Advertisment

বাতিল বোতলেই ‘সুরের সৃষ্টি’, চমকে দেওয়া ‘হাতের জাদু’তে সোমনাথের তাক লাগানো কীর্তি  

বাড়িতে সাজিয়ে রাখার জন্য, উপহার দেওয়ার জন্য এই সকল মিনিয়েচার বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা আকাশছোঁয়া।

author-image
Sayan Sarkar
New Update
Various imitations of musical instruments are being made from coconut shell, which are in high demand both domestically and abroad, music instrument made with coconut shell, shrirampur, handmade music instruments showpiece, music instrument showpiece made with coconut shell, Indian classical music instrument made with coconut shell at Hooghly Shrirampur, সুরের জাদুকর’

বাতিল বোতলেই ‘সুরের সৃষ্টি’, চমকে দেওয়া ‘হাতের জাদু’তে সোমনাথের তাক লাগানো কীর্তি

বাতিল বোতল, নারকেলের মালা থেকে টাইলস! নিমেষেই সুর বাঁধেন শ্রীরামপুরের সোমনাথ। ছোট থেকেই ‘সুরের পৃথিবীতে’ বেড়ে ওঠা। বাবা ছিলেন গুণী শিল্পী। বাবার হাত ধরেই সুরের তালিম নেওয়া। সৃষ্টি সবসময়ের জন্য আকর্ষণ করত সোমনাথকে। ছোট বয়সেই বাবাকে হারান, ছেদ পড়ে সুরে। তবুও ‘শব্দ নিয়ে খেলার’ অদম্য ইচ্ছাতে কখনও ভাটা পড়েনি।

Advertisment

কাঁচের বোতল সিরামিক টাইলস, কাঁচের গ্লাস, বাঁশ থেকেই তৈরি করেন একের পর এক তাক লাগানো বাদ্যযন্ত্র। তালিকায় রয়েছে প্লাস্টিক বোতল তরঙ্গ, কাঁচ তরঙ্গ, সিরামিক টাইলস তরঙ্গ, আরও কত কী... এরই সঙ্গে নারকেলের মালা থেকে বানাচ্ছেন কখনও বিনা, কখনও তবলা, ডুগি....! সোমনাথের খ্যাতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে পৌঁছে গিয়েছে বিদেশেও। সুদূর অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, আমেরিকা পাড়ি দিয়েছে সোমনাথের হাতের তৈরি বীণা, তানপুরা, ব্যাঞ্জ, মিলেছে স্বীকৃতিও। ইতিমধ্যেই নাম তুলেছেন ‘ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ডসে’। সোমনাথের এমন প্রতিভা তাক লাগাতে বাধ্য।

বাতিল বোতল থেকে টাইলস, কাঁচের গ্লাস থেকে শুরু করে বাঁশ পিভিসি পাইপে তৈরি একের পর তাক লাগানো বাদ্যযন্ত্র গড়ে নজির গড়েছেন স্বনামধন্য সঙ্গীত ও বাদ্যশিল্পী নিরদবরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুযোগ্য পুত্র সোমনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়। বাবার হাত ধরেই সঙ্গীতে হাতেখড়ি। বাবার মৃত্যুর পর সংসার চালানোর তাগিদে ছেদ পরে সুরচর্চায়।

সোমনাথ বলেন, “শেষবারের মত কলেজের নবীনবরণের অনুষ্ঠানে বাজিয়েছিলাম, তারপর কেটে গিয়েছে দীর্ঘ বছর, সুরের সঙ্গে একেবারে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলান। সংসার চালাতে গারমেন্ট ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে যুক্ত হই। কিন্তু নতুন সুরের সৃষ্টির খিদে বরাবরই আমাকে গ্রাস করত। কিন্তু সেই সময় এবং পরিস্থতি ছিল না। অবশেষে স্ত্রী গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছাতেই ২০১০ সালে বাবার স্মৃতিচারণায় বাড়িতেই বসে এক সঙ্গীতের আসর। তবে তাক লাগানো একের পর এক আবিষ্কারের শুরুটা ২০১৫ সালে। একেবারে নাটকীয় ভাবেই”।

তিনি আরও বলেন, “তখন বাড়িতে টাইলেসের কাজ চলছিল, হঠাৎ করেই এক মিস্ত্রির হাত থেকে একটি টাইলস পড়ে যাওয়ায় সৃষ্টি হয় এক মিষ্টি সুরের, সেই সুর ধরা পড়ে আমার কানে। আমি সেটা নিয়ে বারে বারে সুর সৃষ্টির চেষ্টায় মেতে উঠি। অবশেষে আসে সাফল্য, এবং আমার প্রথম সৃষ্টি সিরামিক টাইলস তরঙ্গ। এরপর একের পর এক বাদ্যযন্ত্র তৈরি করার খিদে আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। নিজের চেষ্টায় জোগাড় করতে থাকি নানান জিনিস, তার মধ্যে রয়েছে কাঁচ। পিভিসি পাইপ, বাঁশ, সসের বোতল, কোল্ড ড্রিঙ্কের বোতল, কাঁচের গ্লাস। তৈরি করি প্লাস্টিক বোতল তরঙ্গ, কাঁচ তরঙ্গ, সিরামিক টাইলস তরঙ্গ, আরও কত কী”।

সোমনাথের এমন বাদ্যযন্ত্র তাক লাগিয়েছে সকলকেই। ইতিমধ্যেই মিলেছে একাধিক স্বীকৃতি। সারেগামা’র মঞ্চেও সোমনাথের সুরের ঝড় তাক লাগিয়েছে লক্ষ লক্ষ শ্রোতাকে। এর সঙ্গে সঙ্গে সোমনাথ নারকেলের মালা দিয়ে তৈরি করেন বাদ্যযন্ত্র। দেশ থেকে বিদেশে যার চাহিদা বাড়ছে দিনের পর দিন। কখনও বিনা, কখনও তবলা, ডুগি সবই তৈরি হচ্ছে নারকেলের মালা দিয়েই।

এমন সৃষ্টির কথায় সোমনাথ বলেন, “অতিমারি পরিস্থিতিতে সব কিছু বন্ধ… হঠাৎ করেই নাড়ু খাওয়ার ইচ্ছাতেই নারকেলের খোঁজে বাজারে যাওয়া, গিয়ে একটি নারকেলে দেখে মাথায় এক অদ্ভুত ইচ্ছা জাগে, সোজা বাড়িতে নিয়ে এসে তাকে ঝাড়াই-বাছাই করে মিনিয়েচার ঢোল তৈরি করি। তারপর থেকেই নারকেলের মালা দিয়ে একের পর এক মিনিয়েচার বাদ্যযন্ত্র তৈরি করি। মানুষজন বাড়িতে সাজিয়ে রাখার জন্য, উপহার দেওয়ার জন্য এই সকল মিনিয়েচার বাদ্যযন্ত্রের চাহিদা আকাশছোঁয়া। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ব্রিটেনে আমার তৈরি এই সকল মিনিয়েচার বাদ্যযন্ত্র ইতিমধ্যেই গিয়েছে। প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে এই সকল আইটেমের চাহিদা অনেকটাই বেশি”। আপাতত সুর আর সৃষ্টিতে ডুবে থাকতে চান ‘সুরের জাদুকর’ সোমনাথ। 

Homemade musical instruments kolkata news West Bengal
Advertisment