অনেক উচ্চতা থেকে নির্দিষ্ট লক্ষ্যের উপর নজর রাখা যে শকুন, এবার তাদের উপরই নজরদারি চলানোর ব্যবস্থা হচ্ছে। দিনভর চলছে প্রাকটিস। ২০২০-তে মুক্ত পাবে, আকাশে উড়বে ডানা মেলে। সঙ্গে থাকবে ৭ লক্ষ টাকার যন্ত্র।
'স্যাটেলাইট ট্যাগ' ডানায় নিয়ে আকাশে উড়বে 'হিমালয়ান গ্রিফিনের' দল। এর আগে নকল ব্যাকপ্যাক লাগিয়ে জোরকদমে তালিম চলছে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের রাজা ভাতখাওয়া শকুন প্রজনন কেন্দ্রে। শকুনের সংখ্যা বাড়াতে দেশে মোট ৯ টি প্রজনন কেন্দ্রে চলছে গবেষণা। এরমধ্যে ২০০৬ সালে উত্তরবঙ্গের বক্সার জঙ্গলের রাজাভাতখাওয়াতেও চালু হয় শকুন প্রজনন কেন্দ্র।
এখানে প্রজননের জন্য আনা হয় হিমালয়ান গ্রিফিন, লং বিল্ড, স্ল্যান্ডার বিল্ড এবং হোয়াইট ব্যাক বিল্ড নামে চার প্রজাতির শকুন। এখন এই প্রজনন কেন্দ্রে শকুনের সংখ্যা মোট ১৪০ টি। সেই ১৪০টির মধ্যে ৬টি হিমালয়ান গ্রিফিন প্রজাতির শকুনকে আকাশে ছেড়ে দেওয়া হবে। সেই জন্য তাদের 'জেনারেল এভিয়ারি' থেকে 'রিলিজ এভিয়ারিতে' নিয়ে আসা হয়েছে।
ওই ৬টি শকুনের মধ্যে ২টির ডানায় 'স্যাটেলাইট ট্যাগ' লাগানো থাকবে। এই ট্যাগগুলির একেকটির ওজন ২২ গ্রাম করে। চূড়ান্ত উড়ানের আগে ২টি শকুনের দেহে সম পরিমান ওজনের নকল ব্যাকপ্যাক লাগিয়ে চলছে জোর তালিম। তবে তালিমে সন্তুষ্ট বনকর্তারা।
শকুন সমাজের কী কাজে লাগবে এই ট্যাগ?
শুভঙ্করবাবু জানান, শকুন সম্বন্ধে আরও অনেক অজানা তথ্য জানতে চাই আমরা। এই ট্যাগ আমাদের সেই তথ্য পেতে সাহায্য করবে। শকুনের দেহে ট্যাগ লাগানোর ফলে তারা কখন, কোথায় যাচ্ছে তা আমরা আরও বিশদে জানতে পারব। এই তথ্য আমাদের গবেষণায় কাজে লাগবে।
উল্লেখ্য, শকুন একটি মাংসাসী পাখি। কিন্তু এরা শিকার করে খেতে পারে না। তাই ভাগাড়ে বা ঝোপঝাড় থেকে মৃত পশু, পাখির মাংস খেয়ে নিজেদের ক্ষুধা মেটায় এবং প্রকৃতিকে দূষণমুক্ত রাখে।
কেন কমতে থাকে শকুনের সংখ্যা?
গত শতকের নয়ের দশক থেকে ক্রমেই কমতে থাকে শকুনের সংখ্যা। কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয় গবাদি পশুর দেহে ডাইক্লোফেনাক নামক একটি ঔষধ এর লাগামহীন ব্যবহার। মৃত গবাদি পশুর দেহে থাকা ডাইক্লোফেনাক মাংসের মাধ্য়মে শকুনের দেহে প্রবেশ করে কিডনিতে সংক্রমণ ঘটাত। এর পরিণতি ছিল শকুনের মড়ক।
জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে দেশে প্রথম চন্ডীগড়ের পিঞ্জর শকুন প্রজনন কেন্দ্র থেকে শকুন ছাড়া হয়েছিল। এরপর ২০১৬ সালে উদ্যোগী হয় রাজ্যের বক্সার রাজাভাতখাওয়া।
হিমালয়ান গ্রিফিনদের কী ট্রেনিং চলছে?
বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ফিল্ড ডিরেক্টর শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, স্যাটেলাইট ট্যাগগুলি অত্যন্ত ব্যায়বহুল। একেকটির দাম প্রায় সাত লক্ষ টাকা। এগুলি দেহে লাগালে তাদের উড়তে বা শরীরে অন্য কোনও সমস্যা হয় কিনা তা দেখার জন্য নকল ট্যাগের ব্যাকপ্যাক লাগিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। প্রথমে এই দলটিকে ছাড়া হচ্ছে। এরপর ধাপে ধাপে সবকটিকেই ছাড়া হবে।
কিন্তু, কবে ঘেরাটোপ থেকে মুক্ত করা হবে শকুনদের? তিনি বলেন, স্যাটেলাইট সংযোগ সহ সমস্ত কিছু প্রক্রিয়া তৈরি। দফতরের অনুমতি পেলেই ছাড়া হবে ৬ টি হিমালয়ান গ্রিফিনকে। পরের দফায় বাকি শকুনদের মুক্ত করা হবে খোলা আকাশে।