Advertisment

স্ত্রী সরকারি চাকরি পেতেই গুণধর স্বামীর মনে জোর শঙ্কা, কাটলেন বউয়ের কব্জি

সরকারি চাকরিই কাল হল পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম থানার কোজলসা গ্রাম নিবাসী বধূ রেণু খাতুনের জীবনে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
husband allegedly chopped wifes right hand to stop her joining government nursing job

রেণু ও তাঁর স্বামী সরিফুল।

স্বামী বেকার। কিন্তু স্ত্রী পেয়ে গিয়েছেন নার্সের সরকারী চাকরি। আর সেটাই কাল হল পূর্ব বর্ধমানের কেতুগ্রাম থানার কোজলসা গ্রাম নিবাসী বধূ রেণু খাতুনের জীবনে। নার্সের চাকরি করলে স্ত্রী আর বেকার স্বামীর সঙ্গে সংসার করবে না। এমন আশঙ্কা করে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা বধূর ডান হাতে ধারালো অস্ত্রের কোপ বসিয়ে দিয়ে হাত কেটে বিচ্ছিন্ন করে দিল গুনধর স্বামী শের মহম্মদ শেখ ওরফে সরিফুল।

Advertisment

শুধু এমন নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েই খান্ত হননি সরিফুল। স্ত্রীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার সহ চাকরি সংক্রান্ত যাবতীয় নথি ও শংসাপত্র নিয়ে স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন গা ঢাকা দিয়েছে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় বধূ রেণু খাতুন এখন দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই ঘটনার কথা জেনে স্তম্ভিত কেতুগ্রামের বাসিন্দারা। ঘটনায় তদন্তে নেমে কেতুগ্রাম থানার পুলিশ অভিযুক্ত স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের সন্ধান চালাচ্ছে ।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বধূ রেণু খাতুনের বাবার বাড়ি কেতুগ্রাম থানার চিনিসপুর গ্রামে। লেখা পড়ায় বরাবরই সে ভালো ছিল। ছাত্রী জীবনেই কোজলসা গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ শেখের একমাত্র ছেলে সরিফুলের সঙ্গে রেণুর পরিচয় হয়। পরে তাঁদের মধ্যে প্রেম সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৭ সালে তাঁদের বিয়ে হয়। বিয়েতে মেয়ের শ্বশুর বাড়ির দাবি মেনে এক লক্ষ টাকা নগদ, ৮ ভরি সোনার গহনা, একটি স্কুটি এবং আনুষাঙ্গিক আরও কিছু জিনিস যৌতুক হিসাবে দিতে হয়েছিল বলে রেণু খাতুনের বাবা আজিজুল হকের দাবি। তিনি আরও জানান, রেণু নার্সিং প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। বিয়ের পর সে দুর্গাপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নার্স পদে চাকরি করছিল। পাশাপাশি সরকারি চাকরির জন্যও চেষ্টা চালিয়ে যচ্ছিল। রেণু খাতুন নিজের পায়ে দাঁড়ানোর ব্যাপারে এত উদগ্রীব থাকলেও তাঁর স্বামী সরিফুলের সেই সব বাসনা ছিল না। সিরাজ আপাতত তাঁর বাবার মুদিখানা চালাচ্ছিল।

রেণু খাতুনের দাদা রিপন শেখের কথায়, সম্প্রতি নার্সের সরকারি চাকরির পরীক্ষা দিয়ে পাশ করে তাঁর বোন। অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারও পেয়ে যায়। কয়েকদিনের মধ্যেই রেণুর চাকরিতে যোগ দেওয়ার কথা। কিন্তু রেণু সরকারি চাকরি করুক এটা মেনে নিতে পারছিল না তাঁর স্বামী সরিফুল ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। তাঁদের আশঙ্কা ছিল চাকরিতে যোগ দেওয়ার পর হয়তো রেণু আর শ্বশুর বাড়িতে থাকবে না,স্বামীর ঘর করবে না। তাই সরকারি চাকরি না করা জন্য রেণুর উপর চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছিল তাঁর স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। কিন্তু রেণু নতি স্বীকার করেনি।

রেণু দুর্গাপুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি থেকে ইস্তফাপত্র জমা দেয়। এরপর শনিবার সে চিনিসপুরে আমার বাড়ি আসে। ওই দিন রাতেই রেণু তাঁর শ্বশুরবাড়ি চলে যায়। বধুর বাবা আজিজুল হকের অভিযোগ, আজিজুল হকের দাবি, রাতে রেণু যখন ঘরে ঘুমচ্ছিল তখন দুই বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে রেণুর ওপর চড়াও হয় সরিফুল। তারা রেণুর ডানহাতের কব্জির অংশে ধারালো অস্ত্রের কোপ বসিয়ে দিয়ে হাত বিছিন্ন করে দেয়। মেয়ের চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে আক্রমণকারীরা সবাই পালিয়ে যায় । এরপর স্থানীয়রা রক্তাত অবস্থায় রেণুকে প্রথমে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু শারীরিক অবস্থা খারাপ থাকায় তাঁকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। পরে পরিবারের লোকজন রেণুকে দুর্গাপুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করেন। সেখাণেই বধু রেণু নার্সের কাজ করতেন। রেণুর কাটা হাত আর জোড়া লাগানো সম্ভব না হবে কিনা সেই দুঃশ্চিন্তাতেই এখন দিন কাটছে পরিবারের।

রেণুর বাবার আক্ষেপের সুরে বলেন, 'হাত জোড়া লাগানো না গেলে আমার মেয়ের সরকারি হাসপাতালের নার্স হওয়ার স্বপ্ন হয়তো অধরাই রয়ে যাবে।'

East Bengal East Burdwan
Advertisment