ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। শতাব্দীপ্রাচীন এপুজোয় এভাবনা ষোলোআনা খাটে। দুর্গাপুজোর দিনগুলির জন্য বছরভর অপেক্ষায় থাকেন এতল্লাটের হিন্দু, মুসলিমরা। সবাই মিলে ভাগ করে নেন পুজোর আনন্দ। শারদোৎসবকে কেন্দ্র করে সম্প্রীতির এক অপরূপ ছবির দেখা মেলে বাংলার এই প্রান্তে।
পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের গোয়ালআড়া গ্রাম। আগে গ্রামের মণ্ডল পরিবারের পারিবারিক পুজো হিসেবেই এটি পরিচিত ছিল। মণ্ডল পরিবারের আর্থিক অবস্থা শুরুর দিকে ভালোই ছিল। তাই শুরুর বছরগুলিতে ধুমধাম করে পুজো হতো গ্রামে। তবে একটা সময়ে আর্থিক সমস্যার জেরে মণ্ডল পরিবার আর এই পুজো চালিয়ে যেতে পারেনি। তখন থেকেই পুজোর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন গ্রামবাসীরা। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হিন্দুদের পাশাপাশি পুজোর তোড়জোড়ে এগিয়ে আসেন গ্রামের মুসলিম ধর্মালম্বী মানুষজনও। ফলে গোয়ালআড়া গ্রামের এই দুর্গাপুজো সর্বধর্মের সম্প্রীতির পুজো হয়ে উঠেছে।
গ্রামের দুর্গামন্দির পরিস্কার করতে দালান ঝাঁট দেওয়া থেকে শুরু করে পুজোর বাজারহাট, সব কাজেই সমানভাবে গ্রামের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন এগিয়ে আসেন। গোয়ালআড়া গ্রামের বাসিন্দা শেখ মুস্তাক আলির কথায়, "গ্রামের এই দুর্গাপুজো দেড়শো বছরের পুরনো। অনেক আগে থেকেই ওই পরিবার পুজো বন্ধ করে দেয়। তখন থেকেই গ্রামের প্রায় প্রত্যেক পরিবারই পুজোর দায়িত্ব নেয়। পুজোয় কোনও খামতি রাখা হয় না। প্রথা মেনে নিষ্ঠার সঙ্গে পুজো হয়। এবছর তো সরকারি অনুদানও পাওয়া গিয়েছে।"
আরও পড়ুন- ফের চর্চায় সবচেয়ে ‘বড় দুর্গা’, জাঁকজমকে তোলপাড় ফেলতে ময়দানে বাংলার এই ক্লাব
উল্লেখ্য, আউশগ্রামের গোয়ালআড়া গ্রামের অধিকাংশ মানুষজনই কৃষিজীবী সম্প্রদায়ের। গ্রামে হিন্দু, মুসলিম সব সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন। প্রায় দেড়শো বছর আগে মণ্ডল পরিবারের একজন এই গ্রাম দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। প্রথমদিকে এখানকার পুজো জাঁকজমকপূর্ণভাবে হতো। তবে পুজোর বয়স একশো পেরনোর পর থেকে পুজোটি বারোয়ারি হয়ে যায়।
এক গ্রামবাসী বলেন, "মণ্ডল পরিবারের আর্থিক সমস্যার জেরে ওঁরা পুজো চালিয়ে যেতে পারেনি। তারপর পুজোর দায়িত্ব গ্রামের অন্যরা কাঁধে তুলে নেয়। এখন এটি বারোয়ারি পুজো হয়ে গিয়েছে। এই পুজো এখন হিন্দু-মুসলিম সবার।"
আরও পড়ুন- এ পুজোয় ডাক পড়ে না পুরোহিতের, আদিবাসীদের নিজস্ব মন্ত্রে পুজো পান দেবী মহামায়া
গোয়ালআড়া গ্রামের দুর্গাপুজোয় প্রতিমা তৈরির সময় থেকেই মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন অংশ নেন। পুজোর যাবতীয় খরচ হিন্দু-মুসলিম সকলেই চাঁদা তুলে বহন করেন। মন্দির চত্বর পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা থেকে মন্দিরের তদারকি, বাজারহাট করা সবেতেই সমান ভূমিকা নেন প্রত্যেকে। মহালয়ার দিন মোচ্ছবের আয়োজন থাকে। তার খরচও সমানভাবে বহন করেন মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষজন।
গ্রামবাসী মোক্তার আলি বলেন, ''পুরনো মন্দির ভেঙে নতুন পাকা মন্দির তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই পুজোতে আমরাও চাঁদা দিই।'' গেরাই গ্রামের এক ব্যবসায়ী গোয়ালআড়া গ্রামের দুর্গামন্দির তৈরির খরচ দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।