Advertisment

গোপন অস্ত্র তৈরির কারখানা: সুন্দরবনের কুলতলি যেন মিনি মুঙ্গের!

ঘরে ঢুকতেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় দুঁদে পুলিশ অফিসারদের। ভিতরে ঠাসা অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম, যার মধ্যে রয়েছে লোহার পাইপ, কাঠের বাট, লোহার রড, ফায়ারিং পিন, ড্রিল মেশিন, পালিশ মেশিন, হাত লেদ মেশিন, লোহার ফলক সহ আরও অনেক কিছু।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
বেআইনি অস্ত্রের ঘাঁটি এবার কলকাতার কাছেই

দক্ষিণ ২৪ পরগণার কুলতলির একটি বেআইনি অস্ত্র কারখানা থেকে নভেম্বর মাসে উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র

রাজ্যে ফের বেআইনি অস্ত্র কারখানা হদিশ মিলল। এবার দক্ষিণ ২৪ পরগণার সুন্দরবনের কুলতলিতে হানা দিয়ে উদ্ধার হল প্রচুর অস্ত্র। গ্রেফতার করা হয়েছে দুই অস্ত্র কারবারিকে।

Advertisment

পুলিশ জানিয়েছে, কুলতলির নদীর ধরে পুরোনো কেল্লার কাছে অস্ত্র কারবারি বিশ্বনাথ মণ্ডলের বাড়িতে বিহারের এক বাসিন্দা অস্ত্র তৈরি করত। সেই অস্ত্র চলে যেত দক্ষিণ ২৪ পরগণা ছাড়িয়ে অন্যান্য জেলায়। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে গোপন সূত্রে এই খবর পেয়ে বারুইপুর জেলা পুলিশের স্পেশাল অপারেশন গ্রুপ এবং কুলতলি থানার পুলিশ যৌথভাবে বিশ্বনাথ মণ্ডলের বাড়িতে হানা দেয়। ঘরে ঢুকতেই চক্ষু চড়কগাছ হয়ে যায় দুঁদে পুলিশ অফিসারদের। ভিতরে ঠাসা অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম, যার মধ্যে রয়েছে লোহার পাইপ, কাঠের বাট, লোহার রড, ফায়ারিং পিন, ড্রিল মেশিন, পালিশ মেশিন, হাত লেদ মেশিন, লোহার ফলক সহ আরও অনেক কিছু। পাশাপাশি ছ'টি বন্দুক, ছ'রাউন্ড গুলি, ও ১০টি বোমা উদ্ধার হয়।

হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয় বিশ্বনাথ মণ্ডল ও তার ছেলে বিকাশকে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে, বিহারের এক বাসিন্দা অস্ত্র তৈরি করত। সে ছট পুজোর ছুটিতে বাড়ি গিয়েছে। ধৃতদের বারুইপুর মহকুমা আদালতে তোলার পর তাদের নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেরা করে অস্ত্র কারবার ও অস্ত্র তৈরির জাল কতদূর বিস্তৃত তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।

আরও পড়ুন: সীমান্ত জেলা মুর্শিদাবাদে বেআইনি মাদকের হদিশে ড্রোনের সাহায্য

কী করে ওই চক্রের সন্ধান মিলল? পুলিশ সূত্রের খবর, কয়েক মাস আগে ক্যানিংয়ে মাতলা ব্রিজ এবং সোনারপুুরে কামালগাজি বাইপাস থেকে অস্ত্র সহ কয়েক জন কারবারিকে গ্রেফতার করে বারুইপুর স্পেশাল অপারেশনস গ্রুপ। তাদের মাধ্যমে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, দক্ষিণ ২৪ পরগণার প্রত্যন্ত কুলতলি, গোসাবা, ক্যানিং সহ অন্যান্য জায়গায় অস্ত্রের লেনদেন হচ্ছে। এর আগে বিহারের মুঙ্গের থেকে অস্ত্র লেনদেনের চক্র পুলিশের অতি সক্রিয়তায় বন্ধ হয়ে যায়। তার পরেও কীভাবে জেলায় এত অস্ত্রের রমরমা, এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে জেলার কয়েক জন অস্ত্র কারবারির মোবাইলে আড়ি পাততে শুরু করেন তদন্তকারীরা।

এক তদন্তকারী অফিসার জানান, মোবাইলে আড়ি পেতে কুলতলির বাসিন্দা বিশ্বনাথ মণ্ডলের সঙ্গে কথোপকথনের সময়ে কিছু সন্দেহজনক আওয়াজ পাওয়া যায়। তাতে সন্দেহ হতেই তদন্তকারীরা স্থানীয় ‘সোর্স’-এর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, বিশ্বনাথ এদিক ওদিক অস্ত্র বিক্রি করে। এর পরই রাতে অভিযানে নামে বারুইপুর জেলা পুলিশের স্পেশাল অপারেশনস গ্রুপ এবং কুলতলি থানার পুলিশ। বিশ্বনাথের বাড়িতে হানা দিয়ে উদ্ধার হয় আধুনিক অস্ত্র, অস্ত্র তৈরির সরঞ্জাম।

এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, যে চারটি বড় বন্দুক উদ্ধার হয়েছে, সেগুলি একেবারে অত্যাধুনিক এসএলআর-এর সমান। এর পাশাপাশি পিস্তলগুলিও আধুনিক মানের। কাটা পাইপ যেগুলি উদ্ধার হয়েছে তা দিয়ে আর কয়েক দিনের মধ্যেই বন্দুক তৈরি হয়ে যেত এবং সেগুলি বাজারে ছড়িয়ে যেত বলে অনুমান পুলিশের। এই অস্ত্র কারখানা দুটি ঘরের মধ্যে চলত, এবং বারান্দায় বসবাস ছিল মূলত পাহারা দেওয়ার জন্য, এমনটাই মনে করছেন তদন্তকারীরা। ঘটনাস্থল থেকে সকেট বোমা উদ্ধার হওয়ায় চিন্তার ভাঁজ তদন্তকারীদের কপালে।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, বিহারের যে বাসিন্দা কুলতলিতে এসে অস্ত্র তৈরি করত, তার নাম মেঘনাদ। বিশ্বনাথকে জেরা করে পুলিশ আরও দুটি জায়গার নাম পেয়েছে, হাবড়া এবং হাওড়া। তদন্তকারীদের আশঙ্কা, মেঘনাদ হাবড়ার বাসিন্দা হলে তার সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ থাকতে পারে। এমনকি সে ওপার বাংলার বাসিন্দাও হতে পারে। তদন্তকারীরা এখন মেঘনাদের খোঁজ শুরু করেছেন ।

police South 24 Pgs
Advertisment