মার্কিন মুলুকের কায়দায় মালদায় বন্দুকবাজের তাণ্ডবের ঘটনায় যার জন্য এত কাণ্ড, অবশেষে সেই অভিযুক্তের স্ত্রী রীতা বল্লভের হদিশ পাওয়া গেল। ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে দিব্যি হাসিখুশি রয়েছেন বন্দুকবাজের স্ত্রী রীতা বল্লভ। তিনি যে অপহৃত হননি এবং তাঁকে ও তাঁর ছেলেকে কেউ কোথাও তুলে নিয়ে যায়নি, সে কথা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন ওই গৃহবধূ।
তাঁর সাফ কথা, অনেকদিন আগেই স্বামীকে ছেড়ে দিয়েছি। ওঁর মানসিক বিকার আর সহ্য করা যাচ্ছিল না। ওঁর চিকিৎসার প্রয়োজন। লোকের উসকানিতে বড্ড উৎসাহিত হয়ে পড়ে। পুরাতন মালদার চন্দ্রমোহন হাইস্কুলে যে ঘটনা ঘটিয়েছিল, এটা ওঁর নিজের বুদ্ধিতে নয়। এর পিছনে কারও পরিকল্পনা কাজ করেছে বলেও মনে করছেন গৃহবধূ রীতা বল্লভ।
পুরাতন মালদা থানার মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের শ্বশুরবাড়ি থেকে অদূরেই একটি গ্রামে রীতা বল্লভের বাপের বাড়ি। স্বামীর মানসিক কর্মকাণ্ডের জন্য অনেকদিন আগেই শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে বাবার বাড়িতে চলে এসেছেন গৃহবধূ রীতা বল্লভ। তাঁর ছেলে রুদ্র বল্লভ। ছেলে দ্বাদশ শ্রেণিতে পাঠরত। বাবার বাড়িতে থেকে স্বামীর এই কাণ্ডের ঘটনা জানাজানির পর রীতিমতো নিজের পরিচয় গোপনে রাখছেন ওই বধূ। তাঁর আতঙ্ক, যদি স্বামীর এই অপরাধের জন্য তাঁদের ওপর কোনও হামলা হয়!
স্বামীর এই ধরনের অপরাধমূলক কাজকে কখনও সমর্থন করেন না ওই গৃহবধূ। তিনি বলেন, 'আমার স্বামী তো সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। ও এই ধরনের উন্নতমানের আগ্নেয়াস্ত্র পেল কোথায়? সেটা আগে পুলিশের তদন্ত করে দেখা উচিত। ওঁর এই ঘটনা ঘটানোর পিছনে বড় কোনও মাথা নিশ্চয়ই জড়িত আছে। ওঁকে যে যা বুদ্ধি দেয়, উনি সেই কাজই করেন। বহু বছর আগে, শ্বশুরবাড়িতে স্বামীর অস্বাভাবিক আচরণ দেখে চিকিৎসার কথা বলেছিলাম। কিন্তু, কেউ কোনও গুরুত্ব দেয়নি। মানসিক অত্যাচার সহ্য করতে না-পেরে, বাবার বাড়ি চলে আসি। এতদিন পর চন্দ্রমোহন হাইস্কুলের ঘটনার খবরে স্বামীর কথা জানতে পারলাম।'
গৃহবধূ রীতা বল্লভ আরও জানিয়েছেন, তাঁদেরকে কেউ বা কারা অপহরণ করেনি। তিনি নিজের ইচ্ছায় শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে রয়েছেন। এর আগে গত বুধবার পুরাতন মালদা ব্লকের মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের চন্দ্রমোহন হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ক্লাসরুমে পেট্রোল বোমা, বন্দুক হাতে ঢুকে পড়েছিলেন দেব বল্লভ নামে এক আততায়ী। ক্লাসরুমে ঢুকে তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে নিজের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন ওই আততায়ী। ফিরিয়ে না-দিলে ছাত্রছাত্রীদের পণবন্দি করে রেখে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন তিনি।
আরও পড়ুন- আরও বিপাকে তৃণমূলের জীবনকৃষ্ণ, এবার বিধায়কের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিল নানুরের স্কুল
যদিও পুলিশি তৎপরতায় বড় কোনও অঘটন ঘটে যাওয়ার আগেই অভিযুক্ত দেব বল্লভ গ্রেফতার হয়। বৃহস্পতিবার আদালতের নির্দেশে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। বিহারের মাফিয়াদের কাছ থেকে সে অস্ত্র কিনেছিল। পুলিশের জেরায় সেকথা স্বীকার করেছে ধৃত দেব বল্লভ। এখন তাঁর স্কুলঘরে বন্দুকবাজির পরিকল্পনার বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে জেলা পুলিশ। পাশাপাশি, এই ঘটনা প্রকাশ্যে এনে দিয়েছে যে মালদায় কীভাবে বিহার থেকে অস্ত্র ঢুকছে। সেই ব্যাপারেও পুলিশ তদন্তে নেমেছে।