পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নের সময়সীমা মাত্র একদিন বাড়ানোর কথা বলে হাইকোর্টে সোমবার রিপোর্ট পেশ করেছিল রাজ্য নির্বাচন কমিশন। জানানো হয়, আগেও সাতদিনের সময় সীমায় ভোট করার নজির রয়েছে। তার পাল্টা কমিশনের আইনজীবীকে প্রধান বিচারপতির প্রশ্ন ছিল, সংবিধানে কোথাও উল্লেখ নেই যে সাতদিনের বেশি সময়সীমাই মনোনয়নের জন্য নির্ধারিত করা যাবে না, তাহলে আপত্তি কোথায়?
টানা মাত্র ২৪ ঘন্টার সময় সীমায় কীভবে প্রার্থীরা নিজেদের তথ্য জানাবেন, কীভাবে তার স্ক্রুটিনি হবে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারকরা। এরপরই প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ কমিশনকে পঞ্চায়েত ভোটের দিনক্ষণ, তারিখ উল্লেখ করে একটি প্রস্তাব দেয়।
আদালতের কী প্রস্তাব?
১৫ জুন থেকে ২১ জুন পর্যন্ত করা হোক পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়নের সময়সীমা। ২৩ জুন হবে স্ক্রুটিনি। ২৬ জুন মনোনয়ন প্রত্যাহারের দিন। পঞ্চায়েত ভোট করা হোক ১৪ জুলাই।
এরপর কমিশন হাইকোর্টের প্রস্তাব গ্রহণ করে কিনা সেদিকেই নজর সকলের।
৮ই জুলাই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। সেই ভোট নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশন গত শুক্রবারই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। তারপর থেকেই ভোট প্রক্রিয়ার নানা বিষয় নিয়ে চ্যালেঞ্জ ছোড়ে বিরোধী দলগুলো। মনোনয়নের সময়সীমা বৃদ্ধি, ভোটে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন নিয়ে মামলায় গড়ায় কলকাতা হাইকোর্টে। জনস্বার্থ মামলা দু'টি করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই মামলার শুনানিতে গত শুক্রবার মনোনয়নের সময়সীমা নিয়ে কমিশনের রিপোর্ট তলব করা হয়। কমিশনকে সময়সীমা নিয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার কথাও বলেছিলেন বিচারপতিরা। সেই রিপোর্টই সোমবার হাইকোর্ট জমা দিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন।
কী জানিয়েছিল কমিশন?
এদিন শুরুতে রিপোর্ট পেশ করে কমিশন জানিয়েছিল যে, আদালত নির্দেশ দিলে ১৬ জুন পর্যন্ত মনোনয়নের সময়সীমা বাড়াতে প্রস্তুত তারা। অর্থাৎ একদিনের সময়সীমা বাড়ানো যেতে পারে। এছাড়াও কমিশনের দাবি, এর আগেও সাত দিনের মনোনয়নের সময়সীমায় ভোট হয়েছে।
রাজ্যের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েতে, ৯২৮টি জেলা পরিষদের আসন, পঞ্চায়েত সমিতির মোট আসন ৯ হাজার ৭৩০টি এবং গ্রাম পঞ্চায়েতে ৬৩ হাজারেরও বেশি আসন রয়েছে। কমিশনের বিজ্ঞপ্তি অনুসারে বিপুল হারে প্রার্থীদের মনোনয়ন শেষ করতে হবে ১০ থেকে ১৫ জুনের মধ্যে। সকাল ১১ থেকে দুপুর ৩টে পর্যন্ত ছিল মনোনয়ন পেশের সময়।এর মাঝে ছিল রবিবার ছুটির দিন। ফলে মনোনয়নের সময়সীমা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিরোধী দলগুলো। বিরোধীদের দাবি, টানা ঘণ্টার হিসাব ধরলে, মনোনয়ন জমা দেওয়ার জন্য মোট ২৪ ঘণ্টা সময়সীমা বরাদ্দ করা হয়েছে। ফলে কার্যত অসম্ভব মনোনয়ন পেশ।
এরপরই গত শুক্রবার মনোনয়ন পেশের সময়সীমা বৃদ্ধি সহ সুষ্ঠু ও অবাধ পঞ্চায়েত ভোটের লক্ষ্যে একগুচ্ছ দাবি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন শুভেন্দু অধিকারী ও অধীর চৌধুরী। সেই মামলারই শুনানি চলছে। আদালতে হাজির রয়েছেন মামলাকারী বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।