বিয়েতে পণ দিতে পারেনি বধূর পরিবার। এতেই গাত্রদাহ। দিনের পর দিন তালিানি কায়দায় চলছে শাসন। তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর হাত-পায়ে শিকল বেঁধে মারধরের অভিযোগ উঠল স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে। ঘটনা মালদহের চাঁচল থানার মকথমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের মোবারকপুর এলাকার। শেষ পর্যন্ত বাপের বাড়ির আত্মীয়দের সহায়তায় পুলিশের হস্তক্ষেপে শিকলমুক্ত হয়েছেন ওই গৃহবধূ। তাঁকে দেখে হতবাক পুলিশ। নির্যাতিতার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে চাঁচল থানার পুলিশ। গৃহবধূকে চাঁচোল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করানো হয়।
পাঁচ বছর আগে চাঁচল-১ ব্লকের মকদমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আশ্বিনপুরের বাসিন্দা পিঙ্কি খাতুনের (২২) সঙ্গে বিয়ে হয় মোবারকপুর গ্রামের বাসিন্দা পেশায় দিনমজুর সাহেব আলীর। ওই দম্পতির দু'টি কন্যা সন্তান রয়েছে। পিঙ্কি বর্তমানে তিনমাসের অন্তঃসত্বা।
অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই পণের দাবিতে পিঙ্কির উপর স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকেরা অত্যাচার করত। পরে তা বাড়তে থাকে। নির্যাতনের কথা গৃহবধূ তাঁর বাপের বাড়িতে জানিয়েছিলেন। এ নিয়ে গ্রামে একাধিকবার সালিশি সভাও বসেছিল। কিন্তু সমস্যার সুরাহা হয়নি। শেষ পর্যন্ত অত্যাচার মাত্রাছাড়া হয়ে দাঁড়ায়।
আরও পড়ুন- করোনায় আয় তলানিতে, অবসাদে মা-বাবা-বোনকে খুন করে আত্মহত্যার চেষ্টা যুবকের
অভিযোগ, পণ না মেলায় গত সোমবার পিঙ্কি খাতুনকে শিকল বন্দি করে রেখে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালায় তাঁর স্বামী সাহেব আলী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। ঘরের মেজেতে ফেলে চর কিল লাথি সহ ব্যাপক মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। এমনকী গলায় শাড়ির আচল পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাঁকে প্রাণে মারার চেষ্টাও করা হয় বলে দাবি নির্যাতিতা গৃহবধূর। এরপরই শ্বশুড়বাড়ির লোকেদের অলক্ষ্যে বাড়ি থেকে পালিয়ে কোনরকমে প্রাণে বাঁচেন পিঙ্কি খাতুন।
শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার চাঁচল থানায় বাপের বাড়ির আত্মীয়দের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে স্বামী সহ শ্বশুড়বাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন পিঙ্কি। অভিযোগকারিণী পিঙ্কি খাতুনের কথায়, 'পণের জন্য আমার উপর শারীরিক ও মানসিক অত্যাচার চালাত স্বামী সহ শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। আমি যেন পালাতে না পারি তাই স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেরা হাতে শিকল পেঁচিয়ে তালা মেরে রাখতো। ওই অবস্থাতেও মারধর করা হতো। মঙ্গলবার কোনো রকমে পালিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছি।'
নড়েচড়ে বসেছে চাঁচল থানার পুলিশ। চাঁচল থানার আইসি সুকুমার ভোজ জানিয়েছেন, অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন