Advertisment

শহরেই বিরাট বটগাছ, সশস্ত্র রক্ষীর স্থায়ী ওয়াচ টাওয়ার, কতটা চেনেন কলকাতাকে?

এর কাছেপিঠেই ১৬৯০ সালে নৌকো থেকে গঙ্গার ঘাটে নেমেছিলেন জোব চার্নক।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Burtolla PS 2

কল্লোলিনী কলকাতা

কল্লোলিনী তিলোত্তমা জন্মলগ্নের একেবারে গোড়ার দিকে গ্রাম থেকে তখনও পুরোপুরি শহর হয়ে ওঠেনি। সেই সময়ে গ্রামাঞ্চলের প্রথা মেনেই বিভিন্ন এলাকার নামকরণ করা হত, ‘তলা’ যোগ করে। সেভাবেই বটতলা, চাঁপাতলা, ডালিমতলা, লেবুতলা, আমড়াতলা, কেওড়াতলা নামগুলো এসেছে। ব্রিটিশদের দৌলতে এই বটতলাই হয়ে যায় বরতোল্লা। সেখান থেকে পরিচিত হয়ে ওঠে আজকের বড়তলা নামে।

Advertisment

বটতলা আছে বটতলাতেই!
একটা বটগাছকে ঘিরে এলাকার নামকরণ হয়েছিল বটতলা। বটতলার সাহিত্যচর্চা সম্পর্কেও নানা কথা প্রচলিত আছে। ইতিহাস বলে, এই বটতলা এলাকাতেই পুরাতন ছাতুবাবু বাজারের কাছে বসত চড়কের মেলা। একটি বটগাছকে কেন্দ্র করে আয়োজিত ওই মেলা ছিল সবচেয়ে পুরোনো চড়কের মেলা। আর, সেই কারণেই জায়গাটির নামকরণ হয় বটতলা। কথিত আছে, এই চড়কের মেলায় গাজন সন্ন্যাসীর চৈত্র সংক্রান্তি উদযাপন করতেন। হত বেনে মোড়গের লড়াই। তবে, বটগাছটি আজ না-থাকলেও সেই মেলার ঐতিহ্য আজও টিকে আছে।

publive-image
বড়তলার সেকাল ও একাল।

বসত জমজমাট বাজার
কলকাতার বড়তলা এলাকার বয়স ঠিক কত? বলাটা গবেষণা সাপেক্ষ। তবে পুরনো নথি ঘেঁটে একটা কথা জানা যায়। তা হল: ১৭৩৮ থেকে ১৭৫২ সালের মধ্যে কলকাতার বড়তলা বাজার এবং জানবাজার থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আয় হয়েছিল সেসময়ের মূল্য অনুযায়ী ১১,৪২১ টাকা। অর্থাৎ তার বহুদিন আগে থেকেই এই এলাকায়, মানে সুতানুটি গ্রামের এই অংশে, ভালোরকম জনবসতি ছিল। এর কাছেপিঠেই ১৬৯০ সালে নৌকো থেকে গঙ্গার ঘাটে নেমেছিলেন জোব চার্নক। জনবিরল এলাকায় আর যাই হোক, গমগমে বাজার তো আর বসতে পারে না। অর্থাৎ, সেই সময়েই বটতলা বা আজকের বড়তলা ছিল রীতিমতো জমজমাট।

কাছেই শোভাবাজার রাজবাড়ি
ইংরেজিতে বানানটা যতই Burtolla হোক, বাংলায় তো তা বটতলাই। যদিও ইংরেজির অনুকরণে বাংলাতেও বড়তলা লেখা হয় বেশিরভাগ সময়ই। পুরো নাম বলতে গেলে বলতে হয়, শোভাবাজার বটতলা। বড়তলা থানা থেকে প্রায় ৭০০ মিটারের দূরত্বে শোভাবাজার রাজবাড়ি। যে রাজবাড়ির প্রতিষ্ঠাতা রাজা নবকৃষ্ণ দেব। তাঁর পুত্র রাজা রাজকৃষ্ণ দেবের নামাঙ্কিত রাস্তার ওপরেই দাঁড়িয়ে থানা।

publive-image
বদলেছে থানার ছবিটাও।

বটগাছটি ছিল থানার কাছেই
ইতিহাস অনুযায়ী, ১৮৮৮ সালে প্রথম নির্মিত থানা ভবনের কাছেই ছিল বটগাছটি। বর্তমান থানা ভবনের নির্মাণ শেষ হয় ১৯২৭ সালে। চেহারা-ছবিতে যার হুবহু মিল রয়েছে শহরের আরও তিনটি থানা ভবন- জোড়াসাঁকো, হেয়ার স্ট্রিট, ভবানীপুরের সঙ্গে। কলকাতা শহরের প্রথম ২৫টি পুলিশ সেকশন হাউজের মধ্যে চারটি হল এই- বড়তলা, জোড়াসাঁকো, হেয়ার স্ট্রিট এবং ভবানীপুর থানা।

বিরল হলেও থানায় ওয়াচ টাওয়ার
বড়তলা থানার ওসি দেবাশিস দত্ত বলেন, 'এই থানাতে যখন আমি এলাম, চিন্তা করে দেখলাম, সুতানুটির একটা ভাবধারা যখন এই চত্বর বহন করে চলেছে, আমরা এই থানাতেই সুতানুটির ইতিহাস ও গরিমার সঙ্গে সাযুজ্যতা বজায় রেখে কিছু করব। এই থানার ওপরে আছে ওয়াচ টাওয়ার। একটা থানার ওপরে ওয়াচ টাওয়ার খুব বিরল। সেই ওয়াচ টাওয়ার থেকে একজন কনস্টেবল নজর রাখত এবং গুলি করত।' স্বদেশিদের ওপর।

আরও পড়ুন- অনন্য কৃতিত্ব! কলকাতা পুলিশের দুই সাব-ইনস্পেক্টরের নামে লন্ডনে গবেষণাক্ষেত্রে পুরস্কারের নামকরণ

থানায় সাইরেন
ওয়াচ টাওয়ারের কাছেই রয়েছে সাইরেন। দীর্ঘদিন (প্রায় ৩০ বছর) সেই সাইরেন নষ্ট হয়ে পড়েছিল। বহু বিশেষজ্ঞকে ডাকা হয়েছিল। তাঁরা পারেননি। শেষে ওই সাইরেন মেরামত করেছেন স্থানীয় মিস্ত্রি সিদ্ধেশ্বর দত্ত। তিনি বলেন, 'সপ্তাহে একদিন এই সাইরেন চালাতেই হবেই। না-হলে তার সাউন্ডের ব্যবস্থাটা নষ্ট হয়ে যাবে।' ১৯৪২-৪৩ সালে জাপানিরা কলকাতা শহরের ওপর বোমাবর্ষণ করেছিল। কারণ, শহর কলকাতা ছিল এশিয়ায় ব্রিটিশ এবং মার্কিন বাহিনীর রসদের ঘাঁটি। সেই সময় জাপানি বিমান হানা দিলেই শহর কলকাতায় সাইরেন বাজানো হত। এই ব্যাপারে স্থানীয় বাসিন্দা কানু ভট্টাচার্য বলেন, 'এখন আমরা আবার সাইরেনের শব্দ শুনতে পাচ্ছি। পুরোনো স্মৃতি ফিরে আসছে। আমরা সেই ছোটবেলায় সাইরেনের শব্দ শুনে বুঝতাম, এই সময়টায় স্কুলে যেতে হবে।'

kolkata police history Police Station
Advertisment