Advertisment

"চিকিৎসার জন্য আর দক্ষিণ ভারতে যাওয়ার দরকার হবে না"

পরবর্তীকালে মেডিক্যাল কলেজকে লিভার, কিডনি ও বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কেন্দ্র করে তোলার লক্ষ্য রয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
kolkata medical, কলকাতা মেডিক্য়াল

চোখের অপরেশন মানে শঙ্কর নেত্রালয়, ক্যান্সার মানেই টাটা মেডিকেল হাসপাতাল, হৃদরোগ মানেই দক্ষিণ ভারত, এই ধারণা বহুদিন ধরেই ভাঙতে চেয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। কম খরচে বা বিনামূল্যেও অস্ত্রোপচার সহ চিকিৎসা করা হবে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। এমনটাই সংবাদ মাধ্যমকে জানান রোগীকল্যান সমিতির সভাপতি তথা বিধায়ক নির্মল মাজি। দিন দুয়েক আগে তারই বাস্তবায়ন ঘটেছে মেডিক্যাল কলেজে।

Advertisment

বাহাত্তর ঘণ্টা কেটেছে, খাওয়াদাওয়া শুরু করেছেন রাখাল দাস। দুদিন আগে সরকারিভাবে প্রথম যাঁর হৃদ প্রতিস্থাপন হয় মেডিক্যাল কলেজে। অবশ্য চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আরও দশ দিন সময় লাগবে। কারণ এসময় সংক্রমণের ভয় থাকে। তিনদিন আগে অবধি দোটানায় ছিলেন স্ত্রী সহ পরিবারের বাকি লোকজন, প্রশ্ন ছিল, আদৌ কি বাঁচবেন রাখালবাবু? এই প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন চিকিৎসক প্লাবন মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর সহকর্মীরা। জীবনদায়ী ওই অঙ্গ প্রতিস্থাপন করেছেন রাখালবাবুর শরীরে।

কলকাতায় বেসরকারি হাসপাতালে হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্ট হলে মেডিক্যালে নয় কেন? অ্যাপোলো বা ফোর্টিসে যাঁরা আছেন, তাঁরা তো সরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকেই পাশ করে বেরিয়েছেন। তাহলে এখানে সম্ভব হবে না কেন? এই প্রশ্নই বেশ কয়েকদিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছিল প্লাবনবাবুর মনে। তিনি স্বাস্থ্য দপ্তর ও রোগীকল্যান দপ্তরকে জানালে, সে বার্তা সরাসরি পৌঁছে যায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। তিনি নির্দেশ দেন, খরচ জোগাবে রাজ্য সরকার, অর্থচিন্তা যেন প্রতিবন্ধকতা না হয়ে দাঁড়ায়। মেডিক্যালেই হবে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে প্রথম হৃদ প্রতিস্থাপন।

আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে বিনামূল্যে হৃদ প্রতিস্থাপন মেডিক্যাল কলেজে

সামান্য পানের দোকান প্রতিবন্ধি রাখাল দাসের। অভাবের সংসারে কোনো রকমে দিন চলত। এরই মাঝে হঠাৎ অসুস্থ হতে থাকেন রাখালবাবু। সামান্য কাজ করলে, এমনকি কথা বললেও, হাঁপিয়ে উঠতেন তিনি। মেডিক্যালে ডাক্তাররা পরীক্ষা করে দেখেন, হৃদযন্ত্রের অবস্থা শোচনীয়। খোঁজ করতে থাকেন বিকল্প হৃদযন্ত্রের।

অন্যদিকে মৃত সৈকত লাট্টুর পরিবারের তরফ থেকে সবুজ সংকেত পেয়ে রাজ্যের অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংস্থা এবং স্বাস্থ্য দপ্তর উপযুক্ত গ্রহীতার খোঁজ শুরু করে।রাখলবাবুর ক্ষেত্রে মাত্র ছ'মিনিটে কলকাতার জনবহুল রাস্তায় গ্রীন করিডোর বানিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় হৃদযন্ত্রটি। মেডিক্যালে সেটি পৌঁছয় ৯.৫৫ মিনিটে। সকাল ১১ টা থেকে শুরু হয় অস্ত্রোপচার।

