নার্সিংহোমের অপারেশন থিয়েটার থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হল এইচ আই ভি আক্রান্ত নাবালক রোগীকে। গত শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটলেও এদিন তা সামনে এসেছে। বর্তমানে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ওই নাবালক। জানা গিয়েছে, তার পায়ে অস্ত্রোপচার করতে হবে। ঘটনার পর নার্সিংহোমের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানিয়েছে পীড়িতের মা। গোটা ঘটনার নিন্দা করেছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ডাঃ রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। ঘটনার জেরে শহর জুডেও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সোচ্চার হয়েছে একাধিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা।
গত ৯ তারিখ রাতে বেলাকোবায় নিজের বাড়ির সামনেই খেলছিল ওই নাবালক। অভিযোগ সেই সময় দ্রুত গতিতে পেছন থেকে আসা একটি বাইক সজোরে তাকে ধাক্কা মারলে ছিটকে পড়ে। পায়ে চোট পায় সে। এরপরেই স্থানীয় এক যুবকের মদতে নাবালকের মা দ্রুত তাকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। রোগীকে পরীক্ষা করে চিকিৎসকেরা জানান রোগীর পায়ে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন, যা সেখানে সম্ভব নয়। সেখান থেকেই রাতে শিলিগুড়ি নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। রাত দুটো নাগাদ অ্যাম্বুলেন্সে করে জলপাইগুড়ি থেকে শিলিগুড়িতে একটি নার্সিংহোমে নিয়ে আসা হয়। রাত ২ টো নাগাদ ওই রোগীকে ভর্তি করে নেয় নার্সিংহোম। সকালে নার্সিং হোমের তরফ থেকে জানানো হয় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজনের কথা। অগ্রিম ২০ হাজার টাকা জমাও করতে বলা হয় রোগীর পরিবারকে। সেইমতো নির্দিষ্ট অংকের টাকা জমাও করা হয়।
আরও পড়ুন, সরকারি সহায়তাতেই সরোবরে ছট?
নার্সিং হোমে ভর্তি করার সময়েই নাবালকের মা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে তাঁর সন্তান HIV পজিটিভ। জানিয়েছিলেন তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজনেই HIV পজিটিভ হওয়ার কারণেই তাঁদের সন্তানও এ হেন পরিস্থিতির শিকার। সেইসময়ে নার্সিং হোম কর্তৃপক্ষর তরফে বাক্যব্যয় করা হয়নি। শনিবার বিকেল ৪ টা নাগাদ অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয় ওই নাবালককে। অভিযোগ, অপারেশন থিয়েটার থেকে মিনিট পনেরো পরেই বেরিয়ে আসেন চিকিৎসক। বলেন, এইচ আই ভি পজিটিভি রোগীর অপারেশন করবেন না তিনি। নাবালকের পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, আগাম দেওয়া ২০ হাজার টাকা থেকে ১৪ হাজার টাকা কেটে ৬ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে রোগীকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিপাকে পড়ে ওখানে বসে কান্নাকাটি করতে থাকেন নাবালকের মা। সে সময়ে নার্সিংহোমে চিকিৎসা করাতে আসা রিমঝিম সরকার নামের এক মহিলার নজরে আসে গোটা বিষয়টি। তিনি গোটা ঘটনা জানার পর উদ্যোগ নিয়ে ওই নাবালককে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করেন। বর্তমানে সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছে নাবালক।
মেডিক্যালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চার-পাঁচদিন বাদে নাবালকের পায়ে অস্ত্রোপচার করা হবে।চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই বলে জানিয়েছেন মেডিক্যালের সুপার কৌশিক সমাজদার।
অন্যদিকে এমন ঘটনায় শহরজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠেছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থার হাল নিয়েও নানান প্রশ্ন তুলেছেন শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে রোগী কল্যাণ সমিতি চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেন, 'অমানবিক ঘটনা, এমনটা করা ঠিক হয়নি। সিএমওএইচ কে বলেছি তদন্ত করতে।'