Advertisment

Premium: বারুইপুরের অহঙ্কার পেয়ারা! হাজার-হাজার পরিবারের আয়ের দিশা এই চাষে

প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বারুইপুর-সহ আশেপাশের এলাকার কয়েক হাজার পরিবার পেয়ারার কারবারের সঙ্গে যুক্ত। পেয়ারাই এঁদের রুজি-রুটি।

author-image
Nilotpal Sil
New Update
Guava is pride of Baruipur, more than ten thousand family is financially depends on Guava farming

বাজারে নিয়ে যাওয়ার আগে ঝুড়ি-ভর্তি করা হচ্ছে পেয়ারা। ছবি: মীনা মণ্ডল

দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর। পেয়ারার নামেই পরিচয় মফস্বলের এই এলাকার। আদিগঙ্গার বুকের এই এলাকার মাটি খুবই উর্বর। বারুইপুরের আনাচে-কানাচে ঘুরলেই সেই ছবি হবে স্পষ্ট। আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, কলা থেকে শুরু করে সব ধরনের ফলের গাছ মিলবে এ তল্লাটে। তবে সবার সেরা পেয়ারা। বারুইপুরের পেয়ারার স্বাদ-গন্ধ এক কথায় অতুলনীয়। পুষ্টিগুণে ভরপুর পেয়ারা স্থানীয় এলাকায় বিক্রি তো হয়ই, কাকভোরে বারুইপুরের পেয়ারা ছোট-বড় গাড়িতে ভর্তি হয়ে পাড়ি দেয় শহর কলকাতার উদ্দেশে। ট্রেনেও ফি দিন পেয়ারা নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা শহরের বাজারগুলিতে। দেশের নানা রাজ্যে রফতানি হয় পেয়ারা। এমনকী বিদেশেও রফতানি হয় এই ফল। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বারুইপুর-সহ আশেপাশের এলাকার হাজার-হাজার পরিবার এই পেয়ারার কারবারের সঙ্গে যুক্ত। পেয়ারাই এঁদের রুজি-রুটি।

Advertisment

বারুইপুর ব্লকের ১৯টি গ্রাম পঞ্চায়েত-সহ জয়নগর ১ নম্বর ব্লকের সাতটি পঞ্চায়েত এলাকায় প্রায় ১৬০০ হেক্টর জমিতে পেয়ারার চাষ হয়। বারুইপুরের পেয়ারার কারবার সবেচেয়ে বেশি চলে কাছারি বাজারে। শহর বারুইপুরের প্রাণকেন্দ্রে রয়েছে এই বাজার। অতিমারীর পরিস্থিতির আগে বারুইপুরের কাছারি বাজার থেকে প্রতিদিন প্রায় ৬০ টন পেয়ারা দেশের নানা প্রান্তে যেত। গোটা বছরে বিদেশে রফতানি করা হতো প্রায় ২০ কোটি টাকার পেয়ারা। বারুইপুরের পেয়ারা সাধারণত নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, ইরান, ইরাক ও সৌদি আরবে যায়।

publive-image
ছবি: মীনা মণ্ডল

একটা পূর্ণবয়স্ক পেয়ারা গাছে বছরে দু'বার ফলন হয়। তিন মাস করে ফলন থাকে প্রতিবারে। একটা পেয়ারা গাছ থেকে ওই তিন মাসে গড়ে ৯০০ পিসের কাছাকাছি পেয়ারা পেয়ে থাকেন চাষিরা। বর্তমানে বারুইপুরে এক কুড়ি পেয়ারার দাম এখন ১০০ টাকা। পেয়ারার ফলন সবচেয়ে বেশি হয় বর্ষাকালে। শীতকালেও প্রচুর পেয়ারার চাষ হয় এ তল্লাটে। এই দুই ঋতু ছাড়াও বছরভর কম-বেশি পেয়ারার চাষ হয়ে থাকে। বারুইপুর-সহ আশেপাশের একাধিক এলাকা ধরলে লক্ষাধিক পরিবার পেয়ারার কারবারের সঙ্গে যুক্ত। এঁদের কেউ চাষি, কেউ আবার ব্যবসায়ী, কেউ মধ্যসত্ত্বভোগী বা ফোড়ে। এছাড়াও বহু মানুষ পেয়ারাকে কেন্দ্র করেই জীবিকার সংস্থান খুঁজে পেয়েছেন। তবে কালের নিয়মে বারুইপুরের চেহারাও পাল্টেছে। নগরায়নের প্রভাবে ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে পেয়ারার বাগান। বারুইপুরে এক সময় যেখানে পেয়ারার বাগান ছিল, সেখানেই এখন মাথা তুলে দাঁড়িয়ে বহুতল।