প্রথম ধাপে যে টাকার জন্য আটকে গেছিল অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসা, সেকথা স্বীকার করেছেন প্লাবনবাবু। রোগীকল্যান দপ্তরকে একথা জানালে নির্মলবাবু খরচের কথা না ভেবে অস্ত্রোপচার শুরুর নির্দেশ দেন। ভর্তির সময় থেকে অস্ত্রোপচার-পরবর্তী ধাপ পর্যন্ত সঙ্গে ছিল রাজ্য সরকার।

পরবর্তীকালে মেডিক্যাল কলেজকে লিভার, কিডনি ও বিভিন্ন অঙ্গ প্রতিস্থাপনের কেন্দ্র করে তোলার লক্ষ্য রয়েছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দপ্তরের। সংবাদ মাধ্যমকে এমনটাই জানিয়েছেন নির্মলবাবু। তিনি বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপনে কোনোরকম খরচ লাগবে না মেডিক্যাল কলেজে। এছাড়াও রাজ্যের অন্যান্য সরকারি কলেজে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন শুরু করার কথা বলেন তিনি এদিন। অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে বিশ্বমানের যে যন্ত্রপাতির প্রয়োজন, সেসবের জোগান রাখাতে হবে সরকারি হাসপাতালে।

মেডিক্যাল কলেজের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ টিম বেশ কয়েকদিনের আলোচনার পর সিদ্ধান্তে এসেছেন, সরকারি হাসপাতেল শুরু হবে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন। বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে, মধ্যবিত্ত পরিবারের রোগীরা চিকিৎসার অভাবে হৃদরোগ নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন। তা যাতে না ঘটে সেই দিকে নজর দিয়েছেন প্লাবন মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর সহকর্মীরা। উল্লেখ্য, অঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্পূর্ণভাবে দাতা ও গ্রহীতার ওপর নির্ভরশীল। সম্প্রতি অনেকই সচেতন হয়েছেন, আগ্রহ দেখিয়েছেন অঙ্গদানের বিষয়ে। প্রসঙ্গত, গ্রহীতার শরীর প্রতিস্থাপনের যোগ্য কিনা, প্রথমে তা পরীক্ষা করে দেখা হয়। দাতা ও গ্রহীতার রক্ত, হৃদযন্ত্রের পরিমাপ সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় মিললে তবেই প্রতিস্থাপন সম্ভব।

আরও পড়ুন: আবারও নজির গড়ল কলকাতা, অঙ্গ প্রতিস্থাপনে গ্রিন করিডোর

এতদিন প্রশ্ন উঠত, মেডিক্যাল কলেজ লাইসেন্স পেলেও কেন অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয় না? প্লাবনবাবু জানান, পরিকাঠামো ও অর্থের অভাবেই এতদিন তা সম্ভব ছিল না। সাধারণত কোন পর্যায়ের রোগীর হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রয়োজনীয়তা হয়? প্লাবনবাবু জানান, "মূলত হার্ট ফেইলিওরের বিভিন্ন স্তরের রোগীরা আসেন। যেসব রোগী বুক ধড়ফড় ভাব, বুকে চিনচিনে ব্যথা অথবা হাঁপানি নিয়ে চিকিৎসার জন্য আসেন তাঁদেরকেও কিছু স্পেশাল ক্ষেত্রে আমাদের কাছে পাঠানো হয়।"

একটি 'হার্ট ফেইলিওর ক্লিনিক' শুরু করা হয়েছে মেডিক্যালে। কারণ হঠাৎই কোনো রোগীকে যদি জানানো হয় তাঁর অন্য হৃদযন্ত্রের প্রয়োজন, ঘাবড়ে যেতে পারেন রোগী সহ তাঁর পরিবার। তাই আগে ভর্তি করে তাঁকে চিকিৎসাধীন রাখার জন্য ওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যাতে ওই জীবনদায়ী অঙ্গ পাওয়ামাত্রই তা প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু করা যায়। তবে শিশুদের হৃদ প্রতিস্থাপন নিয়ে এখনও কোনো ভাবনাচিন্তা করেনি মেডিক্যাল কলেজ। এই মুহুর্তে চারজন ভর্তি আছেন, যাঁদের প্রয়োজন রয়েছে হৃদযন্ত্রের।

Heart Transplantation calcutta medical college
Advertisment