প্রাণের পুজোয় এ এক সম্প্রীতির নিদর্শন। কয়েক দশক ধরে দুর্গামূর্তি বানিয়ে চলেছেন হলদিয়ার নূর মহম্মদ চৌধুরী। মুসিলম এই প্রৌঢ়ের হাতেই 'প্রাণ' পায় দেবীমূর্তি। এই কাজে তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দেন নূর মহম্মদের স্ত্রী। 'মুসলিম হয়েও কেন হিন্দু দেবীর মূর্তি তৈরি?' প্রথমটায় নিজের ধর্মের একাংশের মানুষের থেকেই শুনতে হয়েছে এমনই সব টিপ্পনি। তবে সেসবে কান না দিয়েই নূর মহম্মদের মূর্তি বানানোর কাজের শুরু। বর্তমানে মৃৎশিল্পী হিসেবে গোটা পূর্ব মেদিনীপুরে জেলায় আলাদা খ্যাতি রয়েছে প্রৌঢ়ের।
বয়স সবে তখন ৫ কি ৭। শিশু মনে কাদা মাটি নিয়ে খেলতে-খেলতে একদিন বানিয়ে ফেলেছিলেন মাটির প্রতিমা। বয়স আর একটু বাড়তেই দেবীমূর্তি বানানোর ইচ্ছেটা তীব্র হতে শুরু করে নূর মহম্মদের। একদিন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে একটি পুকুর পাড়ে পড়ে থাকতে দেখেছিলেন দুর্গামূর্তির কাঠামো। দিন কয়েক আগেই বিসর্জন হয়েছিল সেই প্রতিমার। সেই কাঠামো তুলে এনে নতুন মূর্তি বানানোর তোড়জোড় শুরু করে দেন কিশোর নূর মহম্মদ।
ছোট থেকেই বাড়ির ছেলের এই কাজে বাধা দেননি পরিবারের বড়রা। বরং তাঁরা উৎসাহই দিয়েছেন এই কাজে। পরবর্তী সময়ে মূর্তি বানানোকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন হলদিয়ার আন্দুলিয়ার বাসিন্দা নূর মহম্মদ চৌধুরী। বয়স আজ পঞ্চান্ন পেরিয়েছে। স্ত্রী, সন্তান, পুত্র-পুত্রবধূ, নাতি-নাতনিদের নিয়ে ভরা সংসার প্রৌঢ়ের। স্ত্রীর পাশাপাশি মূর্তি বানানোর কাজে ফাঁক পেলেই তাঁকে সাহায্য করেন পরিবারের বাকি সদস্যরাও। ধর্মীয় ভেদাভেদ যন্ত্রণা দেয় তাঁকে। একমাত্র মেয়ের বিয়েও দিয়েছেন হিন্দু পরিবারেই।
পূর্ব মেদিনীপুরের প্রখ্যাত মৃৎশিল্পী রাধাকৃষ্ণ সামন্তের হাত থেকে মূর্তি তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন নূর মহম্মদ চৌধুরী। পরবর্তী সময়ে পেশা হিসেবে প্রতিমা গড়ার কাজকেই বেছে নিয়েছিলেন তিনি। তাঁকে দেখে মূর্তি বানানোর কাজে যুক্ত হয়েছেন নূর মহম্মদের ছেলেও। সারা বছর ধরে বিভিন্ন দেব-দেবীর মূর্তি বানালেও দূর্গাপুজোর সময়েই কাজের চাপ থাকে বেশি। নূর মহম্মদের তৈরি প্রতিমা জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায়। বিভিন্ন ক্লাব, বারোয়ারি পুজোয় নূর মহম্মদের হাতে তৈরি দুর্গাপ্রতিমা নজর কাড়ে।
আরও পড়ুন- হিমালয়ের পাদদেশে ঘূর্ণাবর্ত, চোখ রাঙাচ্ছে নিম্নচাপ, পুজো ভাসাবে বৃষ্টি
নিজের ধর্মের প্রতিও যথেষ্ট শ্রদ্ধাশীল নূর মহম্মদ। কাজের চাপে কখনও রোজা রাখতে না পারলেও নামাজ নিয়মিত পড়েন তিনি। সময় করে যান পাশের গ্রামের মসজিদেও।
ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেসবাংলাএখন টেলিগ্রামে, পড়তেথাকুন