স্ত্রীর স্মৃতিকে সম্মান, বৃদ্ধ বয়সে নিজের ভালবাসা আঁকড়ে ধরতে স্ত্রীর সিলিকন মূর্তি বানিয়ে ভালবাসাকে অমর করলেন কৈখালির তাপসকুমার শাণ্ডিল্য। এমন কাহিনী এখন রীতিমত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। যা চোখে জল এনেছে নেটিজেনদের। করোনা কালে হারিয়েছেন স্ত্রীকে। একাকী বৃদ্ধ স্ত্রীর এই মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলেন না। একাকীত্ব তাঁকে ধীরে ধীরে গ্রাস করতে শুরু করে। করোনা স্ত্রী’র প্রাণ কাড়লেও ভালবাসা কাড়তে পারেনি।
আজও চার-দেওয়ালের মাঝে অটুট ভালবাসা। চলে গিয়েছে স্ত্রী। কিছু সময়ের জন্য অন্তত নিজের স্ত্রীকে পাশে পাওয়া যাবে। এমনই ভাবনাকে পাথেয় করেই স্ত্রীর সিলিকন মূর্তি বানিয়েছেন তিনি। একবার দেখলে জীবন্ত মানুষ বলে মনে হতে বাধ্য। চাকরি অবসরের পর স্বামী-স্ত্রীর সংসার বেশ ভালই কাটছিল। কিন্তু সবটাই যেন বদলে দিল অতিমারি। করোনায় আক্রান্ত হয়ে বছর দেড়েক আগেই প্রয়াত হয়েছে স্ত্রী ইন্দ্রাণী। সেই থেকে একাকীত্ব, স্ত্রীকে যেন আরও করে আঁকড়ে পাওয়ার ইচ্ছা, কিছু সময় আরও কাটানোর তাগিদ সেই ভাবনা থেকেই সিলিকনের মূর্তি বানানোর ইচ্ছা।
২০২১ এর ৪ ঠা মে করোনা কেড়েছে স্ত্রীকে। নিজেও কোভিড পজিটিভ হওয়ায় আর শেষ দেখা হয়নি স্ত্রী ইন্দ্রানীকে। বিচ্ছেদের সেই যন্ত্রণা যেন তিলে তিলে গ্রাস করছিল তাপস বাবুকে। ১৯৮২ দেখাশুনা করেই বিয়ে। তারপর কেটে গিয়েছে চারদশক। একসঙ্গে সংসার। স্ত্রী’র বিদায়বেলায় তাঁকে শেষ দেখা টুকু দেখতে না পাওয়ার যন্ত্রণা আজও কাঁদায় তাপস বাবুকে। এরপরই শুরু হয় স্ত্রীকে অমর করে রাখার প্রয়াস। সিলিকন মূর্তির মাধ্যমে অবশেষে স্বপ্ন পূরণ তাপস বাবুর।
কৈখালির বাড়ি থেকে অদূরে বিরাটিতেই শিল্পী সুবিমল দাসের স্টুডিও। আমেরিকা থেকে সিলিকন এনে সেখানে ৬ মাস ধরে তৈরি হয়েছে ইন্দ্রাণীর অবিকল অবয়ব। মূর্তি বানাতে খরচ হয়েছে প্রায় আড়াই লক্ষ্য টাকা। এপ্রসঙ্গে শিল্পী সুবিমল দাস বলেন, সিলিকনের কর্মজীবন প্রায় ১০ বছর অর্থাৎ প্রায় ১০ বছর নিজের ভালবাসার ইন্দ্রানীকে পাশে পাবেন তাপসবাবু।
তাপস বাবুর আর্তি নাড়া দিয়েছে শিল্পী সুবিমলকেও। এত বছর এই পেশায় থাকলেও বৃদ্ধের ভালবাসাকে ফের ফিরিয়ে দিতে পেরে সুবিমলও রীতিমত উচ্ছ্বসিত। মূর্তিতে প্রাণ না থাকলেও প্রেমে কোন ঘাটতি নেই। স্ত্রী’কে অমর করতে তাপসবাবুর এমন উদ্যোগ চোখে জল এনেছে সকলের। আর চার দেওয়ালে, স্ত্রী ইন্দ্রানীকে নিয়েই ফের সুখদুঃখের সংসার গড়তে পেরে খুশি বৃদ্ধও।