বারুইপুরের কাছারি বাজারে ফি দিন চলে পেয়ারার কারবার। এলাকার চাষিরা টন-টন পেয়ারা নিয়ে হাজির হন বিক্রির লক্ষ্যে। বারুইপুর কাছারি বাজার সবজি ব্যবসায়ী সমিতির সহ সম্পাদক দিলীপ দাস জানিয়েছেন, প্রতিদিন প্রায় ৫ হাজার মানুষ পেয়ারা নিয়ে আসেন বাজারে। বারুইপুরের মদারাট, কল্যাণপুর, শিখরবালি ১ ও ২ নং পঞ্চায়েত, বেগমপুর, রামনগর ১ ও ২ নং পঞ্চায়েত, ধপধপি ১ ও ২ নং পঞ্চায়েত, শঙ্করপুর ১ ও ২ নং পঞ্চায়েত, হরিহরপুর, বেলেগাছি, হাঁসদা, নবগ্রামে পেয়ারার চাষ হয়। হাজার-হাজার পরিবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই পেয়ারার কারবারের সঙ্গে যুক্ত।

publive-image
ছবি: মীনা মণ্ডল

বর্ষাকালে বারুইপুরে বিপুল পরিমাণ পেয়ারার চাষ হয়। কিন্তু এই সময়ে রোগ পোকার আক্রমণের জেরে প্রচুর ফলন নষ্টও হয়। সেই কারণেই কীটনাশক ব্যবহার করতে বাধ্য হন চাষিরা। তবে অনেক সময়েই কীটনাশকের ব্যবহারেও সুরাহা মেলে না। বরং এতে ফলের স্বাদ নষ্ট হয়। জমির উর্বরতা শক্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পেয়ারার ফলন পোকা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচাতে চাষিরা প্লাস্টিকের প্যাকেট দিয়ে বেঁধে রাখেন ফল। অনেকে আবার পেয়ারার আকার ছোট থাকার সময়ে স্পান বাউন্ড পলিপ্রোপাইলিন ফ্যাব্রিক ব্যাগ দিয়ে ফলগুলি ঢেকে রাখেন। পোকার আক্রমণ থেকে ফল বাঁচাতে এটা দারুণ কার্যকরী। ফল তোলার আগের দিন এই ব্যাগ খুলে রাখেন চাষিরা। এই ভাবে এই ধরনের ব্যগ দিয়ে ফল ঢেকে রাখলে ফলের আকার ভালো হয় ও ফল দেখতে সুন্দর হয়। স্বাভাবিকভাবেই বিক্রির ক্ষেত্রেও অনেক সুবিধা হয় চাষিদের।

বারুইপুরে বর্ষায় পেয়ারার ফলন সবেচেয়ে বেশি হলেও লাভ কম থাক। বর্ষাকালে পেয়ারার পিস প্রতি পাইকরি দর ১-২ টাকায় নেমে যায়। বারুইপুর থেকে নামমাত্র টাকায় এই পেয়ারা কিনে নিয়ে গিয়ে কলকাতার বিভিন্ন এলাকায় ৬০-১০০ টাকা কেজি দরে তা বিক্রি হয়। তবে শীতকালে পেয়ারা বিক্রি করে লাভের মুখ দেখেন চাষিরা। শীতে ভালো মানের পেয়ারার পিস প্রতি পাইকরি দর ৫-১০ টাকা পর্যন্ত হয়। সেই পেয়ারা কলকাতার বাজারে ২০০-৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

publive-image

পেয়ারার চাষের জন্য বছরভর প্রচুর প্লাস্টিক কেনেন চাষিরা। পোকার হাত থেকে ফল বাঁচাতে ছোট-ছোট প্লাস্টিকের প্যাকেট দিয়ে ঢেকে রাখা হয় পেয়ারা। বারুইপুরের বেগমপুরের বাসিন্দা অমরেশ সরদার। পেয়ারা চাষে যে প্লাস্টিকের প্যাকেটের প্রয়োজন হয় তা বিক্রি করেন তিনি। অমরেশবাবু জানালেন, বহু ব্যবসার পাশাপাশি প্লাস্টিকের ব্যবসাতেও বড়সড় প্রভাব পড়েছে। পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যের দাম বৃদ্ধির জেরে ১২০-১৪০ টাকা কেজি দরের প্লাস্টিক এখন বিক্রি হচ্ছে ১৬০-১৮০ টাকা কেজিতে। দাম বেশি থাকায় অনেক চাষিই কম পরিমাণে প্লাস্টিক কিনছেন।

বারুইপুরে আগে চাষ হত খাজা পেয়ারার। তবে গত ১০-১৫ বছর ধরে খাজার সঙ্গে যোগ হয়েছে এলাহাবাদি সফেদা জাতির পেয়ারা। এই পেয়ারা খাজার তুলনায় সাইজে ছোট হলেও স্বাদে অতুলনীয়। খাজা পেয়ারা ব্যাপক হারে চাষ হয় বারুইপুরে। এই জাতের ফল আকারে যেমন বড় তেমনই দেখতেও সুন্দর। বারুইপুর ছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলারই জয়নগর, বিষ্ণুপুর, মগরাহাটের বিভিন্ন ব্লকে পেয়ারার চাষ হয়। কিন্তু বাজারে ওই সব ব্লকের পেয়ারাই বারুইপুরের নামেই বিক্রি হয়।

ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখন টেলিগ্রামে, পড়তেথাকুন

Guava Selling
Advertisment