Advertisment

ভুমিধসে নিশ্চিহ্ন হবে দার্জিলিং-কার্শিয়াং? চরম আশঙ্কায় বাঙালির প্রিয় শৈলশহর  

বাঙালির প্রিয় শৈলশহর নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?

author-image
Sayan Sarkar
New Update
Illegal construction pushing Darjeeling hills towards joshimath like crisis illegal construction,darjeeling,joshimath,joshimath news, Illegal construction, জোশীমঠ, দার্জিলিং, ভুমিধস, হিমালয়, শৈলশহর,

ভুমিধসে নিশ্চিহ্ন হবে দার্জিলিং-কার্শিয়াংয়? চরম আশঙ্কায় বাঙালির প্রিয় শৈলশহর

জোশীমঠে সাম্প্রতিক ভূমিধস চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে প্রকৃতির কাছে আজও মানুষ কতটা অসহায়। প্রবল ঠাণ্ডা, আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন শ’য়ে শ’য়ে পরিবার। সমগ্র জোশীমঠের পরিস্থিতি সংকটজনক। এমন অবস্থায় উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, কালিম্পং এবং কার্শিয়াং-এর পরিস্থিতি কতটা নিরাপদ? উঠেছে প্রশ্নও। উত্তরবঙ্গের পাহাড়ি এলাকায় লাগামহীন অবৈধ নির্মাণ কী বাড়াচ্ছে বিপদ? রিয়েল এস্টেট ডেভালপারদের বিরুদ্ধে প্রায়ই পাহাড়ে অনুমোদিত নির্মাণ উচ্চতা সীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গ মিউনিসিপ্যাল অ্যাক্ট অনুসারে, উত্তরবঙ্গের পাহাড়ে অ-স্থাবর সম্পত্তি নির্মাণ ১১.৫ মিটারের বেশি হওয়া উচিত নয়। কিছু কিছু সরকারি ভবনের ক্ষেত্রে তাতে সামান্য ছাড় দেওয়া হয়েছে, যেখানে উচ্চতা ১৩ মিটার পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে।

Advertisment

অভিযোগ এই নিষেধাজ্ঞা শুধু কাগজে কলমে। সম্প্রতি, শুধুমাত্র দার্জিলিং শহরের দার্জিলিং পুরসভা ১৩২টি নির্মাণকে অবৈধ নির্মাণ চিহ্নিত করা হয়েছে, প্রায় প্রতি ক্ষেত্রেই ১১.৫ মিটার উচ্চতার সীমা লঙ্ঘন করা হয়েছে।

পরিস্থিতি কতটা জটিল? দার্জিলিং-কালিম্পং-কার্শিয়াং-য়ের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জোশীমঠের মত ভুমিধসের কবলে পড়লে কতটা তৈরি প্রশাসন, শুরু হয়েছে এসবের চুলচেরা বিশ্লেষণ? পরিবেশবিদ ও ভূতাত্ত্বিক সুজিব কর বলেন, ‘পাহাড়ে মাটির গঠন অত্যন্ত আলগা এবং ভূমিকম্প বা বৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এই ধরণের প্রাকৃতিক বিপর্যয় পাহাড়ের মাটির গঠনকে আরও আলগা করে তোলে'।

তিনি আরও বলেন, 'পাহাড়ে রিয়েল এস্টেট উন্নয়নের জন্য মাটির উপর ন্যূনতম বোঝা বা চাপ বড় ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। এটা দেখতে হবে ভবনগুলির উচ্চতা ন্যূনতম হওয়া উচিত। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে রিয়েল এস্টেট ডেভালপার-প্রশাসন-রাজনীতিবিদদের যোগসাজশের কারণে এই উচ্চতার সীমা প্রায়শই লঙ্ঘন করা হয়। এটা মর্মান্তিক পরিণতির দিকে শৈল শহরকে ঠেলে দিতে পারে'। সঙ্কটের কারণ হিসাবে কাঠের তৈরি বাড়ি থেকে কংক্রিটের তৈরি নির্মাণকেও ইঙ্গিত করেছেন তিনি।

তাঁর কথায়, 'কাঠের নির্মাণ পাহাড়ের জন্য আদর্শ, কারণ এই ধরনের নির্মাণের মাটির ভার কংক্রিটের কাঠামোর তুলনায় অনেক কম। কিন্তু শপিং মল ও হোটেলের মতো রিয়েল এস্টেটের বড় আকারের, এই সব কংক্রিটের নির্মাণ মাটির ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। যা বিপদের দিকে বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে ঠেলে দিচ্ছে'।

সুজিব বাবুর বলেন, 'প্রশাসনের এদিকে বাড়তি নজর দেওয়া দরকার। এ ছাড়া পাহাড়ে পর্যটন সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যাতে সুষ্ঠুভাবে চলে তা নিশ্চিত করতে হবে। কালিম্পং, কার্শিয়াং এবং দার্জিলিং অঞ্চল সম্পর্কে জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জিএসআই) এর একটি সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে যে প্রায় ১৭ শতাংশ এলাকা তীব্র ভূমিধসের ঝুঁকিতে রয়েছে, যেখানে ৪০ শতাংশ এলাকায় মাঝারি ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে'। 

'শুধুমাত্র ৪৩ শতাংশ এলাকাকে হালকা ভূমিধস প্রবণ এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেসব এলাকা ভারী ভূমিধসের ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেই সকল অংশেই কংক্রিটের নির্মাণের একটা বড় অংশ রয়েছে। দার্জিলিং-কালিম্পং-কার্শিয়াংয়ে যদি জোশীমঠের মত একই রমকের ভুমিধসের ঘটনা ঘটে তবে ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ এখনকার থেকে যে কয়েকগুণে বাড়বে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না'।

প্রসঙ্গত, বছরের পর বছর ধরে এই সমস্ত জায়গায় পর্যটন সংক্রান্ত কার্যক্রম বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর ফলে রিয়েল এস্টেটের নির্মাণ এবং ভারী যানবাহন চলাচল বৃদ্ধি পেয়েছে। এই অঞ্চলে টেকটোনিক প্লেট চলাচলের কারণে এবং বর্ষাকালে অতিবৃষ্টির কারণে মাটির দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে মৃদু থেকে ভারী ভূমিধস হয়। প্রাকৃতিক ঘটনা মানুষের হাতে নেই। তবে আমরা সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে প্রাকৃতিক ঘটনা থেকে সৃষ্ট ক্ষতি রোধ করতে পারি। অবশ্যই অবৈধ নির্মাণ এবং বিপুল সংখ্যক ভারী যানবাহনের চলাচল পাহাড়ে ভুমিধসের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তোলে।

অবৈধ নির্মাণ ছাড়াও তিস্তা নদীর ওপর বাঁধ ও সেবক-রংপো রেল প্রকল্পের নির্মাণকাজেও মাটির চাপ বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন এলাকার স্থানীয় লোকজন। তবে স্থানীয়দের একাংশের তোলা এই যুক্তি কেউ মানছে না। সমগ্র পূর্ব হিমালয় অঞ্চলের মাটি দুর্বল। জোশীমঠের মতই দার্জিলিং কালিম্পং- কার্শিয়াং বেল্ট সম্পর্কেও একই রকম সতর্কবার্তা প্রযোজ্য। পাহাড়ে যে অর্থনৈতিক উন্নয়নও পর্যটনের প্রসারের বিপক্ষে আমরা কেউ নই। তবে তা প্রকৃতির ক্ষতি না করে করা উচিত।

darjeeling Joshimath
Advertisment