সতীনের কবল থেকে স্বামীকে উদ্ধার করতে স্বামীরই দেওয়া টোপ গিলে 'সুপারি কিলার' অর্থাৎ ভাড়াটে খুনির হাতে খুন হলেন স্ত্রী। আট দিনের মধ্যে রহস্যজনক এই খুনের কিনারা করতে পেরেছে পুলিশ।
শান্তিনিকেতনের পাশে সোনাঝুরির হাট, প্রতি শনিবার সেখানে হাট বসে। ১ ডিসেম্বর ছিল শনিবার। পাশে চীপ কুঠির জঙ্গলে একটি পরিত্যক্ত বাড়ি আছে। সকালে হাটে জনসমাগম হওয়ার আগে ঐ পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন এক সরকারী কর্মী, যাঁর নজরে পড়ে যে বাড়িটির সামনে একজোড়া মহিলাদের জুতো রাখা। ভেতরে ঢুকে দেখেন, এক মহিলার দেহ পড়ে আছে, মুখটা থ্যাঁতলানো।
অপরিচিতার এই নৃশংস হত্যা বিচলিত করে সবাইকেই
এরপর স্থানীয় পুলিশকর্মী, জেলা পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে পুলিশ কুকুর, সবই আসে। অপরিচিতার এই নৃশংস হত্যা বিচলিত করে সবাইকেই। তাও এমন পর্যটন কেন্দ্রের মধ্যে।
তদন্তে উঠে আসে যে মৃতার নাম আলমিনা বেগম, নানুরের নিমড়ে গ্রামে বাড়ি। মৃতার স্বামী আলাউদ্দিন শেখ। গাড়ি আর গ্যারেজের ব্যবসা। বাড়ি থেকে কখনওই বের হন না আলমিনা, এ খবরও পেল পুলিশ। স্ত্রীর খুনের খবরে কেঁদে ভাসানো শুরু করেন আলাউদ্দিন। তাঁকে বহুবার জেরা করেও কোন সূত্র পায় নি পুলিশ, তবে খবর মেলে যে আলাউদ্দিনের চালক তথা গ্যারেজের কর্মী বুড়ো কদিন ধরে নিখোঁজ।
আরও পড়ুন: মুর্শিদাবাদে মহিলা ব্যাঙ্ক ম্যানেজার রহস্যমৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছে না
বুড়োকে বাইরে থেকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদের সময় চাপ দিতেই অনেক সূত্র দেয় সে, কিন্তু খুনের কথা স্বীকার করতে চায় নি। এরপর পুলিশ আলাউদ্দিনকে গ্রেপ্তার করে বুড়োর সঙ্গে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে আসল তথ্য বের হয়ে যায়।
আলাউদ্দিনের দুই স্ত্রী ও দুই পরিবার। প্রথম পক্ষের স্ত্রী আলমিনা কিছুতেই স্বামীকে সতীনের হাতে ছাড়তে চান নি, তার জন্য তিনি নানা চেষ্টা চালিয়ে যান। আলাউদ্দিন বুঝতে পেরেছিলেন তাঁর প্রথম স্ত্রী কি চাইছেন, তাই ছক কষে স্ত্রীকে সরাতে সুপারি কিলার হিসেবে বুড়োকে কাজে লাগান তিনি। গোটা চিত্রনাট্য আলাউদ্দিনই গড়ে দেন।
বুড়ো আলমিনাকে গিয়ে বলে যে পারুই গ্রামে এক তান্ত্রিক আছেন, যিনি বশীকরণ জানেন। টোপ গিলে আলমিনা সেই তান্ত্রিকের কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য বুড়োকে বারবার অনুরোধ জানান। পরিকল্পনা অনুযায়ী নিমড়ে গ্রাম থেকে স্কুটির পেছনে আলমিনাকে বসিয়ে পারুই রওয়ানা দেয় বুড়ো। চীপ কুঠির কাছে এসে শৌচকর্ম করার নাম করে জঙ্গলের মধ্যে গাড়ি থামায়, এবং প্রথমে শ্বাসরোধ করে আলমিনাকে খুন করে তারপর ইট দিয়ে থেঁতলে তাঁর মুখ বিকৃত করে দেয় সে।
বোলপুরের এসডিপিও সৌম্যজিৎ বড়ুয়া জানান, সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে খুনের ঘটনায় আলাউদ্দিন এবং বুড়োকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রবিবার বোলপুর মহকুমা আদালত দুজনের পাঁচদিনের পুলিশ হেফাজতের আর্জি মঞ্জুর করেছে ।