করোনা রুখতে হোম আইসোলেশনে নতুন গাইডলাইন ইতিমধ্যেই প্রকাশ করেছে কেন্দ্র। ১৪ দিনের বন্দিদশা কমে করা হল ৭ দিন। নয়া নির্দেশিকায় নিভৃতবাসের নতুন নিয়ম জারি করল কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। তবে তা শর্তসাপেক্ষে।
মৃদু উপসর্গ বা উপসর্গহীন কোভিড পজিটিভ আক্রান্তের যদি অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৩ % এর উপরে থাকে তাহলে সংক্রমিত ব্যক্তিকে হোম আইসোলেশনে রাখা যাবে। কিন্তু যদি সংক্রমিত ব্যক্তির ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি জ্বর তিন দিন ধরে থাকে বা নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয় অর্থাৎ অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯৩ %-র নিচে চলে যায়, হাতে পায়ে অসম্ভব ব্যথা বা ফুলে যাওয়া বুকে ব্যথা এই সমস্ত ক্ষেত্রে অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে।
হোম আইসোলেশনের ক্ষেত্রে উপসর্গহীন সংক্রমনগ্রস্ত ব্যক্তিরা সাত দিন পরেই ফিরতে পারবেন নিজের স্বাভাবিক জীবনে। এক্ষেত্রে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ৭দিন পরে নতুন করে টেস্ট করানোর প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ করোনা প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় যে ১৪ দিন হোম আইসোলেশনের সময় ছিল সেটা কমিয়ে ৭ দিন করা হল।
দেশে করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির নতুন পর্বে মৃদু উপসর্গের রোগীর সংখ্যাই বেশি বলে জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। তাঁদের বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানাল, একজন করোনা আক্রান্তের যদি পর পর তিনদিন জ্বর না আসে তবে রিপোর্ট পজিটিভ হওয়ার সাত দিন পর তাঁরা নিভৃতবাস থেকে বের হতে পারেন।
তবে যেভাবে সংক্রমণ বেড়ে বিদ্যুৎ গতিতে বাড়ছে, এই সাতদিনের নিভৃতবাস আইসোলেশন নিয়ে উদ্বিগ্ন চিকিৎসকমহল, কি বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
নয়া এই নির্দেশিকা প্রসঙ্গে অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস অফ ডক্টরর্স এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা জানিয়েছেন, “চিকিৎসা বিজ্ঞান কখনও এভাবে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে চলে না। আমাদের মনে রাখতে হবে করোনা তৃতীয় ঢেউয়ে কেবল ওমিক্রন নয়, তার সঙ্গে ডেল্টা প্রজাতির দ্বারাও প্রচুর সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন, দ্বিতীয় ঢেউ কালে বেশিরভাগ মানুষ আক্রান্ত হয়েছিলেন ডেল্টা প্রজাতিতে। সেখানে দেখা গিয়েছিল সাতদিনের পর থেকেই রোগীদের শরীরে নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে, এবং তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে। নতুন এই নির্দেশিকা অনুসারে, যদি কোন রোগীর সাতদিন পর কোনরকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয় তবে তার দায় সরকার নেবে তো! তিনি আরও বলেন নতুন এই নির্দেশিকা মূলত দুটি কারণে করা হয়েছে-
১. যে হারে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন এই সময় তাতে করে যাতে হাসপাতালে বেডের অকাল দেখা না যায় তার জন্য যত দ্রুত সম্ভব রোগীদের হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।
২. বিপুল সংখ্যক ফ্রন্ট লাইন ওয়ার্কার, ডাক্তার নার্স, স্বাস্থ্য কর্মী ইনফেক্টেড হচ্ছেন। ফলে চিকিৎসক ব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। তাঁরা যেন দ্রুততার সঙ্গে কাজে যোগ দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করা। তা না হলে হাসপাতালে ভিড় উপচে পড়বে খুব তাড়াতাড়ি”।
অন্যদিকে চিকিৎসক পুণ্যব্রত গুঁই নয় এই নির্দেশ নিয়ে একই সুরে কথা বলেছেন। তাঁর মতে, “কোন রোগী করোনায় আক্রান্ত হলে তিনি কবে সুস্থ হযে উঠবেন তা দিনক্ষণ দেখে ঠিক করা চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিপন্থী।
সাতদিনের যে নিয়ম করা করা হয়েছে তা মূলত দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোকে স্বাভাবিক রাখতে। একজন ডাক্তার টিকা নেওয়ার পরেও করোনা আক্রান্ত হলেন, তাকে প্রথমেই মনে রাখতে হবে সাতদিনের মধ্যে তাকেও আবার সুস্থ হয়ে কাজে ফিরতে হবে। এটা ভয়ানক ঝুঁকিপূর্ণ। সাতদিন পরে তাঁর শরীরে গুরুতর সমস্যা দেখা দিলে তার জন্য কে দায়ী থাকবেন”। তিনি আরও জানান, “ব্যক্তিগত ভাবে আমি এই গাইডলাইনের সঙ্গে একমত নই”।
অপর দিকে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ইন্দ্রনীল চৌধুরী জানান “অনেকের ক্ষেত্রে ১২ থেকে ১৫ দিন পরেও করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ হয়না। আমি আমার অনেক রোগীর ক্ষেত্রে এরকমই লক্ষ্য করেছি। নতুন এই নির্দেশিকা কিভাবে বাস্তবায়িত করা সম্ভব তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তিনি”। সব মিলিয়ে কেন্দ্রের সাতদিনের নিভৃতবাস নির্দেশিকা নিয়ে চিন্তিত খোদ চিকিৎসক মহল।