Advertisment

School teacher feeds the homeless: দুঃস্থের সেবায় প্রাণপাত অমরেশের, ভাই-বোন জুটির মহান কর্মকাণ্ডকে কী বিশেষ বার্তা দিলেন মহারাজ?

মানুষগুলোকে যাতে অনাহারে না ঘুমাতে হয় তার জন্য প্রাণপাত করে চলেছেন অমরেশ। এই কর্মকাণ্ডে পাশে পেয়েছেন তাঁর স্কুল শিক্ষিকা দিদি মন্দিরা আচার্যকেও।

author-image
Sayan Sarkar
New Update
school teacher amaresh acharya,

দুঃস্থের সেবায় প্রাণপাত অমরেশের, ভাই-বোন জুটির মহান কর্মকাণ্ডকে কী বিশেষ বার্তা দিলেন মহারাজ?

'ধর্ম নয় কর্মই হোক তোমার আসল পরিচয়'…! কিছু মানুষ তাঁর কর্মের মধ্য দিয়ে মৃত্যুর পরেই মানুষের মধ্যে বেঁচে থাকেন। কিছু মানুষের কর্মকাণ্ড মানুষের মন ছুঁয়ে যায়। লাখো মানুষকে অনুপ্রাণিত করে। নদীয়ার স্কুল শিক্ষক অমরেশ আচার্য তাদেরই মধ্যে একজন, যিনি কোভিড কালের সময় থেকে অসহায় দুঃস্থ মানুষগুলোকে যাতে অনাহারে না ঘুমাতে হয় তার জন্য প্রাণপাত করে চলেছেন। অমরেশ এই কর্মকাণ্ডে পাশে পেয়েছেন তাঁর স্কুল শিক্ষিকা দিদি মন্দিরা আচার্যকেও। নিজের বেতনের টাকা দিয়ে এই সব অসহায় হতদরিদ্র মানুষগুলোর সেবায় প্রাণপাত করে চলেছেন এই ভাই-বোন জুটি। তাঁদের এই কর্মকাণ্ডকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সমাজের সকল স্তরের মানুষ।

Advertisment

৩৬৫ দিনই অমরেশ নিজের হাতেই রান্না করে খাওয়ান গবীর অভুক্ত মানুষগুলিকে। কথাতেই আছে যার কেউ নেই তার ভগবান আছেন। আর এই কথাটাই মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন কৃষ্ণনগরের অসহায় মানুষগুলি। নিজের চোখে সৃষ্টিকর্তাকে না দেখলেও অমরেশের এহেন উদ্যোগ তাদের নতুন করে বাঁচতে শিখিয়েছে। রোজ সকাল ৬টায় নিজের স্কুটির দুপাশে ১৩ কেজির দুটো দুধের ক্যান লাগিয়ে বের হন অমরেশ। সঙ্গে থাকে বিস্কুট। বাংলার এই রিয়েল লাইফ সুপার হিরোর গল্প আজ অনেকের কাছেই এক অনুপ্রেরণা।

করোনা সংকটে তখন থমকে গোটা দেশ। হঠাৎ করেই এক ভিক্ষুক একমুঠো ভাত খেতে চান অমরেশের কাছে। কিন্তু সেদিন ট্রেন এসে যাওয়ায় তিনি তাঁকে খাওয়াতে না পেরেই চলে যান। সেই থেকে শুরু। সেদিনের সেই ভিক্ষুককে না খাওয়ানোর যন্ত্রনাটা তিলে তিলে গ্রাস করেছিল অমরেশকে। এই ঘটনাই ঘুরিয়ে দেয় অমরেশের জীবনের মোড়।

কৃষ্ণনগরের এক স্কুলের পদার্থ বিজ্ঞানের শিক্ষক অমরেশ । ৪৩ বছর বয়সী এই শিক্ষকের সংসার বলতে মা, দিদি আর ভাগ্নে। যদিও অমরেশের কথায় এই গোটা জগৎ- সংসার থাকতে তার আর আলাদা করে সংসারের কোন প্রয়োজন নেই। তাই শীত গ্রীষ্ম, বর্ষা প্রতিদিন ভোর সাড়ে চারটেয় ঘড়িতে অ্যালার্ম দিয়ে ঘুম থেকে ওঠেন তিনি। সকালের বাজার সেরেই স্কুটির দুপাশে দুটি ১৩ কেজির ক্যান লাগিয়ে বেরিয়ে পড়েন মানুষের সেবার উদ্দেশ্যে। বাড়ি থেকে সাত কিলোমিটার দূরে ভূতপাড়া। সেখানে মাস্টার মশাইয়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকে দুঃস্থ শিশুরা। সকলের জন্য দুধ বিস্কুট এনে নিজের হাতে সকলের মুখে তা তুলে দেন তিনি।

খাওয়া দাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সমান তালে চলে পড়াশুনা। এরপর সকাল সাড়ে নটা নাগাদ বাড়ি ফিরে স্কুল। স্কুল শেষে ৬টার মধ্যে বাড়ি ফেরেন তিনি। ততক্ষণে অবশ্য মা আর দিদি মিলে রাতের রান্না অনেকটাই সেরে রাখেন। এরপর নিজেই হাতে রান্নার কাজে হাত লাগান। সাড়ে আটটা বাজতেই কৃষ্ণনগর রেলস্টেশন সংলগ্ন ৪০ জনের বেশি অসহায় দুঃস্থ মানুষের খাবার কনটেইনারে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন অমরেশ। সকলের মুখে খাবার তুলে রাত্রের বাড়ি ফেরেন নদীয়ার এই স্কুল শিক্ষক। প্রায় তিন বছরেও বেশি সময় ধরে এই কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন অমরেশ। আর এই সংসার সামলাতে প্রতি সপ্তাহে ১২-১৩ হাজার টাকা খরচ হয় তাঁর।

অমরেশের সংসার সামলাতে দিদিও যোগ্য সঙ্গ দিয়েছেন। সমাজের বেশ কিছু মানুষ অমরেশের এই কর্মকাণ্ডে তাঁর পাশে থেকেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন মনোজিত, সৌমিক,পলাশ, কুন্তলা, মনিকা, সাহেব এবং জয়দেব আরও অনেকেই। সোশ্যাল মিডিয়ায় অমরেশের এই কর্মকাণ্ডের ভিডিও ভাইরাল হতেই অমরেশকে কুর্নিশ জানিয়েছেন দেশ-বিদেশের অজস্র মানুষ।

অমরেশ বলেন, 'আমাদের দেশের সব থেকে বড় সমস্যা অপুষ্টি ও শিক্ষা। আমি আমার এই কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে কিছু সংখ্যক মানুষকে যদি এই দুই সামাজিক সংকট থেকে বের করে আনতে পার তাহলে তারা আগামী দিনে আরও দশ জনকে পথ দেখাবে। আখেড়ে আমাদের দেশটা অনেকটাই এগিয়ে যাবে'। শিক্ষক ভাই-বোনের এহেন উদ্যোগে স্যালুট। সম্প্রতি দাদাগিরির মঞ্চেও ডাক পড়েছিল অমরেশের। সেখান থেকে অমরেশের এই কর্মকাণ্ডকে বাহবা দেওয়ার পাশাপাশি সমাজের সবাইকে অমরেশের এই মহান কাজে সামিল হওয়ার বার্তা দিয়েছেন সৌরভ। পাশাপাশি অমরেশের এহেন কর্মকাণ্ডের একটি শর্ট ভিডিও ক্লিপিংসও চালানো হয় দাদাগিরির মঞ্চে।

West Bengal school TEACHERS
Advertisment