Advertisment

মশাবাহিত রোগের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নজির স্থাপন আলিপুরদুয়ার হাসপাতালের

স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, এখনও বহু দুর্গম এলাকায় যোগাযোগের সমস্যা আছে, এমনকি কোথাও কোথাও হাতির পিঠে চড়ে পর্যন্ত চিকিৎসার কাজ করতে যেতে হয়, তবু তাঁরা হাল ছাড়েন নি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

২০১৫ সাল থেকে চলছে অভিযান

“হাতি বাঘ মরে মশার কামড়ে, আমরা তো মানুষ...” এমন আক্ষেপ শোনা যেত অবিভক্ত জলপাইগুড়ি জেলার বনবস্তী এলাকার বাসিন্দাদের মুখে। ফি বছর মশার কামড়ে জ্বর, তারপর মৃত্যু, এ যেন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গিয়েছিল। জেলা ভাগ হওয়ার পর আলিপুরদুয়ার নতুন জেলা হলো, এবং সরকারী চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মিলিত অভিযানের ফলে চলতি বছরে একজনেরও এখন পর্যন্ত মশার কামড় জনিত রোগে মৃত্যু হয় নি বলে খবর, যেখানে আগে মশার কামড়ে প্রতিবছর মৃত্যুর হার ছিল গড়ে ৭০০। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক এক বার্তায় একথা জানিয়ে আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের এই অভিযানকে 'মডেল' আখ্যা দিয়েছে।

Advertisment

আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের নোডাল অফিসার ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী জানান, তাঁরা ২০১৫ সাল থেকে সমস্ত স্বাস্থ্যকর্মীকে বিষয়টির গুরুত্ব বুঝিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে অভিযান শুরু করান। বনজঙ্গল থেকে মশা ধরে এনে বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা করে দেখেন, শুধুমাত্র ম্যালেরিয়া ডেঙ্গু নয়, প্রাণঘাতী জীবানুবাহী হরেক প্রজাতির মশা আছে সেসব জঙ্গলে। সেখানে মশা মারার রাসায়নিক ছড়ালে সাময়িক কাজ হতে পারে, কিন্তু অন্যদিকে তার প্রভাব পড়বে বন্যপ্রানীদের মধ্যে ও বনাঞ্চলে। বন জঙ্গলে অভিযান চালিয়ে দেখা যায়, মশা জন্মানোর উৎসস্থল হলো ভেজা নরম মাটির ওপর হাতি এবং অন্যান্য প্রাণীদের পায়ে চলার ফলে তৈরি হওয়া গর্ত। যার মধ্যে জল জমে মশার জন্মস্থানের সৃষ্টি হয়েছে গোটা এলাকা জুড়ে।

আরও পড়ুন: ইটভাটা চলছে ডুয়ার্সের বনাঞ্চলে, অন্ধকারে প্রশাসন

জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা করানোর নিয়ম সকলেরই জানা, কিন্তু বেশীরভাগ চা বাগানের শ্রমিককে তাঁদের মালিকরা ছুটি দেন না স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর, যদিও সরকারিভাবে চা বাগান কর্তৃপক্ষকে বলা হয় শ্রমিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সুযোগ দিতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিদিন কিট নিয়ে গিয়ে জ্বরে আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি ওষুধ দেওয়া চালিয়ে যান, এবং কোনও রুগীর অবস্থা শোচনীয় হলে তাঁকে জেলা হাসপাতালে এনে চিকিৎসা চলে।

publive-image স্বাস্থ্যকর্মীরা প্রতিদিন কিট নিয়ে গিয়ে জ্বরে আক্রান্তদের রক্ত পরীক্ষার পাশাপাশি ওষুধ দেওয়া চালিয়ে যান

ভিয়েতনাম থেকে আনা হয় একধরনের মশারী, যা ডেল্টামেথ্রিন নামে রাসায়নিক দিয়ে তৈরী, যে মশারী ঘরে রাখলে মশা ঘরে থাকে না। ৪০,০০০ ঐ জাতীয় মশারী বিতরণ করা হয় বস্তি এলাকায়, সঙ্গে চলে নিয়মিত প্রচার। এলাকায় কারোর জ্বর হলে তাঁর নিয়মিত চিকিৎসার জন্য পাড়াতেই প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত রেখে তাঁকে খাওয়ানো হয়।

ডাঃ গোস্বামী জানান, চা বাগান এলাকার অল্পসংখ্যক মানুষ দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে কাজ করতেন, দেশে ফিরে তাঁরা অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মীরা খবর পেয়ে তাঁদের রক্ত সংগ্রহ করে জেলা হাসপাতালে পাঠান, যেখানে পরীক্ষার পর স্ক্রাব টাইফাসের জীবাণু মেলে। এছাড়াও রয়েছে হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাসের মস্তিষ্কে সংক্রমন হওয়ার ঘটনা। এমন হরেক অসুখকে "স্রেফ জ্বর" বলে অনেকে গুলিয়ে ফেলেন বলেই সমস্যা হয়, বলছেন চিকিৎসকরা।

publive-image মশার হাত থেকে রক্ষার সমস্ত চেষ্টা চলছে

জেলা হাসপাতালের রক্ত পরীক্ষার ল্যাবের আধুনিকীকরণ হয়েছে, ফলে সবাই আন্তরিক প্রচেষ্টায় যে উদ্যম নিয়েছিলেন, তার সুফল মিলছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, এখনও বহু দুর্গম এলাকায় যোগাযোগের সমস্যা আছে, এমনকি কোথাও কোথাও হাতির পিঠে চড়ে পর্যন্ত চিকিৎসার কাজ করতে যেতে হয়, তবু তাঁরা হাল ছাড়েন নি।

আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের সাধারন চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে নানা অভাব অভিযোগ রয়েছে সাধারন মানুষের মধ্যে। চিকিৎসকরা বলছেন, শুধু জেলার রুগী নন, আসামের কোকরাঝাড় জেলা থেকেও রুগীরা এখানে চিকিৎসা করাতে আসছেন, ফলে চাপ বেড়ে চলেছে। কিন্তু সব সমস্যার উর্ধ্বে অনেকটাই উঠতে পেরেছেন আলিপুরদুয়ার জেলার স্বাস্থ্যকর্মীরা, যাঁরা বলছেন, জেলার বিভাগীয় আধিকারিকরা তাঁদের সঙ্গে গিয়ে বনবস্তীর দুর্গম এলাকায় যেভাবে কাজ করেছেন, তাতে তাঁদেরও কাজের উৎসাহ বেড়ে গেছে।

north bengal Malaria Dengue
Advertisment