বয়স মাত্র ৩২। আর তার মধ্যেই অর্ধেক পৃথিবী ঘোরা হয়ে গিয়েছে তাঁর। বিমানে বা জলপথে নয়, সাইকেলেই বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়েছেন অ্যাটিলা বার্থা। মধ্য ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরির বাসিন্দা অ্যাটিলা বহু দেশ ঘুরে গত সপ্তাহে এসে পড়েন পশ্চিমবঙ্গে। উত্তর ২৪ পরগনার হৃদয়পুরে এসে বাংলার আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছেন পুসকাসের দেশের যুবক। শুধু থাকাই নয়, বাঙালি খাবারে রীতিমতো মজলেন তিনি। ভাত-সবজি, বিশেষ করে নিমবেগুন খেয়ে অভিভূত। সৌজন্যে আরও এক বিখ্যাত অভিযাত্রিক চন্দন বিশ্বাস।
কীভাবে এসে পড়লেন পশ্চিমবঙ্গে? হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট থেকে যাত্রা শুরু করেন অ্যাটিলা। দুচাকার যানে সার্বিয়া, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া হয়ে এশিয়ায় ঢোকেন তুর্কি হয়ে। তার পর জর্জিয়া এবং আর্মেনিয়া হয়ে তিনি পৌঁছন ইরানে। সেখানে পাঁচ মাস ছিলেন অ্যাটিলা। সেখান থেকে পৌঁছন পাকিস্তানে। পড়শি দেশ থেকে সীমান্ত পার করে ঢোকেন ভারতে। ভারতে কাশ্মীর-লাদাখ, মানালি ঘুরে হিমালয় বরাবর সাইকেল চালিয়ে তিনি পৌঁছে যান নেপালে। নেপালে গেছেন যখন তখন এভারেস্ট না গেলেই নয়। অ্যাটিলা জানিয়েছেন, সাইকেল চালিয়ে তিনি পৌঁছন এভারেস্টের অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্পে। নেপালে ২ মাস থেকে ফের ভারতে আসেন।
সাইকেল চালিয়ে কলকাতায় আসেন তিনি। এখানে এসে তাঁর সাক্ষাৎ হয় চন্দন বিশ্বাসের সঙ্গে। হৃদয়পুরের বাসিন্দা চন্দন নিজেও একজন সাইক্লিস্ট তো বটেই, কয়েক বছর আগে ট্রান্স হিমালয়ান সাইক্লিং করে সাড়া ফেলে দেন। তাঁর সেই অভিযান নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্র চরৈবেতি প্রদর্শিত হয়েছে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। দেশ-বিদেশে বহু পুরস্কার পেয়েছে সেই ডকুফিচার।
আরও পড়ুন পাহাড়চূড়ায় পদে পদে বিপদ, জল-খাবার ছাড়াই বেঁচে ফেরেন রত্নিটিব্বা শৃঙ্গজয়ী চিন্ময় মণ্ডল
গত দিন সাতেক হৃদয়পুরে চন্দনের বাড়িই হয়ে ওঠে অ্যাটিলার আস্তানা। এখানে এসে বারাসতের বিখ্যাত কালীপুজো চাক্ষুষ করে অবাক হয়ে গিয়েছেন অ্যাটিলা। দীপাবলির পাশাপাশি ভাইফোঁটাও পালন করেছেন তিনি। পর্বতারোহীদের সংগঠনের তরফে ভাইফোঁটা দেওয়া হয়েছে অ্যাটিলাকে। এখানে এসে বাঙালি খাবার খেয়ে এককথায় আপ্লুত অ্যাটিলা। বিশেষ করে চন্দনের মায়ের হাতে নিমবেগুন খেয়ে স্বর্গসুখ পেয়েছেন অ্যাটিলা। এমনটাই জানিয়েছেন তিনি।
আরও পড়ুন বাঙালি সাইক্লিস্টের ট্রান্স-হিমালয় অভিযান নিয়ে তথ্যচিত্র ‘চরৈবেতি’, স্থান পেল চলচ্চিত্র উৎসবে
শুক্রবারই কলকাতা ছেড়েছেন অ্যাটিলা। জানিয়েছেন, এবার তাঁর গন্তব্য কন্যাকুমারী। সেখান থেকে ঘুরে মুম্বইয়ের উদ্দেশে যাত্রা করবেন। তার পর ভারত ছাড়বেন তিনি। এর আগের অভিযানে ১১টি দেশ ঘুরেছেন তিনি। এবারও এগারোটা দেশ ঘুরে ভারতে এসেছেন। বাংলায় এসে তাঁর সত্যিই ভাল লেগেছে। সেকথা নিজেই জানিয়েছেন অ্যাটিলা। আবার সুযোগ হলে আসবেন বাংলায়, তেমনটাই ইচ্ছা তাঁর।