মুষলধারে বৃষ্টিতে ভাসল হাওড়া। টানা বৃষ্টির জেরে ফের বেআব্রু হাওড়ার নিকাশী ব্যবস্থা। ভারী বৃষ্টির জেরে কার্যত জলের তলায় চলে গেল হাওড়ার ২২টি ওয়ার্ড। এমনকি শুক্রবার রাত থেকে চলা বৃষ্টিতে জল জমল পূর্ব রেলের হাওড়া কারশেডেও। বাদ গেল না দক্ষিণ পূর্ব রেলের কারশেডও। মেঘ ভাঙা এই বৃষ্টির দাপটে হাওড়ার নিকাশী ব্যবস্থার এহেন বেহাল দশায় আতঙ্কিত হাওড়াবাসী। পূর্ব রেলের হাওড়া বর্ধমান শাখার হাওড়া কারশেডে জল জমায় বেশ কিছুটা ব্যাহত হয় ট্রেন চলাচল পরিষেবাও। পূর্ব রেলের তরফে ছটি লোকাল ট্রেন বাতিল করা হয় বলে জানানো হয় রেল সূত্রে। পাশাপাশি দক্ষিন-পূর্ব রেলের কারশেডের সামনের লাইনে জল জমে যাওয়ায় বাতিল করা হয় ১০টি লোকাল ট্রেন।
জনবহুল এলাকা রামরাজাতলা স্টেশন থেকে রামচরণ শেঠ রোডও ডুবেছে অথৈ জলে। রামরাজাতলার দীর্ঘকালের বাসিন্দা সৌমেন মন্ডল বলেন, "৪৮ বছরের জীবনে এত জল দেখিনি রামরাজাতলার এই রাস্তায়।" সৌমেনবাবুর বক্তব্যের প্রতিধ্বনি শোনা গেল এলাকার অন্যান্য বাসিন্দাদের গলাতেও। জলে ডুবল উত্তর হাওড়ার জি টি রোড সংলগ্ন টি এল জয়সোয়াল হাসপাতালও। চিকিৎসকদের বসার ঘরে জল থইথই অবস্থা। হাসপাতালের এহেন বেহাল দশা ঢাকতে তাই চিকিৎসকদের ঘরের বাইরে টাঙিয়ে দেওয়া হল পর্দা।
জল জমেছে মহিনাথ পোড়েল লেন, ঘোষপাড়া লেন, কামিনী স্কুল লেন, বেনারস রোড, অরবিন্দ রোড, উত্তম ঘোষ লেন-সহ একাধিক এলাকায়। শুধু হাওড়া নয়, জলের নীচে লিলুয়ার চকপাড়া, মীরপাড়া, ‘সি’ রোড সহ বিস্তীর্ণ এলাকাও। অন্যদিকে, শুক্রবারের এই টানা বৃষ্টির জেরে শিবপুর রোডেও জল জমায় কপালে ভাঁজ পড়েছে হাওড়ার পুর কর্তাদের।
একই চিত্র মধ্য হাওড়াতেও। মধ্য হাওড়ার টিকিয়াপাড়া, দাসনগর, ইস্ট ওয়েস্ট বাইপাস, পঞ্চাননতলা, ইছাপুর, ডুমুরজলা হাউসিং-সহ বিভিন্ন এলাকাতেও একই দৃশ্য ধরা পড়ল। অবশ্য এলাকার এই অবস্থায় পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রাক্তন কাউন্সিলার দিব্যেন্দু মুখোপাধ্যায়। প্রায় এক কোমর জলে দাঁড়িয়ে প্রাক্তন তৃণমূল কাউন্সিলার বলেন, “আমরা যখন পুর বোর্ডে ছিলাম, তখন এত জল জমেনি। এবারে যে কাজ হয়নি এটাই তার বড় প্রমাণ।” এদিন বাড়ি বাড়ি খিচুড়ি বিলি করেন তৃণমূলের এই কাউন্সিলর।
হাওড়ার এহেন অবস্থা প্রসঙ্গে পুর কমিশনার তথা পুর প্রশাসক বিজিন কৃষ্ণ জানান, "অতিবৃষ্টি ও গঙ্গায় জোয়ার থাকায় বিকেল পর্যন্ত জল অনেক জায়গায় নামেনি, তবে রাতের দিকে জল নেমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জল নামাতে কেএমডিএ-র দুটি বড় পাম্পিং স্টেশন ছাড়াও ২৯টি ছোট পাম্প চালানো হচ্ছে। সাফাই কর্মীরা সারাদিন জল নিকাশের কাজে লেগে রয়েছেন। আমরা গোটা এলাকাটি ঘুরে দেখেছি।"