অবশেষে আটদিনের মাথায় অনশনকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে বসলেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ন্যায্য বেতনের দাবিতে ও বেআইনিভাবে বদলির প্রতিবাদে সল্টলেকের বিকাশ ভবনের সামনে ১২ জুলাই থেকে আমরণ অনশনে বসেন প্রাথমিক শিক্ষকদের সংগঠন উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। অনশনে বসার আটদিন পর বেতন জট কাটাতে এদিন অনশনকারী শিক্ষকদের ডেকে পাঠান রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। ২১ শে জুলাই তৃণমূলের শহীদ দিবসের মেগা সমাবেশের আগের দিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের এই পদক্ষেপ রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। জানা যাচ্ছে, বেতনবৃদ্ধির পরিকাঠামো নিয়ে আশানুরূপ কোনও বার্তা না মিললেও বদলির পরিবর্তন নিয়ে মিলেছে মৌখিক আশ্বাস।
আরও পড়ুন, প্রাথমিক শিক্ষকদের পাশে ‘অসহায়’ শঙ্খ ঘোষ
জানা যাচ্ছে, অনশনের অষ্টম দিনে সরকারপক্ষের থেকে পুলিশ মারফৎ আন্দোলনকারীদের কাছে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার বার্তা পৌঁছয়। সেই বার্তা পাওয়ার পরই অনশনরত নন এমন পাঁচজন প্রতিনিধি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন। এক বছর ধরে রাজ্যের প্রাথমিক শিক্ষকরা যোগ্যতা অনুযায়ী ন্যায্য বেতন কাঠামোর দাবি জানালেও কোনও সুরাহা হয়নি বলে দাবি করে প্রাথমিক শিক্ষকদের সংগঠন উস্থি ইউনাইটেড প্রাইমারি টিচার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। এমনকী বিভিন্ন দফতরে একাধিক চিঠি দিলেও সদুত্তর মেলেনি বলেও দাবি করেন প্রতিনিধিরা।
প্রসঙ্গত, বাম আমলে প্রাথমিক শিক্ষকদের একটা নিদির্ষ্ট বেতনক্রম ছিল। এরপর ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স অ্যাসসিয়েশন (এনসিটিএ) বিধান দেয় যে শিক্ষকতা করতে গেলে উচ্চমাধ্যমিক কিংবা স্নাতক স্তরে নূন্যতম ৫০ শতাংশ নম্বর পেতে হবে। এছাড়া দু'বছরের বি.এড করাও বাধ্যতামূলক। তবে এই শর্ত পূরণের পর অন্যান্য রাজ্যে বেতনবৃদ্ধি হলেও এ রাজ্যে আগের মতোই বেতনক্রম জারি আছে। শুধু তাই নয়, ১৪ জন শিক্ষককে যে বদলি করা হয়েছে তাও প্রত্যাহার করার দাবি জানানো হয়েছে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে।
আরও পড়ুন, আর কত দিন? প্রতারণা করছেন মুখ্যমন্ত্রী! অভিযোগ হবু শিক্ষকদের
উল্লেখ্য, গত ১২ মে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বিধানসভা থেকে উস্থি প্রাথমিক শিক্ষক সংগঠনকে ফিরিয়ে দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে বিধাননগর উন্নয়ন ভবনের সামনে অবস্থানে বসেন সংগঠনের সদস্যরা। সেখান থেকেই আমরণ অনশনের ডাক দেন আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা। অনশনরত এক শিক্ষক বলেন, “প্রতিবার বঞ্চনার মুখোমুখি হয়েছি। সমস্যা মিটবে এই আশা নিয়েই আমরণ অনশনে যোগ দিয়েছি। রাজ্য সরকার প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে আমাদের ১৪ জন আন্দোলনকারী শিক্ষককে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বহু দূরে বিভিন্ন জেলায় বদলি করে দিয়েছে। এর প্রতিবাদেই আমরা আজ পথে নেমেছি।” তবে অনশনের অষ্টম দিনের মাথায় সরকারের টনক নড়ার পিছনে ২১ জুলাইয়ের শহীদ দিবস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলের একাংশ।