সবেবরাতের ছুটিতে স্বামীকে নিয়ে বাপের বাড়ি এসেছিলেন নবদম্পতি। কিন্তু, আর শ্বশুর বাড়ি ফেরা হল না। বাপের বাড়িতেই আর পাঁচ জনের সঙ্গে জীবন্ত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হল নবদম্পত্তির। ঘটনায় রামপুরহাট থানার বগটুই গ্রামের পাশাপাশি শোকের ছায়া নেমে এসেছে নানুরেও।
জানা গিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারিতেই বগটুই গ্রামের মিজারুল শেখের মেয়ে লিলি খাতুনের বিয়ে হয় নানুরের কাজি নুরুল জামালের ছেলে কাজি সাজিদুর রহমানের সঙ্গে। সোমবার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে লিলি বগটুই গ্রামে বাপের বাড়িতে আসে। দুপুরে তাঁরা বাড়িতে ফোন করে জানায়, পৌঁছে গিয়েছে। তখনও পর্যন্ত সব ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু, রাত বাড়তেই হত্যালীলার খবর পেয়ে স্তম্ভিত হয়ে পড়েন লিলির শ্বশুরবাড়ির লোকজন। লিলির শ্বশুর কাজি নুরুল জামাল বলেন, 'সকালে ছেলে-বউমা রামপুরহাটে যায়। দুপুরে পৌঁছে যাওয়ার কথা জানিয়ে ফোন করেছিল। তারপর রাত ১২ টা নাগাদ ছেলে ওঁর বন্ধু কাজি মহিমকে ফোন করে। তাঁকে বলে, আমাদের একটি ঘরের মধ্যে ঢুকিয়ে চারিদিকে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তুই পুলিশ পাঠানোর ব্যবস্থা কর। মহিম সেকথা আমাকে জানাতে আসে। আমি ফোন করে ছেলে-বউমার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। কিন্তু ততক্ষণে বোধহয় সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। ফলে, আর যোগাযোগ করতে পারিনি। মঙ্গলবার সকালে পুড়িয়ে মারার খবর পাই। আমি চাই, যাঁরা আমার ছেলে-বউমাকে খুন করছে, তাঁদের ফাঁসি দেওয়া হোক।'
আরও পড়ুন- রোজের আড্ডাই ‘কাল’ হল ভাদুর, নিজস্ব নিরাপত্তা বলয় সরতেই হামলা
ওই পাকা বাড়ির মধ্যেই পুড়িয়ে মারা হয়েছে মিনা বিবি (৩৫) ও তাঁর শিশু সন্তানকেও। মিজারুল শেখের বাড়ির পাশেই থাকতেন মিনা। স্বামী ফটিক শেখের সঙ্গে নিহত উপপ্রধান ভাদু শেখের সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল দীর্ঘদিন আগেই। ঘটনার পরে ফটিক শেখ পালিয়ে যায় বাড়ি ছেড়ে। ফলে কুঁড়েঘরে ছিল স্ত্রী ও শিশুসন্তান। দু'জনকেই মিজারুলের বাড়ির ভিতর ঢুকিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয়েছে বলে গ্রাম সূত্রে খবর।
এদিকে ভাদু শেখের খুনের ঘটনায় পুলিশ ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের এই তৎপরতার পর সন্ধ্যা হতেই ভাদু শেখের স্ত্রী, ভাই-সহ পাঁচটি পরিবার সমস্ত কিছু গুটিয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছে। বিরোধীরা অভিযোগ করেছেন, তৃণমূলের রামপুরহাট ১ নম্বর ব্লক সভাপতি আনারুল হোসেনের নেতৃত্বেই হত্যালীলা চলেছে। তবে এনিয়ে এখনও পুলিশের কেউ মুখ খুলতে চায়নি।