‘ভাত কাপড়ের কেউ নয়, কিল মারার গোঁসাই’, ফুটপাথ দখলমুক্ত করতেই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই ভাষাতেই প্রতিক্রিয়া জানালেন শিলিগুড়ির হকাররা। শিলিগুড়ি শহরের ফুটপাথকে হকারদের দখলমুক্ত করতে শনিবার রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব পথে নামেন। এদিন হকারদের ফুটপাথ থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। ফুটপাথ দখল করা বেশ কিছু দোকানকেও এদিন উঠিয়ে দেন মন্ত্রী। শুধু তাই-ই নয়, শহরকে যানজটমুক্ত করতে লাগাতার এমন অভিযান চালানোর হুঁশিয়ারিও দেন গৌতম দেব।
আরও পড়ুন- টিকিট আছে, পুরস্কার নেই! লটারি মাফিয়ার রমরমার অভিযোগ গোটা উত্তরবঙ্গে
এদিকে, গৌতম দেবের এই হুঁশিয়ারির মাঝেই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুঁড়লেন হকাররাও। মন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভও প্রদর্শনও করেন তাঁরা। শনিবার সকালে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেবের সঙ্গে ছিলেন শিলিগুড়ি পুরনিগমের বিরোধী দলনেতা রঞ্জন সরকার, তৃণমূলের কাউন্সিলর নান্টু পাল–সহ পুলিশ আধিকারিকেরা। এদিন কোর্ট মোড় থেকে শুরু করে হাসপাতাল মোড়, হিলকার্ট রোডের দু’দিকে অভিযান চালানো হয়। এমনকী কোর্ট মোড়ের ফলের দোকান, পার্কিং করা গাড়ি সরিয়ে দেওয়ারও নির্দেশ দেন পর্যটনমন্ত্রী। কালীবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় লটারির দোকান, ফুলের দোকান–সহ অন্যান্য কিছু দোকানকেও ফুটপাথ থেকে সরে যেতে নির্দেশ দেন তিনি। শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালের সামনে হকারদের বসা নিয়েও এদিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন মন্ত্রী। এদিন হকারদের উঠিয়ে দিতে গেলে কয়েকজন মহিলা হকার মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ দেখান। এদিকে, মন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানোয় বেশ কিছুক্ষণের জন্য উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। পরে অবশ্য পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। অন্যদিকে, শিলিগুড়ির বিধান মার্কেটে ঢোকার মুখে ফুটপাত দখল করে বসা জামা–কাপড়ের দোকানগুলিকে আজকের মধ্যেই ফুটপাথ ছেড়ে বসার নির্দেশ দেন মন্ত্রী।
ফুটপাথ বাঁচাতে হকার উচ্ছেদে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব। ছবি- সন্দীপ সরকার
অভিযান শেষে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব জানান, ‘এদিন হিলকার্ট রোডে অভিযান করা হল। এরপর এসএফরোড, বিধান রোডেও ফুটপাথ দখলমুক্ত করা হবে। শহরের প্রধান সড়কগুলি থেকে বেআইনিভাবে বসা হকারদের উঠিয়ে দেওয়া হবে।’ পাশাপাশি, মন্ত্রী এদিন দার্জিলিং মোড়ের যানজট সমস্যা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে কয়েকটি প্রস্তাব পাঠাচ্ছেন বলেও জানা গিয়েছে। গৌতম দেব বলেন, ‘১৫ আগস্টের মধ্যে দার্জিলিং মোড় নিয়ে কী পদক্ষেপ গ্রহণ করছে কেন্দ্র তা পরিষ্কার না হলে ১৬ তারিখের পর একদিনের প্রতীকী অনশনে যাব। দরকার হলে এরপর আরও বৃহত্তর আন্দোলনে যাব আমরা।’
আরও পড়ুন- ‘কর দেয় না রাজ্য-কেন্দ্র’, ঢোল বাজিয়ে সরকারি ঘুম ভাঙাবেন অশোক ভট্টাচার্য
হিলকার্ট রোডের হকার উত্তম সাহা, প্রবীর পাল, রঞ্জিত কুণ্ডু–রা বলেন, ‘দীর্ঘ ৩৫ বছর ধরে আমরা ব্যবসা করছি। আমরা স্বীকৃত হকার। মন্ত্রী ফুটপাথ ছেড়ে ব্যবসা করতে বলেছেন আমরা, সেই মতোই দোকান বসাব।’ এদিকে, মন্ত্রী যখন ফুটপাত থেকে হকারদের সরিয়ে দেওয়ার ১ ঘণ্টার অভিযান শেষ করলেন, ঠিক সেই সময় হাসপাতাল মোড়, শিলিগুড়ির প্রধান ডাকঘরের সামনে ফের ফুটপাত দখল করে বসে পড়েন কিছু হকার। ফুলের দোকান, লটারির দোকান থেকে শুরু করে অন্যান্য কিছু দোকানও ফের বসে পড়ে ফুটপাত দখল করে। শিলিগুড়ির প্রধান ডাকঘরের সামনে কাগজ বিক্রেতা রূপক কুণ্ডু মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে বলেন, ‘উনি কি চাকরি দেবেন? আমাদের পরিবার আছে। উনি তো কাজ দিতে পারেন না। অথচ আমাদের সরে যেতে বলেছেন। তাহলে কি আমরা চুরি–ছিনতাই করব?’ তিনি পাল্টা হুমকির সুরে জানান, মন্ত্রী যতই উঠতে বলুক না কেন, আমরা এখানেই বসব। মন্ত্রী–প্রশাসনের যা করার তাই করে দেখাক"। তবে হকাররা যে যাই বলুক, গৌতম দেবের ফুটপাথ দখলমুক্ত করার অভিযান লাগাতার চলবে বলে জানা গিয়েছে।
শিলিগুড়ির সব খবর পড়ুন এখানে