হাওড়া পুরভোটের ঢাকে কাঠি পড়ার জোরাল ইঙ্গিত। শুক্রবার সর্বদলীয় বৈঠক শেষে নতুন বছরের শুরুতেই হাওড়া পুরভোটের ইঙ্গিত দিয়ে দিলেন হাওড়া জেলাশাসক। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের দেওয়া মহিলা সংরক্ষণের খসড়া নোটিসও বিতরণ করা হয়েছে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের মধ্যে। তবে এই খসড়া তালিকা ঘিরেই শুরু হয়েছে তীব্র জল্পনা। কারণ, খসড়া তালিকায় পাশ হওয়া মহিলা সংরক্ষণের পুনর্বিন্যাসে কপালে ভাঁজ পড়েছে ২০১৩ সালের পুরভোটে জয়ী একাধিক কাউন্সিলার ও মেয়র পারিষদদের। খসড়া তালিকা অনুযায়ী এবার প্রায় ১৩ জন কাউন্সিলার বাদ পড়তে চলছেন। নির্বাচন কমিশনের দাবি, নিয়ম অনুযায়ীই ‘রোস্টার’ ফলো করে এই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। এই নির্দেশিকার উপর কারও কোনও বক্তব্য থাকলে তা আগামী ২ জানুয়ারির মধ্যে নির্বাচন কমিশনকে জানাতে হবে।
তবে জল্পনা ও আশঙ্কার মধ্যেই বহুকাঙ্খিত হাওড়া পুরভোটের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় খুশি সব রাজনৈতিক দলই। নির্বাচন কমিশনের দাবি, ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ ও এদিনের দেওয়া খসড়া তালিকার উপর রাজনৈতিক দলগুলির বক্তব্য পেশের জন্য দেওয়া সময় অতিক্রম করলেই আগামী জানুয়ারী মাসের ৮ তারিখ চুড়ান্ত খসড়া তালিকা পেশ করা হবে এবং তখন থেকে দশ সপ্তাহ পর নির্বাচনের দিন ঘোষোণা করবে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য ভোট কিছুটা পিছলেও সম্ভবত এপ্রিলের মাঝামাঝি সম্পন্ন হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
হাওড়া পুর নির্বাচন ঘিরে নয়া জল্পনা। ছবি- অরিন্দম বসু
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ১০ই ডিসেম্বর সপ্তম হাওড়া পুরবোর্ডের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। এরপর এক বছরেরও বেশী সময় ধরে রাজ্য সরকার প্রশাসক বসিয়ে পুর পরিষেবা চালু রেখেছে। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ থেকে রাজনৈতিক দল, সব তরফেই পুর পরিষেবা নিয়ে নানা অভিযোগ উঠেছে। এমনকী পুর পরিষেবার বেহাল অবস্থা নিয়ে সরব হন খোদ মুখ্যমন্ত্রীও। পুরভোটের দাবিতে এক বছর লাগাতার আন্দোলনও চালিয়ে যায় বিরোধী দলগুলি। এরপরই পুরভোট নিয়ে তোরজোড় শুরু হয়।
এদিনের বৈঠকে হাওড়া পুরসভার ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসের আবেদনও জানায় সবক'টি রাজনৈতিক দলই। তবে এদিনের বৈঠকে এমনকী পেশ হওয়া খসড়া তালিকাতেও এই বিষয়ের কোন উল্লেখ নেই। নির্বাচন কমিশনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী পুর নির্বাচন ৬৬টি ওয়ার্ডের মধ্যেই সম্পন্ন হবে। বৈঠকে উপস্থিত বাম নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক অরূপ রায় জানান, আমরা ওয়ার্ড পুনর্বিন্যাসের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদন জানাব। অন্যদিকে, বিজেপির জেলা সভাপতি সুরজিৎ সাহা বলেন, “২০১৫ সালে বালি পুরসভাকে অন্তর্ভুক্ত করার সময় রাজ্য সরকারের তরফে বলা হয়েছিল হাওড়া মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকে-“কর্পরেশনে” পরিণত করতে ওয়ার্ডগুলির পুনর্বিন্যাস করা হবে। কিন্তু এখন সেই দাবি থেকে সরে আসছে রাজ্য সরকার। নির্বাচন কমিশনের কাছে আবেদনের সঙ্গে সঙ্গে আদালতের দারস্থও হবে বিজেপি”। তবে ওয়ার্ড পুনর্বিণ্যাসের ব্যাপারে নিশ্চুপ তৃণমূল কংগ্রেস। নির্বাচন কমিশনের উপরই এই দায় চাপিয়েছেন তাঁরা।
২০১৩ সালে দীর্ঘ বাম জমানার অবসান ঘটিয়ে পুরবোর্ডের দখল নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। ৫০টি আসনের মধ্যে ৪৩টি আসনে জয় পায় তৃণমূল কংগ্রেস। কংগ্রেস তিনটি, বাম ও বিজেপি দুটি করে আসনের দখল নেয়। পরবর্তীকালে কংগ্রেসের তিন কাউন্সিলার তৃণমূলে যোগ দেন। তখন তৃণমূলের আসন সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ছেচল্লিশ। এরপর ২০১৫ সালে বালি পুরসভাকে হাওড়া পুরসভার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ফলে হাওড়া পুরসভায় ওয়ার্ড মোট সংখ্যা হয় ৬৬। এই ১৬টি আসনে নতুন করে ভোটও হয় এবং ১৬টি আসনেই ভোটে জয়ী হয় তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীরা। এখন ৬৬ ওয়ার্ডের হাওড়া পুরনিগমে তৃণমূল কংগ্রেসের আসন সংখ্যা ৬২।
এদিনের পেশ হওয়া খসড়া তালিকায় ৬৬টি আসনের এক তৃতীয়াংশ বা ২২টি ওয়ার্ডকে মহিলা সংরক্ষিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে মনে করা হচ্ছে, এই তালিকা অনুযায়ী ২০১৩ সালে জয়ী তৃণমূল কংগ্রেসের হেভিওয়েট কাউন্সিলার তথা মেয়র পারিষদ-সহ মোট ১৩ জয়ী কাউন্সিলার তাঁদের নিজেদের আসনে আর দাঁড়াতে পারবেন না। এই ১৩ কাউন্সিলারকে অন্যত্র দাঁড় করালে আবার সেখানকার কাউন্সিলারদের কোপের মুখে পড়তে হতে পারে তৃণমূলকে। সব মিলিয়ে ভোটের ইঙ্গিতে একদিকে যেমন খুশির হাওয়া, তেমনই কপালে ভাঁজও পড়েছে শাসক শিবিরের।