালোবাসতেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, সত্যজিৎ রায়-সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গেরা। আবার এই গয়না বড়ির কথা জাতীয় কংগ্রেসের অধিবেশনেও উল্লিখিত হয়েছে।
কীভাবে তৈরি হয় গয়না বড়ি?
বিউলির ডালকে জলে ভিজিয়ে বেটে পোস্ত বা তিলের ওপর দেওয়া হয় গয়না বড়ি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই বড়িতে মজে তমলুক ও মহিষাদল-সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ প্রান্তের মানুষজন।
বঙ্গের ঋতু রঙ্গে সবচেয়ে প্রিয় কাল হল শীত। আর এই শীতকাল মানেই নলেন গুড়, পিঠে-পুলি, পায়েস-সহ বিভিন্ন মনবাহারি খাদ্যের বিপুল আয়োজনের সময়। শীতে পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক, মহিষাদলে এই গয়না বড়ির কদরও উপরের দিকেই থাকে।
এই বড়ির সঙ্গে মেদিনীপুরের মানুষের ভালোবাসা ওতোপ্রতভাবে জড়িত। নবান্ন, বড়দিন বা পৌষমেলার মতোই শীত হল এক উৎসবের ঋতু। আর সেই উৎসবের ঋতুর পুরোধা এতল্লাটে গয়না বড়ি। সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিক থেকেই বাড়িতে-বাড়িতে লেগে থাকে এই বড়ি তৈরির উৎসব। বিউলির ডাল, পোস্ত, সাদা তিল এবং অন্যান্য মশলার সংমিশ্রণের সঙ্গে মেয়েদের সুদক্ষ হাতের কারুকার্যের নিদর্শন হল এই গয়না বড়ি। বছরের পর বছর পেরিয়েও বর্তমান প্রজন্মের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে রয়েছে সেই কারুকার্যের ছাপ।
আরও পড়ুন- Premium: দিঘা যাচ্ছেন? মন্ত্রমুগ্ধকর এপ্রান্তে যেতে ভুলবেন না, অসাধারণ এতল্লাট দিঘার নয়া আবিষ্কার
গয়না বড়ির ইতিহাস:
গয়না বড়ির ইতিহাস অনেক পুরনো। জানা যায়, ১৯৩০ সালে সেবা মাইতি নামে শান্তিনিকেতনের এক ছাত্রী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তাঁর মা হিরন্ময়ী দেবী ও ঠাকুমা শরৎকুমারী দেবীর তৈরি গয়না বড়ি উপহার দেন। রবীন্দ্রনাথ গয়না বড়ির শিল্পকলা দেখে এতটাই আকৃষ্ট হন যে তিনি গয়না বড়িগুলির আলোকচিত্র শান্তিনিকেতনের কলা ভবনে সংরক্ষণ করার অনুমতি চেয়ে হিরণ্ময়ী দেবী ও শরৎকুমারী দেবীকে চিঠি লেখেন। এর ফলে গয়না বড়ি চারুকলার নিদর্শন হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে।
আরও পড়ুন- বাড়িতেই ব্যবসা, সামান্য খরচেই চটজটলদি মোটা টাকা আয়! বেকারদের দিশা দেখাচ্ছেন এই ব্যক্তি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও একদা নাকি বলেছিলেন, গয়না বড়ি শুধুমাত্র দেখার জন্য, খাওয়ার জন্য নয়। তিনি গয়না বড়ির শিল্পকর্মের সঙ্গে মধ্য এশিয়ার খোটানে আবিষ্কৃত প্রত্নতত্ত্বের শিল্পকর্মের সাদৃশ্য খুঁজে পান এবং গয়না বড়ির প্রদর্শনীর যথাযথ ব্যবস্থাও করেন। নন্দলাল বসু গয়না বড়িকে বাংলা মায়ের গয়নার বাক্সের একটি রত্ন বলে বর্ণনা করেন। তিনি গয়না বড়ির উপর একটি বই প্রকাশ করারও ইচ্ছা প্রকাশ করেন।
১৯৫৪ সালে কল্যাণীতে অনুষ্ঠিত ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ৫৯তম অধিবেশনে গয়না বড়ি প্রদর্শিত হয়। বংশ পরম্পরায় আজও তমলুক, মহিষাদল-সহ পূর্ব মেদিনীপুর জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় বাড়ির মা-বোনেরা শীতের সকালে গয়না বড়ি তৈরি করেন।
আরও পড়ুন- Digha: এবার দিঘা বেড়ানো হবে আরও মধুর! পর্যটকদের স্বার্থে যুগান্তকারী তৎপরতা প্রশাসনের