HM initiates disciplinary action against Kolkata CP-DCP: পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালকে 'বদনাম' করার অভিযোগে কলকাতার পুলিশ কমিশনার ও এক ডিসিপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস নিজে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল ও কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ডিসিপি) সেন্ট্রাল ইন্দিরা মুখার্জির বিরুদ্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। তার ভিত্তিতেই হস্তক্ষেপ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রাজ্যপাল তাঁর রিপোর্টে জানিয়েছেন, ওই দুই পুলিশকর্তা, 'এমনভাবে কাজ করছে যা সম্পূর্ণরূপে একজন সরকারি কর্মচারীর পক্ষে অশোভন।'
জুনের শেষের দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে রাজ্যপাল বোস ওই রিপোর্ট পেশ করেছেন। সেখানে তিনি কলকাতা পুলিশের অফিসাররা কীভাবে ভোট-পরবর্তী হিংসার শিকার ব্যক্তিদের রাজ্যপালের অনুমতি সত্ত্বেও তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বাধা দিয়েছিলেন, সেই বিষয়গুলোকে তুলে ধরেছেন। তার প্রেক্ষিতেই, 'স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ওই আইপিএস অফিসারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু করেছে।' সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক আধিকারিক। তিনি জানিয়েছেন, গত ৪ জুলাই চিঠির কপি রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানোও হয়েছে।
রাজভবনে মহিলা কর্মচারির শ্লীলতাহানির অভিযোগ সম্প্রতি রাজ্য রাজনীতিতে ছাপ ফেলেছে। তার প্রেক্ষিতে রাজ্যপাল রাজভবনে নিযুক্ত পুলিশ অফিসারদের বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, 'এই আইপিএস অফিসাররা তাঁদের কাজের মাধ্যমে শুধুমাত্র গভর্নরের অফিসকে কলঙ্কিত করেনি বরং এমনভাবে কাজ করেছে যা একজন সরকারি কর্মচারির জন্য সম্পূর্ণরূপে অশোভন। তাঁরা সুবিধা লাভের জন্য আচরণবিধি উপেক্ষা করার রাস্তা বেছে নিয়েছেন।'
তাঁর রিপোর্টে রাজ্যপাল বোস রাজ্যপালের কার্যালয়ের আপত্তি সত্ত্বেও, রাজভবনের কর্মীদের পরিচয়পত্র দেওয়া এবং এবং প্রবেশ ও প্রস্থানের সময় সেই পরিচয়পত্র খতিয়ে দেখার নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি রিপোর্টে জানিয়েছেন, 'পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অংশ থেকে হিংসার শিকারদের একটি প্রতিনিধিদলকে নেতৃত্ব দিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজভবনে নিয়ে আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু, সেই প্রতিনিধিদের তাঁর সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। শুধু তাই নয়, পরবর্তীতে ওই প্রতিনিধিদের আটকেও রাখা হয়। যা রাজ্যপালের সাংবিধানিক কর্তৃত্বের অবমাননা।' এমনটাই জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ওই আধিকারিক।
রিপোর্টে রাজ্যপাল জানিয়েছেন, রাজভবন থেকে পুলিশকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য গত ১৩ জুন রাজ্যপাল নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেই আদেশ পালনের ব্যাপারে কলকাতা পুলিশ, 'সম্পূর্ণ নীরব' থেকেছে। যাকে, 'আদেশ অমান্য করার নজির হিসেবে দেখা হয়েছে।' রিপোর্টে রাজ্যপাল আরও লিখেছেন, 'জুন মাসের মাঝামাঝি থেকে কলকাতা পুলিশ রাজভবনে একতরফাভাবে রাজ্যপালের জ্ঞান এবং সম্মতি ছাড়াই একটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু করেছে। যা, কার্যত ওয়াচ এবং গ্রেফতারের মত ব্যাপার।'
রাজ্যপালের রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজভবনের একজন প্রাক্তন কর্মচারী তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ এনেছেন। একটি প্রাথমিক অভ্যন্তরীণ তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই অভিযোগ আসলে 'পূর্বলিখিত স্ক্রিপ্ট'-এর অংশ। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ওই অভিযোগের ভিত্তিতে, 'কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল ও ডিসিপি ইন্দিরা মুখার্জি অস্বাভাবিক গতির সঙ্গে একটি বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট (SIT) গঠন করেছিলেন এবং একটি মিথ্যা ধারণা তৈরি করতে মিডিয়া ব্রিফিং চালিয়েছিলেন যে রাজ্যপাল ফৌজদারি মামলার মুখোমুখি হতে পারেন।'
রাজ্যপালের রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিনীত গোয়েল ও ইন্দিরা মুখার্জি ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে আরেকটি 'অভিযোগ' প্রচারে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছেন। সেই ব্যাপারে রাজ্যপাল তাঁর রিপোর্টে লিখেছেন, 'এটি জানা গেছে যে কলকাতা পুলিশ স্থানীয় থানায় একটি জিরো এফআইআর নথিভুক্ত করেছে এবং মামলাটি নয়াদিল্লিতে স্থানান্তর করেছে। অথচ, ২০২৪ সালের ১৭ জুন, অভিযোগকারী প্রকাশ্যে বলেছিলেন যে রাজ্যপালের বিরুদ্ধে তাঁর কোনও অভিযোগ নেই। আর, তিনি সেই অভিযোগ প্রত্যাহার করতে চান। তবে, কলকাতা পুলিশ তাঁকে তা করতে দেয়নি।'
রাজ্যপাল রিপোর্টে জানিয়েছেন, তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখে গোয়েল ও মুখার্জির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু, কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। অথবা, মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কোনও যোগাযোগ করা হয়নি। রিপোর্টে রাজ্যপাল চোপড়া হিংসার শিকার ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করার জন্য শিলিগুড়িতে তাঁর সাম্প্রতিক সফরের কথাও উল্লেখ করেছেন। সেই সফরের সময়, রাজ্যের কিছু আধিকারিকের আচরণ নিয়ে তিনি প্রশ্ন তুলেছেন।
রিপোর্টে রাজ্যপাল লিখেছেন, 'ওই আধিকারিকদের আচরণ সর্বভারতীয় পরিষেবার নিয়ম এবং প্রোটোকল ম্যানুয়াল মেনে চলেনি। রাজ্য সরকারকে রাজ্যপালের সফরের ব্যাপারে যথাযথভাবে অবহিত করা হয়েছিল। কিন্তু, প্রোটোকল স্পষ্ট লঙ্ঘন করে দার্জিলিঙের ডিএম এবং শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার রাজ্যপালকে ডাকেননি। দুর্ভাগ্যবশত, এটা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এরকম একদফা ঘটনা ঘটেছে।'
আরও পড়ুন- যাত্রী স্বার্থে অকল্পনীয় উদ্যোগ রেলের, তুফানি যাত্রার দুরন্ত বন্দোবস্ত জানলে তাজ্জব হবেনই
রাজ্যপালের এই সব অভিযোগের ব্যাপারে কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল জানিয়েছেন, তাঁর কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পদক্ষেপ সম্পর্কে কোনও তথ্য নেই। তিনি বলেন, 'যদি কিছু আসে, তা রাজ্য সরকারের কাছে গিয়েছে।' ইন্দিরা মুখার্জিও জানিয়েছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের পদক্ষেপ সম্পর্কে তাঁর কাছেও কোনও তথ্য নেই।